DSCF1506

ভাস্কর আবেদীন
বিজ্ঞাপনি সংস্থায় কর্মরত

(বছর তিনেক আগে একজনের গবেষণাকর্মের সহযোগী হিসাবে পার্বত্য এলাকার শান্তি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পাহাড়ে চড়েছিলাম। সেইখানে পার্বত্য এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে যুক্ত থাকা বেশ কয়েকজন ঋদ্ধ এবং সংগ্রামী মানুষের সাথে কথা হয়েছিলো। কথা ছিলো তাদের এই বক্তব্যগুলো সেই গবেষণাকর্মে অন্তর্ভূক্ত হবে। কিন্তু বেশকিছু অনাকাঙ্খিত কারণে ঐ আলোচনাগুলো অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে আমাদের ব্যক্তিগত শহুরে স্ফিয়ারে। আজকে মাটিরাঙ্গায় বাঙালি সেটলাররা তাদের আগ্রাসনের ধারাবাহিকতায় আবারো পার্বত্য জনপদে আগুণ দিলে আমার মনে পড়ে যায় সুধাসিন্ধু খীসা নামের পাহাড়ি জনপদের কিংবদন্তীসম মানুষটার কথা। তার সরলতার কথা। তার সংগ্রামের কথা। তার পরাজয় আর প্রতারিত হওয়ার কথা। প্রথাগত সাক্ষাতকার কাঠামোয় লেখা না বলে অনেকে হয়তো স্বস্তি পাবে না পড়ার সময়, কিচ্ছু করার নেই…আমি স্বল্পজ্ঞানী, প্রাতিষ্ঠানিকতা শিখি নাই কোনোকালে। ইন্টারভিউটা মে ২০১০’এ নেয়া)

¬
ভূমি সংস্কার আইন:

প্লেইন ল্যান্ডের কালচারের সাথে জুম্ম কালচারের যে পার্থক্য রয়েছে তার মূল কারণ ভৌগলিক আর ঐতিহাসিক চর্চা। আর এই কারনে বাংলাদেশের সংবিধানেও সবসময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু ভিন্ন আইনগত বিবেচনা ছিলো। সারা বাংলাদেশে ল্যান্ড রিফর্ম আইনে যখন ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ত্ব আইনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তখনো পার্বত্য এলাকায় ১৯০০ অ্যাক্ট ক্রিয়াশীল ছিলো। কিন্তু পার্বত্য এলাকায় চূক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ থাকার পরেও সেনাবাহিনী তার নিজের সরকার পদ্ধতি পরিচালনা করে। নতুন একটা ল্যান্ড কমিশন গঠন করা হয়েছে চূক্তির পর। সেইটার সদস্য করা হয়েছে স্থানীয় হিল ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে, একটা সরকারী প্রশাসনিক বডিও দাঁড় করানো হয়েছে। কিন্তু তারা ১৯৫০’এর প্রজাস্বত্ত্ব আইনেই পাহাড়ের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছেন। জমি লিপিবদ্ধ করার জন্য প্রত্যেক পার্বত্য জেলায় একটা করে অফিস স্থাপন করা হয়েছে। জেলা সদরের এই অফিসে গতো ১০ বছরে মাত্র দেড় হাজার পাহাড়ি তাদের আবেদন জমা দিয়েছে, অন্য দিকে বাঙালিদের আবেদন জমা পড়েছে লাখে লাখে। (এ পর্যায়ে তিনি একটি তালিকা বের করেন) এই তালিকা আমরা বের করেছি চোরাপথে। চারটা থানা, আলী কদম, লামা, মহালছড়ি আর নাইক্ষ্যংছড়িতে সেনাবাহিনী আর পলিটিক্যাল পার্টির আত্মীয়-স্বজনের নামে ৬০% জমি রেজিস্টার করা হইছে।

