গৃহশ্রমিক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ১৯ বছর। বিস্মৃতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে সৌমিত জয়দ্বীপের ফেসবুক প্রতিক্রিয়া , “আহ ইয়াসমিন, আহ ইয়াসমিন!”
সৌমিত জয়দ্বীপ
[যারা (বিশেষত, আজকের নতুন যুগের নারীবাদীরা) ইয়াসমিন-ট্র্যাজেডি জানেন না, তারা পড়ার পর কাঁদবেন না হাসবেন না লাইক দিবেন না কমেন্ট করবেন না শেয়ার দেবেন না কী করবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার]
———————————————————
ভোর, ২৪ আগস্ট ১৯৯৫। দশ মাইল মোড়, দিনাজপুর।
ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁওগামী নৈশ কোচে উঠলেন চতুর্দশী কর্মজীবী কিশোরী ইয়াসমিন। নামলেন দশ মাইলের একটি চায়ের দোকানের সামনে। নামলেন ভোরে। তাই সকালের অপেক্ষা। তারপর যাবেন দিনাজপুর সদরের রামনগরে। নিজ আবাসে। মায়ের কাছে। মায়ের সঙ্গে দেখা হবে ৩ বছর পর!
কিছুক্ষণ পরই টহল পুলিশের গাড়ি আসে। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে তাকে ওঠানো হয় গাড়িতে। জোরপূর্বক, অনিচ্ছায়। এরপর…
দশ মাইল সংলগ্ন সাধনা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করা হয়… ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়… হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয় রাস্তার পাশে… রাষ্ট্র ও তার ক্ষমতাবান পুলিশ বাহিনী তাকে বানায় পতিতা…
দিনের আলো ফুটে। ঘটনা জানাজানি হয়। আগুনের মতো জ্বলে ওঠে অগ্নিগর্ভা দিনাজপুর। সংহতি জানায় বাংলাদেশ।
দিনাজপুরে কয়েকদিনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। ঘেরাও হল কোতোয়ালি থানা। পুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৩টি পুলিশ ফাঁড়ি, ৪টি পুলিশ পিকআপ। প্রতিবাদী জনতার মিছিলে গুলি চালাল পুলিশ। সাতজন নিহত! সাতজন শহীদ…
এক বোন ইয়াসমিনের জন্য প্রাণ দিলেন সাত ভাই… ওঁরা যেন ‘সাত ভাই চম্পা’!
আমরা ভুলে গেছি!
সঞ্জীব চৌধুরী গেয়েছেন — ”আহ ইয়াসমিন… আহ ইয়াসমিন… আহ ইয়াসমিন…”
ঐ গানের ভূমিকায় বলেছেন — “ঘরে ফিরতে চাইলেই কি ঘরে ফেরা যায়? সবাই কি ঘরে ফিরতে পারে? ইয়াসমিন, দিনাজপুরের ইয়াসমিন, কিশোরী ইয়াসমিন ঘরে ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু কী অন্ধকার সে পথ, কী নিষ্ঠুর সে পথ। ইয়াসমিনের আর কোন দিন বাড়ি ফেরা হয় না। ঢাকা টু দিনাজপুর — অন্ধকারে লোপাট হয়ে যায়। আর মুখোশ পরা কসাইগুলো হাসে, পুলিশের ব্যাটন হাতে কসাইগুলো হাসে।
আর তাকে ধর্ষণ করা হয়, তাকে ধর্ষণ করা হয়… তাকে মেরে ফেলা হয় । ইয়াসমিন! আহ, আহ, আহ !”
মাহমুদুজ্জামান বাবু গেয়েছেন — “গোলামিতে কেটে যায় সারা রাত সারা দিন / ভোর রাতে মারা যায় ধর্ষিতা ইয়াসমিন”
আমরা সব ভুলে গেছি!
নাকি গানগুলোও শুধু শোনার জন্যই শোনা হয় আমাদের!
আমরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ সব ভুলে গেছি… আমরা গোলাম হয়ে গেছি… আমরা বদলে গেছি খুব… খুউব…
জনতার আন্দোলনের চাপে ফাঁসি হয়েছিল বর্বর পুলিশগুলোর। কিন্তু ১৯ বছর পরেও, ২৪ আগস্ট কি শুধুই ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে’র গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
——
( রাত ১২.৩০, ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ঢাকা)
[*এই সংযুক্তি দিচ্ছি তখন, যখন এই পোস্টের বয়স ২৫ মিনিট, লাইক ৩৫টি এবং কমেন্ট-শেয়ার ২টি করে। সংযুক্তি দিচ্ছি এজন্য যে, এক ছোট বোন ইনবক্সে এই ‘অজানা’ ঘটনা নিয়ে লেখবার জন্য ধন্যবাদ দিল। অবাক হলাম, এত বড় ঘটনা ও জানত না! একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী জানে না! ওর কী দোষ? কয়জনইবা জানে ইয়াসমিনের কথা! জানলে বা জানালে তো আপনি ‘পলিটিক্যাল’ হয়ে গেলেন! জানলে বা জানালে যদি আপনি পলিটিক্যাল বা রাজনীতি সচেতন হয়ে যান, তাহলে সেই পলিটিক্সের প্রতি স্যালুট।
বোন রে, ফেসবুকের দুনিয়ায় কতজন কতকিছুতে ব্যস্ত! এই অধমের মতো গর্দভ অ্যাক্টিভিস্টরা কতজনকেই বা জানাবে ইয়াসমিন-ট্র্যাজিডি!]
Categories: আন্দোলন বার্তা
thanks a lot