পুরুষালি কামতৃপ্তিকর বিধ্বংসী ঘৃণার কালে জীবনযাপন

Image@NewAge

Image@NewAge

স্বাধীন সেন

আজ ১৯ মার্চ ২০১৫। ঠিক এই লেখাটি লিখছি যখন আমার ফেইসবুকের নোটিফিকেশন ফিডগুলো তখন একই সাথে তীক্ষœ আর বোকা-বোকা বিশ্লেষণে আর যৌনহয়রানিমূলক মন্তব্যে সয়লাব হয়ে পড়ছে। বিক্ষিপ্ত বিদ্রুপাত্মক এসব বয়ান এবং মন্তব্যে ক্রোধ, উদ্বেগ, বিতৃষ্ণা, উদ্ভট আশা এবং অবিশ্বাসের অভিব্যক্তি উপচে পড়ছে। এ সবই বাংলাদেশ-ভারত বিশ্বকাপ ম্যাচ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অপর-বাস্তব/ভার্চুয়াল জগতে ঘটা এই বিস্ফোরণ বাংলাদেশ ও ভারত দুই পক্ষ থেকে একইসাথে ঘটে চলেছে। সমগ্র প্রপঞ্চটিকে ম্যাচ চলাকালীন বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়া আম্পায়ারদের দেয়া কিছু ভ্রান্ত (কথিত ‘পক্ষপাতদুষ্ট’) সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে তীব্র ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, ঘৃণা এবং এর কদর্য বিপুলবিস্তারী অভিব্যক্তির অনেকগুলোকে খেলাধুলার – ‘ভদ্রলোকের খেলা’ (লক্ষ্য করুন, ভদ্রমহিলার খেলা কিন্তু নয়) হিসাবে বিশেষ করে ক্রিকেটের – স্টিরিওটাইপকৃত/গঁৎবাঁধা নীতিকথা ও স্পিরিটের উল্লেখ করে জায়েজ করা যায়। কিছু তীক্ষœ পর্যবেক্ষণে এটা উল্লিখিত হয়েছে যে, সাম্প্রতিককালে ক্রিকেট খেলায় কর্পোরেট অর্থের প্রবাহ এবং আইসিসি’র সদস্য দেশসমূহের মাঝে ধনী দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থান দুর্নীতির অভিযোগ এবং কূটকৌশল চালনার ক্ষেত্রে একইসাথে ভারত এবং আইসিসি’র অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ক্রিকেট ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কে লক্ষ লক্ষ ডলার লগ্নির উছিলায় এবং প্রচুর অর্থ উপার্জনকারী কয়েকটি সদস্য দেশের ক্রিকেট বোর্ড, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং মিডিয়ার অশুভ ঐক্য এই সন্দেহ এবং অভিযোগকে অমূলক প্রমাণ করে না। সাদা চোখে বা আপাতদৃষ্টিতে, ভারতীয় জাতীয় দল, রাষ্ট্র-হিসাবে-ভারত এবং আইসিসি’র (বিদ্রুপার্থে বলা হচ্ছে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বা ইন্ডিয়ান চিটিং কাউন্সিল) প্রতি বাংলাদেশী সাইবার যোদ্ধাদের সঘন জাতীয়তাবাদী দাবিকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হতেই পারে।