চূক্তিতে উল্লেখ ছিলো কোনো বাঙালি পাহাড়ে জমি কিনতে চাইলে হিল ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের অনুমোদন নেয়া লাগবে। আমরা তো এইটুক চাইতে পারি! কিন্তু হিল ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের নির্বাচনের যেই প্রতিশ্রুতি ছিলো, সেই নির্বাচন না দিয়ে প্রত্যেক সরকার খালি মনোনয়ন দিয়ে গেছে। আর এই মনোনয়ন পাওয়া পাহাড়ি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার ক্ষমতা পর্যন্ত রাখেন না। এখনকার রিজিয়নাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ির এমপি যতীন্দ্রলাল ত্রিপুরা বলেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গিয়া দাঁড়াইয়া থাকেন, প্রধানমন্ত্রী তার সাথে দেখা করার সময় পান না। আর জেলা পর্যায়ের যারা নেতা তাদের টাকা দিয়ে অনেক কিছুই করা হয় তার অনেক উদাহরণ আমাদের কাছে আছে।

আসলে এই পার্বত্য এলাকার শাসন চালায় সেনাবাহিনী। তারা ১৯৭৯ সালে থেকে এইখানে পলিটিক্যাল মাইগ্র্যান্টদের এইখানে নিয়া আসছে। এই পলিটিক্যাল মাইগ্র্যান্টরা শরণার্থীদের জমি জমা দখল করছে, তারা এই জমি এখন কবলিয়ৎ নেয়। সেনাবাহিনী তাদের বন্দোবস্ত দেয়। তারা একরাতের মধ্যে নতুন টিনের ঘর তুইলা ফেলে। এই টিন তারা কোথায় পায়? চূক্তির বরখেলাপ করতেছে তারা প্রতিদিন, প্রতিদিন নতুন নতুন পলিটিক্যাল মাইগ্র্যান্টরা আসতেছে। ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ত্ব আইন দিয়া তাদের জমি কবলিয়ত দেয়া হয়। সেনাবাহিনীর অফিস থেকে ফোন যায় ল্যান্ড কমিশনে। এইচডিসির অনুমোদনও হয় জেনারেল টু ইন্টেলিজেন্সের আবেদনে।

স্বীকার করি আমাদের চূক্তিতে অনেক কিছু লেখা হয় নাই। আমরা দূর্বল একটা চূক্তিই করছিলাম। আমরা বিশ্বাস করছিলাম বাঙালি সরকারকে। আমরা আশা করছিলাম শরনার্থীরা ফিরা আসলে তারা পূণর্বাসিত হবে। তাদের জমি ফেরত দেয়া হবে। এক কাপ্তাই বাঁধের কারনে হাজারে হাজার পাহাড়ি ভারত চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। ৩৬০ বর্গমাইল এলাকা ডুবে গেছে। এই এলাকার ক্ষতিপূরণ তারা পায় নাই। নামেমাত্র কিছু দেয়া হয়েছে। লাখে লাখে পাহাড়ি তাদের জমি হারাইয়া অন্যান্য পার্বত্য এলাকায় বাড়ি করেছে। এই যে সন্তু লারমা, তাদের বাড়ি ছিলো রাঙ্গামাটিতে। কাপ্তাই বাঁধের জন্য তারাও ঘরহারা হয়ে খাগড়াছড়িতে আসছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা জমি পায় না। জমি পায় সেটেলাররা। আমরা মনে করি এই চূক্তির একশো ভাগও যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলেও পরিস্থিতি এখনকার চাইতে ভালো হবে। এর জন্য যেই মোরালিটির প্রয়োজন সেইটার অভাব দেখাইছে সব সরকার।
আমরা বলছি আগে জরীপ করতে হবে তারপর ল্যান্ড কমিশনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে। কিন্তু সেনাবাহিনী বলছে আগে ল্যান্ড কমিশন গঠিত হবে তারপর তারা জরীপ করবে। সেনাবাহিনী ঠিক করে দিবে কাদের জমি দেয়া হবে আর কাদের দেয়া হবে না।

পাহাড়ি বাঙালি বিরোধ:

