Folk Art Flowers, Frida Kalho
Folk Art Flowers, Frida Kalho

ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা, অতিিথ ব্লগার*

“গল্প.. গ ল প…গোলাপের একটি গন্ধ আছে”

মুখপত্রের হুট আলাপে ভেসে আসা যুবকের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম “এটা কী কোন সম্ভাবণা?” ইদানিং সম্ভাবণার দিকে লোলুপ তাকিয়ে থাকি। বিনীত সম্ভাবণা, দুর্বার সম্ভাবণা, দূর্বল সম্ভাবণা, হটকারিতার সম্ভাবণা, আগ্রাসী সম্ভাবণা…নানান সম্ভাবণা। আমার বন্ধু সহকর্মীর সম্ভাবণা দেখলে এখন অস্থির লাগে। কেবল নিজের জন্য সম্ভাবণার এক একটা রেশ আমার ধরে রাখতে ভাল লাগে। আপাত এর কোন সমাধান নাই। আমি আবার পড়লাম “গল্প …গোলাপের একটি গন্ধ আছে…”


ব্যতিব্যস্ত হয়ে আমি আমাদের কক্ষে যেতে চাইছিলাম। কক্ষটা ধারের। কিন্তু মনে হয় না। জানালাগুলো শীতের কারণে ভেতর থেকে বন্ধ। একটা চৌকি, একটা টেবিল আর একটা নীল দেয়াল হ্যাঙগার। আমি আসবো বলে তার কেনা বাসি গোলাপের গন্ধে সমস্ত ঘরটা ভরে আছে। হুট করে আমার সাথে কক্ষে ফেরত আসা বন্ধুর বাচ্চাটা ঠেলে দরজা খুলতেই বাসি গোলাপের গন্ধ আমার নাকে এসে লাগে। শিশু জিজ্ঞেস করে, “এই ফুলগুলো কার?”


ফুলগুলো জমানো ছিল ছোট ছোট চায়ের গ্লাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আরো বছর আটেক আগে দুটাকায় চা খেতাম যে গ্লাসগুলোতে সেগুলোয়। পানি ফেলে দিয়ে ফুলগুলো রেখে দিতে প্রতিদিন একটু একটু করে শুকিয়ে গেছে পাতা পাপড়ির দল। তারপর হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই ঝরে যাওয়া ফুলের পাপড়িগুলো আমি গ্লাসের ভেতর জমিয়ে রাখলাম। জমানো যে কোন কিছুতে ম্যালা ধুলা পড়ে। প্লুটো গ্রহের জমে থাকা ধূলোর মতো ধূলো। আমি গ্লাসের দিকে তাকাই। কি সুন্দর মেরুন হয়ে আছে ভেতরের পাপড়িগুলো। কেমন কুঁকড়ে শুকিয়ে মেরুন হয়ে আছে! আমার হঠাৎ বমি আসতে থাকে। নাভীর ভেতর থেকে গা গুলিয়ে বমি আসতে থাকে। আমি বসে বসে গ্লাস দেখতে দেখতে কয়দিন আগে পড়া এমিলি মার্টিনের একটি লেখা শুক্রাণূ আর ডিম্বাণূর রাজনীতির কথা গভীরভাবে মনে করবার চেষ্টা করতে থাকি। পুনরায় মায়াময় দৃষ্টি নিয়ে আমি গ্লাসটা দেখি…এবার গল্পের কথা মনে হয়। নীনার কথা মনে হয়…আমার বাসায় থাকতে আসা নীনার কথা মনে হয়। ওর বয়স বাইশ, বাচ্চাটার বয়স ৬। পাটক্ষেতে ওর সংসার ভেঙ্গে গেছে। পাটক্ষেতে ওকে কে জানি টেনে নিয়ে গিয়েছিল। নীনার ভেতর ঠেলে আসা শুক্রাণূও কী ফুল হয়ে আছে? বা আমার ভেতরের ফুলগুলো কী শুকিয়ে গোলাপ থেকে কীট হয়ে কিলবিল করছে ? এমিলি…এমিলিইইইই…আমি দ্রুত গ্লাসের মেরুন থেকে চোখ সরিয়ে শুক্রাণূর রাজনীতি দেখি। রাজনীতি অবশ্য ফুলগুলোকে গোলাপ বানায়নি…কীট?…হয়তো! মনের ভেতরে জটিল করে ভাববার চেষ্টা মুখ ভর্তি করে ছিটকে আসা বমি থামাতে পারলো না। আমার বয়স্ক মা উৎকণ্ঠিত স্বরে ধমকে উঠেন “এই ফুলগুলো কার?”


“সমস্যাটা প্লাসেনটায়”
ড. ফৌজিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে কথা বলেন। আমাকে স্নেহও করেন। কিন্তু আজকে তিনি বেশ স্থির হয়ে কথাটা বলছেন। অনেকগুলো পরীক্ষা করিয়েছেন এই ভদ্রমহিলা। তার নামে অপবাদ আছে, কমিশন খান অনেক। তারপরেও এই মহিলাকে আমার পছন্দ। প্রেসক্রিপশনের উপরে উনি মিজ লিখেন।
“আমি কবে আসবো?”
“তাড়াতাড়ি চলে আসো…দেরী করতে নেই আসলে এই বিষয়ে….”
“ফুল কি একেক বার একেকটা হয়?”
“প্লাসেন্টায় সবকিছু যায়, খাবার দাবার যায়”
“আপনি আমাকে ফুলটা দিবেন?”
“আমার মনে হচ্ছে তুমি অস্থির হয়ে আছো…শান্ত হও”

গ্রীনরোডে রিকশার জ্যাম পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছি সিএনজির অপেক্ষায়। আইপিলের বড়িটায় প্রজাপতির ছাপ থাকে। ওখানে ফুলের ছাপ নাই কেন! “ফুলওয়ালা বড়িগুলো কার?”


হুট আলাপের কক্ষপথে চিরকুট বার্তা আসে…
”য্যানো স্প্যানিশ আঙুরের জঙ্গলে তুমি ছুঁড়ে দিলে চ্যালেঞ্জ, খোঁপা বেঁধে,
খোঁপায় ফুল আটকে থাকে, কাঁটা!”

সামনের কনকনে শীতে চিলমারি যাবার কাঙ্খা সম্ভবত ফুলের চাইতে প্রবল! ফুলেল বড়ির সম্ভাবণায় আমি ঝুকে আসি। ড. ফৌজিয়া মাঝারি বোতলে অবশেষে আমাকে লালাভ ফুল দিয়েছে। সেটার দিকে তাকিয়ে মেরুন গোলাপের অতীত অ তিথির ধুলো উড়াল দেয় চোখে। এই প্রথম হুট আলাপের কক্ষপথে প্রশ্ন যায়…
“গোলাপ দিয়েছো কাউকে?”

২০ জুলাই ২০১২

Leave a comment

Trending