আজ একটা জেণ্ডু সমাবেশ ছিল। আগে বলে নিউ হোয়াট ইজ জেণ্ডু এণ্ড কেন এটাকে জেণ্ডু বলে ডাকার খায়েশ হইলো। যেসকল এনজিও ক্রিয়ার থেকে বিশেষণ পছন্দ করে বেশি এবং বুঝে বা না-বুঝে জেণ্ডার ডেভলপমেন্ট-জেণ্ডার ইকুইটি-ইকুয়ালিটি শব্দগুলা উচ্চারণ করে এবং যাদের মধ্যে মোটেই জেণ্ডার সংবেদনশীলতা নাই, তারা জেণ্ডু। এটা কেবল তিরস্কার করা অর্থে বলছি, তা না। একেবারেই এই ধারাকে খারিজ করার অর্খে বলতে চাইছি। এবার গল্পটা বলি..
জেণ্ডু সমাবেশ। যোগ দিয়েছিল ২ হাজার মতো নারী-শিশু। ২বছরের শিশু থেকে ১০বছরের শিশু সবাই উপস্থিত। মঞ্চে বক্তারা একের পর এক সবক দিচ্ছেন- ‘শোনেন, মাইর খাইয়া পইড়া থাকলে চলবে না, মেয়েদের জাগরণ হইসে, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধিনেত্রী সবাই নারী, এই দেখেন আমিও নারী। সেহেতু সাহস যোগান, মাইর খাইলে চলবে না, প্রতিবাদ করেন। পাশের বাড়ির মানুষটারে সাথে নিয়া প্রতিবাদ করেন।’
দর্শকদের মাঝে বসে এই বক্তৃতা শুনছি যখন তখনই পাশের মহিলা বলে উঠলো- স্বামী স্বামিই, আপনেরটাও স্বামী, আমারটাও, আপনারে মারে আমারেও মারে, আপনে বড়লোক তাই জানা যায় না। বলেই পাশের জনের সাথে হেসে কুটিকুটি। জানতে চাইলাম
ক্যান আসছেন? উত্তর- আপা কইসে
আপা কি কইসে? উত্তর- আপনে কে?
আমি আপার আপা। তা কইলেন না আপা কি কইসে? উত্তর- এখানে আসতে, গাড়ি কইরা আসছি নারানগঞ্জ থাইকা, ঘুরা হইলো
স্বামী নিষেধ করে নাই? উত্তর- নাতো, এরা টাকা দিবে সেইটাতো স্বামীকেই দিব
টাকা পাইবেন, বাদাম খান, ঘুরে বেড়ান বইলা আমি আরেকটু সামনে আগাই। সভাস্থলভর্তি শিশু। না না, আমরা শিশুদের ব্যবহার করি না, মায়েরা আসলে শিশুরাতো আসবেই। সত্য কথা। কিন্তু এই শিশুদের কথা বলা, ঘুরাফেরায় সভাস্থলে বিশৃঙ্ক্ষলা দেখে আয়োজক নেত্রীদের মুখ বেজাই ভার। একজনতো চারপাশ দেখে নিয়ে মুখ খিচিয়ে বলল – কইসিলাম না বাচ্চা না আনতে। আপনাদের সুপারভাইজার কই? বাচ্চা নিয়া আসতে নিষেধ করি, তাও আপনারা শোনেন না।
সভার একটু পিছনের দিকে গিয়ে দেখি চারপাশে বাস। এসবে করেই তাদের আনা হয়েছে। বাস থেকে নামার পরই সবার হাতে ফেস্টুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভূস্বামীর কন্ঠে বলে দিচ্ছেন- শোনেন যার যার জায়গায় বসে ধরে থাকবেন। নামাবেন না। টিভিতে ভালো দেখাবে না। একটু পর ক্লান্ত হয়ে হাত থেকে ফেস্টুন নামতে নামতে পায়ের কাছে চলে যায়। কেউ একজন গায়েবি ধমক দেয়, আবার তুলে ধরে।
এসবে কী লেখা? ফতোয়া বন্ধ কর, নারী নির্যাতন চলবে না, শিশুখাদ্যে ভেজাল বন্ধ কর, করতে হবে। এইসব। যে ফতোয়া বন্ধ করার ফেস্টুন ধরে আছেন তাকে বললাম, ফতোয়া কী? বলল- বলতে পারি না। জানতে চাইলাম, আসছেন কই থেকে? উত্তর- টঙ্গী। এসময় তার ফোন এল। সে ফোনে বলছে- আমাদের কোথায় নিসে জানো? ওই যে শহীদ মিনার আছে না? সেখানে নিয়া আসছে।
সব ক্লান্ত অবস্থায় প্ল্যাকার্ড নামিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ছবিতো তুলবে সাংবাদিকরা। এবার আয়োজকরা নানা জায়গায় ছড়িয়ে বলল প্ল্যাকার্ড হাতে উচু করে ধরেন। তারা ধরল। ছবি তোলা হলো। ক্যামেরা সরে যেতেই আবার প্ল্যাকার্ড নিচে।
(ফটো সেশনের জন্য প্ল্যাকার্ড উপরে তুলে ধরার ছবি সংযুক্ত)
এসময় মাইকে ঘোষণা- আপনারা যার কথা শুনতে আসছেন, তিনি এখন বক্তৃতা করবেন। আপনারা মনোযোগ দিয়া শোনেন। আর যারা বাসে গিয়া বসছেন, তারা নেমে আসেন। চোখ ফিরিয়ে দেখি। বাসে বাসে নারী শিশুরা উঠে বসে আছেন। তাদের কেউই এসব বক্তৃতা শুনতে চাইছেন না। ঘোষণার পর তারা নেমেও এলেন না। কিন্তু তারপর যখন তাদের দলনেত্রী গিয়ে বকা দিল, তখন মুখ বেজার করে নেমে এলেন। এসে একটু দুরে দাড়িয়ে বাদাম-চানাচুর খেলেন। এখানে কিসের সভা হচ্ছে জানতে চাইলে তাদের একজন বললেন- মহিলাদের বাসা বাড়িতে নির্যাতন বন্ধ করার। আমি বললাম- এভাবে বন্ধ হবে? বলল- জামাই মারলেও হাজার হোক জামাই। সোহাগও হেই ব্যাটাই করে। খাইতেও হেই দেয়। আইজ কয়টা টাকা দিসে। এই কথা শুনেেএই কয়টা টাকাতে কি আমার চলবে নাকি?
Categories: বাংলাদেশে নারীবাদ
অস্থির র আপু… এইটা শুধু এই জেন্ডু সমাবেশে না। এইটা সব সমাবেশেই ঘটে।