চূক্তির আগে পরিস্থিতি বরং ভালো ছিলো।
সেই ১৯৮৫ সালে থেকে আমরা রাষ্ট্রের সাথে কথা বলতেছি। ১৯৯৩ সাল থেকে যুদ্ধবিরতিতে গেছি, তারমানে আমরা সবসময়েই আন্তরিক ছিলাম এই সমস্যার সমাধানে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা ভাবছিলাম শেখ সাহেবের মেয়ে হিসাবে শেখ হাসিনা আমাদের প্রতি আন্তরিক থাকবেন। তিনি আমাদের কথা বলছেন। সেসময় যেই কমিটি করা হইছিলো তার প্রধান ছিলেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ আর একজন রাষ্ট্রদূত যিনি পরে আওয়ামি লীগের নেতাও হয়েছিলেন সেই আতাউর রহমান কায়সার। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ’ও শেখ পরিবারের লোক আমরা তার উপর বিশ্বাস রাখছিলাম। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক তাই পাহাড়ের মানুষ হিসাবেও নিজেদের এর সংবিধানের বাইরের কেউ ভাবি না। পাহাড়েও মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকারই চেয়েছি আমরা। শুধু সংস্কৃতিগত ভিন্নতার কারনে পাহাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পূণর্বাসন চেয়েছি আমরা। ১৯৭৯ সাল থেকে সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে যেই অন্যায় অবিচার শুরু হয়েছে পাহাড়ি মানুষের সাথে তার জন্য লাখে লাখে পাহাড়ি তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে তার একটা নিরসন আমরা চাইতেই পারি। যেই বাঙালিরা ভাগ্যান্বেষণে এই এলাকায় আসছে, যারা এইখানে নিজেদের প্রফেশন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের সাথেতো কোনো বিরোধ নেই আমাদের! আমরা বাঙালিদের সাথে কোনো সংঘর্ষে যেতে চাই নাই। আমাদের একটাই দাবী ছিলো অবৈধ ভাবে যাদের পাহাড়ে বসানো হয়েছে, যাদের এখনো সরকারী রেশন কার্ডে বিভিন্ন বরাদ্দ দেয়া হয়, এই পলিটিক্যাল মাইগ্র্যান্টদের সরিয়ে নিতে হবে। পাহাড়িদের জমি পাহাড়িদের ফিরিয়ে দিতে হবে। চূক্তিতে লেখা না থাকলেও বিধিমালা অনুযায়ী আমরা প্রবিধান জারী করতে পারি। সেই প্রবিধানে এই পলিটিক্যাল মাইগ্র্যান্টদের পূণর্বাসন করা হোক। তারা পাহাড়িদের জমি ছেড়ে দেক। (দূরে পাহাড়ের চূড়ার দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে) ঐ পাহাড়ের উপর দুইতলা/তিনতলা বাড়ি করে দিয়ে বাঙালিদের ছেড়ে দেয়া হোক। আমরা সেই পরিকল্পণাকে স্বাগতঃ জানাবো।

কিন্তু একজন পলিটিক্যাল মাইগ্র্যান্ট রেশন কার্ডে মাসে চাল পায় ৮৪ কেজি। এক পরিবারেই তারা তিনজনের নামে এই রেশন কার্ড করে। সেনাবাহিনী উন্নয়ণ বোর্ডের নামে যেই কর্মকান্ড করে, রাস্তাঘাট বানায় তাতেও এদের কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট। তাদের আর কি করা লাগে! তারা আমার বাড়িতে ঢিল মারতে থাকে সন্ধ্যা হইলেই। তারা চুরি কইরা আমার বাড়ির গাছ থেকেই সমস্ত ফলমূল নিয়ে যায়। কিছু রাখতে পারি না। পাহাড়িরা সৎ হয়। আমাদের এইখানে একজন কন্ট্রাক্টর আসছিলো রংপূর থেইকা। তার একপাটি জুতা সে ভুলে একটা পথে ফেলে রেখে গেছিলো। ১৫ দিন পর সে আবার আসছে ঠিক যেই জায়গায় সে জুতা রেখে গেছিলো সেইখানেই জুতা পড়ে থাকতে দেখে সে তো অবাক। পাহাড়িদের চুরি করার অভ্যাস কখনোই ছিলো না।

আমাদের সাথে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সাথে এমনকি শেখ হাসিনার সাথে কথা হইছিলো। তারা আমাদের বললেন, সব কথা চূক্তিতে লিখতে হয় না। ঐ রেশন এমনিতেই বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করছিলাম। এখনো সেই রেশন দেয়া হয়। প্রতিদিনই নতুন নতুন সেটেলার আসতেছে। তারা সেনাবাহিনীর মদদে এই এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজন নিয়া আসে। একজন রাঙ্গামাটি একজন খাগড়াছড়ি আরেকজন বান্দরবান থাকে। আবার তাদের কুড়িগ্রামেও আরেক ভাই থাকে। দিঘীনালা একটা থানা সদর থেকে কুড়িগ্রাম বগুড়ার সরাসরি বাস সার্ভিস কেনো হয় সেটা প্রশাসন দেখে না!?

