আনহা এফ. খান, অতিথি ব্লগার
৭/৮/২০১৩
আমি যে এতদিন অন্ধকারে ছিলাম সেইটা আবিষ্কার করলাম গত বিষ্যুদবার। শাহবাগ থেকে বাসে উঠছি দুপুর দেড়টায়। আড়াইটার সময় আবিষ্কার করলাম আমি তখনো কারওয়ান বাজার পার হইতে সমর্থ হই নাই। জ্যাম। তদুপরি কন্ট্রাক্টর সাফ জানায়া দিল, ঈদের আগে আর ছাত্র ভাড়া নেওয়া হবে না। ঈদ আসতে বাকী প্রায় ১০দিন, এর মধ্যে ছাত্র ভাড়া নিবে না? হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খোলা জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাইরে তাকালাম-
এমন সময় আবিষ্কার করলাম চারপাশে যত বিলবোর্ড দেখা যায় সবগুলাতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘজীবী হউন এর ছবি। প্রথমে ভাবলাম চোখে কি পিপার স্প্রে ঢুকছে নাকি, ঈদের সিজন, বিলবোর্ড থাকার কথা বাটা, এপেক্স, আড়ং, ক্যাটস আই, মুনসুন রেইনের দখলে! কাহিনী কি? চোখ কচলে বুঝতে পারলাম, কাহিনী হইল গত ৪ বছরে ঘটে যাওয়া ‘উন্নয়ন সমগ্র’ প্রচার করা হচ্ছে। একে একে পড়তে লাগলাম আর মনে মনে নিজেকে গাইল পাড়লাম, আমি শালা কোন জগতে আছি! দেশের প্রকৃত কোন খোঁজই জানিনা! ভাবলাম, আজই বাসায় গিয়া তওবা পইড়া আওয়ামীলীগার হইয়া যামু।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিদেশী মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সাফল্যের পাশাপাশি আবিষ্কার করলাম ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’। এই পয়েন্টে আইসা কবি না হইয়াইও আমি নীরব হইয়া গেলাম। বাকীগুলা যেভাবে বিশ্বাস কইরা নাগরিক হিসেবে শান্তি অনুভব করছিলাম তা মিইয়ে গেল। সেইখানে মহাখালি-ময়মনসিংহ চার লেন, বিমানবন্দর-যাত্রাবাড়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, মেট্রোরেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতির কথা লিখা আছে অর্জিত সাফল্য তালিকায়। সবই অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কোনটা নির্মানাধীন, কোনটার নির্মাণকার্য এখনো শুরু হয়নি- হবে।
স্বাধীনতার ৪ দশক পেরিয়েও আমাদের উন্নয়নের সংগা আটকে আছে ইট-বালু-কাঠের চিপায় চিপায়। ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার থিকা শুরু কইরা প্রধানমন্ত্রীর সফলতা পর্যন্ত হিসাব হয় ব্রীজ-কালভার্ট-রাস্তা বানানীর উপ্রে। রাস্তাঘাট-ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণের সাথে ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নিশ্চিতভাবে সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু সামগ্রিকভাবে একে কি যোগাযোগ ‘ব্যবস্থার’ উন্নয়ন বলা যায়? গতকাল ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ, অর্থ্যাৎ মাত্র ৫০কিমি(গাবতলী থেকে) এর মত যেতে সময় লেগেছে আড়াই ঘন্টার বেশি, ৬০ টাকার বাস ভাড়া শবে কদরের আগেই ১০০ তে উঠে গেছে। ঢাকার ভেতরে যত কম দূরত্বই হোক, ১ ঘন্টার আগে কোন মামলা নিস্পত্তি হয় না, বাসভাড়ার কোন বাপ-মা নাই। একই রূটের ১০টা গাড়ির ভাড়া ৮ রকম, কেউ মনিটরিং করেনা- অথবা মনিটরিং সঠিকভাবে হচ্ছে বলেই এমনটা হচ্ছে।
এই শহরে যাতায়াত যে কি দুর্বিষহ তা প্রধানমন্ত্রীর বোঝার বাইরে। তিনি ভিভিআইপি হিসেবে যখন শহরের অভ্যন্তরে মুভ করেন তখন আইনশৃংখলা রক্ষার বাহিনীরা ২টা জিনিস প্রুভ করে-
১. রাস্তায় যত গাড়ি দেখতে পাচ্ছেন এদের কোনটার ইঞ্জিন নাই, এরা নড়েও না, চড়েও
২. রাজধানীর রাস্তায় কোন পথচারী হাঁটে না
আমাদের জীবনমান আমরা জানি। তথ্যগত বিষয়াদি তুলে ধরলে গ্রহণযোগ্য হলে গ্রহণ করব। কিন্তু আমার জীবনমান কেমন সেইটা আমি বিলবোর্ড দেইখা শিখতে এক্কেবারেই নারাজ!
Photo source: http://jotil.priyo.com/?q=node%2F1724
Categories: বাংলাদেশে নারীবাদ
Leave a Reply