এক এক কার্ডে ৮৪ কেজি চাল দেয় তাদের জন্য সমবায় কর্মকর্তা, উন্নয়ন কর্মকর্তা, পূণর্বাসন কর্মকর্তা কতো নিয়োগ আছে। সেনাবাহিনী তদারক করার ভাতা পায়। এইভাবে পার্বত্য এলাকার জন্য বরাদ্দ হওয়া টাকা ভাগাভাগি চলে। আর এই সুবিধা নিতেই সেনাবাহিনী তার ইন্টেলিজেন্স দিয়া বিরোধ চাঙ্গা রাখে। বাঙালিদের দিয়া আক্রমণ চালায়, যেমন তারা করছে অতীতে লোগাংয়ে, নানিয়ারচরে ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঘাইরহাট আর খাগড়াছড়িতে। আর্মি ইন্টেলিজেন্স সেটেলারদের দিয়ে আমার বাড়িতেও ঢিল ছোড়ায়। তারা আমাদের দিকে লেলাইয়া দেয় বাঙালি সেটলারদের। বাঙালিদের তারা বাড়তি ক্ষমতা আর লোভ দেখাইয়া এইসব করতে রাজী করায়। পুরো বিষয়টাই আর্মি ইন্টেলিজেন্সের তৈরী করা।

চূক্তির দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবতা:

আমরা মনে করেছিলাম চূক্তির মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে পাহাড়ে। ব্রিটেনের মতোন একটা বড় দেশ যদি অলিখিত সংবিধানে চলতে পারে, তাহলে আমরা কেনো বিশ্বাস রেখে একটা দেশের নাগরিক হিসাবে চলতে পারবো না। আমরা সবসময়েই বলতে চাই চূক্তি হলো একটা বিধিমালা তৈরীর পদক্ষেপ, যার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত একটা কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ি প্রবিধান তৈরী করবে। আর এর ধারাবাহিকতায়ই পাহাড়ে আইনের শাসন জারী হবে।
কিন্তু পার্বত্য এলাকায় সরকার পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর নির্দেশনামতো। আমরা চূক্তি করেছিলাম একটা সিভিল সরকারের সাথে। সেনাশাসনের কোনো বৈধতা নাই গণতন্ত্রে। চূক্তির সময়ে আমরা অনেক দাবীর কথা জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা সময় স্বল্পতার কথা বলেছেন, রাজনৈতিক কৌশলের কথা বলেছেন। সন্তু লারমা সাহেব সেসময় শান্তির কথা বলে অনেক দাবী না মানা সত্ত্বেও চূক্তি করেছেন। চূক্তি অনেক দূর্বল বলে মেনে নিতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই, আমরা ভুল করেছি, বাঙালিদের আমরা বিশ্বাস করে ঠকেছি, এতে বাঙালিরাই নীচে নেমে গেছে। কিন্তু যে চূক্তি হয়েছে সেটাও যদি সরকার বাস্তবায়ন করতো তাহলেও পার্বত্য এলাকায় এখনকার মতোন অনিশ্চিত অবস্থা তৈরী হতো না।

নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনী:

আমরা কখনো সেনাবাহিনীকে পার্বত্য এলাকা থেকে চলে যাবার দাবী করি নাই। আমরা বলেছি সেনাবাহিনীকে তিন জেলায় ছয়টি ক্যান্টনমেন্ট করে দেয়া হোক। তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিধান অনুযায়ী পার্বত্য এলাকাতেও মন্ত্রী পরিষদ শাসিত থাকুক। আলাদা করে সেনাশাসনে আমরা থাকতে চাই না।

সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকায় তাদের ক্ষমতার দৌড়াত্ম নিয়ে চলে। তারা দূর্নীতিপ্রবণ। কিন্তু এসব দূর্নীতির জন্য তাদের কোনো জবাবদিহিতা নাই। তারা হিল ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল মনোনয়নে সিদ্ধান্ত দেয়। তারা হিল ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলে বরাদ্দ টাকার ভাগ নেয়। পাহাড়ে সিভিল প্রশাসনের উপরে থাকে মিলিটারী প্রশাসন। পরিচিত এলাকার দোহাই দিয়ে এখানে সেনাবাহিনীর নিয়ম ভেঙে ৬/৭ বছর করে জেনারেল টু ইন্টেলিজেন্স পদে এক এক জনকে দিয়ে রাখে। তারাই সব পরিকল্পণা করে। এইখানে বিরোধ জারী থাকে তাদের চক্রান্তেই।

২৩ ফেব্রুয়ারি’র ঘটনাটাও আর্মি ইন্টেলিজেন্সের ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনা দিল্লী যাওয়ার আগে তারা সীমান্ত এলাকায় যতো নাগা-উলফা-মিজোরামের বিদ্রোহীদের তারা আইএসআইয়ের সাহায্য নিয়া শেল্টার দেয় সবাইরে বের করে দিলো। শেখ হাসিনা দিল্লী থেকে ফিরবার পর আবার তারা সবাইকে নিয়ে আসলো। কিন্তু সেনাবাহিনীতো পাহাড়ি জনগণকে বিশ্বাস করে না। তাই তাদের সরানোর জন্য বাঙালিদের সাথে দাঙ্গা লাগায় দিলো। বাঙালিরা পাহাড়িদের সব ঘর-বাড়ি-দোকানপাট পুড়িয়ে দিলো। ঐখানে বাঙালিদের দখল কায়েম করা হোলো সেনাবাহিনীর সহয়তায়। এই কন্সপিরেসী করার জন্যই তারা এখান থেকে পাহাড়িদের সরিয়ে দিতে চায়। নিজেদের পছন্দের বাঙালিদের ঢাল হিসেবে রাখতে চায়।

উপজাতি বিতর্ক:

আমি আতাউর রহমান কায়সারকে বলেছিলাম মডার্ন সোশিয়োলোজিতে উপজাতি বলে কোনো শব্দ নাই। কিন্তু তারা পাকিস্তানীদের তৈরী করা শব্দটাই রাখার কথা বললেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপম সেন আসলেন তিনিও উপজাতির পক্ষে সাফাই গাইলেন। সন্তুবাবু কি আলোচনা করলেন তারপর মেনে নিলেন। পাহাড়ি এলাকার মানুষ কেনো বাঙালিদের উপজাতি হবে!? তাদের ধর্ম-বর্ণ-সংস্কৃতি সব আলাদা…আমি প্রস্তাব করেছিলাম জুম্ম জাতি বলার জন্য। এমএন লারমা বলতেন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা। কিন্তু সংবিধানে উপজাতি লেখা থাকলে আমাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া যাবে না! উপজাতিরা কি আইনের শাসন পেতে পারে না! আসলে প্রয়োজন সদিচ্ছা। পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।

ইউপিডিএফ প্রসঙ্গ:

সেনাবাহিনী সরকারকে প্রস্তাব করেছে ইউপিডিএফের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। সন্তু বাবু এই প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু আমরা মনে করি ইউপিডিএফ পাহাড়ে রাজনীতি করবে কি না সেটা নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনী কিংবা সন্তু লারমা দিতে পারে না। কেবল জনগণই সিদ্ধান্ত দিতে পারে ইউপিডিএফ থাকবে কি থাকবে না। এ ধরনের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী বরং আবারো প্রমাণ করলো তারাই পাহাড়ে বিকল্প প্রশাসন চালায়, নাহলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানানোর স্পর্ধা তারা কোথায় পায়!?

সার্বিক মূল্যায়ণ:

চূক্তির দূর্বলতা আমরা স্বীকার করি, কিন্তু আমরা মনে করি বর্তমান চূক্তির শতভাগ বাস্তবায়ন করলেও পাহাড়ী জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে পাবে। আমরা আস্থার সেই রাজনীতিতেই ফিরে যেতে চেয়েছি সবসময়। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, আবারো অস্ত্র হাতে তুলে নিতে আমরা বাধ্য হবো। মনে রাখবেন আমাদের অস্ত্র ভারত থেকে আসবে না। আন্তর্জাতিক পরিসীমার জন্যই আমরা আরো অনেক ভিন্ন রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা পাবো। পাহাড়ী মানুষের অধিকার আদায় করতে আমরা রাষ্ট্রের অভ্যন্তর থেকেও অনেক গোষ্ঠীর সহযোগিতা নিতে বাধ্য হবো। তারা নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সাহায্য করবে।

ধন্যবাদ।

Leave a comment

Trending