ক্রিকেটের রাজনৈতিক অর্থনীতির সঙ্গে বোঝাপড়া করার কিছু অপর্যাপ্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এই ধরনের ঘৃণা অপরাপর উগ্র বিদ্বেষের মতনই প্রাসঙ্গিক নিয়ামক এবং প্রক্রিয়াসমূহকে আড়াল করেছে। এখানে ক্ষমতা এবং পুঁজির বাস্তবতা অটুটই থাকত যদি আম্পায়াররা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নাও দিতেন, কিংবা যদি বাংলাদেশ ম্যাচটিতে জিতেও যেত । উপচে পড়া এই ঘৃণার নিচে যা হারিয়ে গেছে তা হল দক্ষিণ এশিয়ার শত কোটির বেশি মানুষের উপরে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ খেলার হেজিমনি সম্পর্কে তীক্ষè বিশ্লেষণ। স্পষ্টতই এখানে জাতি-রাষ্ট্রে ও পাবলিক পরিসরে বৈষম্য-নিপীড়ন-অন্যায়-অবিচারের মত অনেক গুরুতর ইস্যু উপেক্ষা করা হয়েছে, এমনকি একটি প্রজন্মের কুৎসিত জাতীয়তাবাদী অনুভূতিগুলোর পিছনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে জনগণের মনস্তত্বের পরিকল্পিত অপব্যবহার করে অপরাপর বিষয়গুলোকে ভুলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে (উদাহরণস্বরূপ ভাবুন স্টার স্পোর্টস চ্যানেলে প্রচারিত ‘মওকা, মওকা’ বিজ্ঞাপনের কথা যেগুলোতে একের পর এক ভারতীয় জাতীয়তাবাদী দম্ভকে প্রদর্শন ও বিপণন করা হয়েছে)। ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি ক্রিকেট বাণিজ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মাত্র। দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রিকেট এর ঔপনিবেশিক আবির্ভাবের সময় থেকেই উচ্চবর্গীয়/এলিটিস্ট, উচ্চবর্ণীয়/আপার কাস্ট এবং পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যকে বজায় রাখার কারক ও কারণে পরিণত হয়েছিল। একইসঙ্গে, দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্র ও সমাজে বিরাজমান নানবিধ বৈষম্য ও নিপীড়ন আড়াল করে আঞ্চলিক ও জাতীয়তাবাদী পুরুষালী সংহতি উৎপাদনেও ক্রিকেটের ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। বাংলাদেশে ভারত কিংবা পাকিস্থানের সমর্থন বা বিরুদ্ধাচরণ কেন ও কোন ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে, ক্রিকেটিয় পরিসরে ভারত বা পাকিস্থানের ক্রিকেট দলের সমর্থন বা বিদ্বেষ কী-ভাবে সংশ্লেষিত হয় তার আলোচনা এই ঘৃণার প্লাবনে তলিয়ে যায়। বাংলাদেশে হিন্দু বা মুসলমান আত্ম-পরিচয় নির্মাণের রাজনীতিতে ক্রিকেট কেন ও কী-ভাবে সংশ্লেষিত ও সঞ্চালিত হয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল তা নিয়ে কোনো আলোচনা ও তর্কের পথ এই ঘৃণা রুদ্ধ করে দেয়।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িকতার বিভিন্ন প্রবণতা ও নিপীড়নের সঙ্গে ক্রিকেটিয় সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত হয়ে যায় কেন সেটা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা এই ধরনের ঘৃণা অসম্ভব করে তোলে। কিন্তু এই প্রবল বিদ্বেষ ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জাতীয় চৈতন্যের গঠন ও নির্মাণের লেপ্টালেপ্টি করে থাকা বোঝাপড়ায় ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে, আধুনিক ক্রিকেটের ধারণা তৈরিতে কর্পোরেট, মিডিয়া আর পুঁজির ভুমিকা বোধগম্য করতে এবং সাম্রাজ্যবাদী ও হেজিমোনিক জাতি-রাষ্ট্র হিসাবে এ-অঞ্চলে ভারতের ভূমিকার মর্মোদঘাটন করতে এই ঘৃণা ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্বেষের এই বিস্ফার শীঘ্রই প্রতিপক্ষতায় রূপান্তরিত হয়ে কপোরেট পুঁজি এবং ক্রিকেট জাতীয়তাবাদের ভিক্টিম দুই পক্ষের মধ্যে শিশ্নকেন্দ্রীক অভিব্যক্তির বিনিময় ও প্রতি-বিনিময়ে পর্যবসিত হয়েছে।

যে খেলা টাকা আয় করার যন্ত্রে আর অন্ধ চরমপন্থি ভক্ত উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে, সেই খেলায় নিরপেক্ষতার ধারণাটি সমস্যাজনক। ক্রিকেট বিগত এক দশক বা তার কিছু বেশি সময় ধরে – বিশেষকরে টি-২০ ক্রিকেটের আবির্ভাবের পর থেকে – সম্মোহক দৃশ্যাবলি ও জিম্মিকারক বিজ্ঞাপন প্রদর্শনীতে, চিয়ার গার্লদের প্রদর্শন করার মাধ্যমে পুরুষালী যৌনচাহিদাকে উস্কে দেয়ার পরিসরে আর বিচিত্র বাগাড়ম্বরকারী ধারাভাষ্যকারদের সার্কাসে রূপান্তরিত হয়েছে। যে খেলাটি একসময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপনিবেশ ও বর্ণবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদীদের সংহতি তৈরি করেছিল সেই খেলাটির এই রূপান্তর আমলে না নেয়ায় এই বিদ্বেষ শুধুমাত্র গোঁড়ামি ও কামতৃপ্তকারী উদযাপনকে উস্কে দেয় এবং বিবিধ কুশীলব/কারক, শক্তি ও ক্ষমতার আন্তঃক্রীড়াকে সফলভাবে আড়াল করে।

আমার এই ক্ষুদ্র লেখায় ক্রিকেট প্রধান আলোচ্য বিষয় নয়। বরং বলা যায় এটি আমার আসল উদ্বেগের ও চিন্তিত হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনায় আসার উপলক্ষ মাত্র। অপর-বাস্তব/ভার্চুয়াল জগতে রেপ্রিজেন্টেড ঘৃণার এই নয়া ধরন নিয়ে কিছু কথা আমি বলতে চাই। কিছু প্রবণতাকে বিবেচনায় না নিলে ঘৃণাজাত অভিব্যক্তির প্রগাঢ়ত্ব, মন্তব্যগুলোর শিশ্নকেন্দ্রীক প্রকাশ্য যৌনজ বিষয়বস্তুর প্রদর্শন-ইচ্ছুক উৎসব-উদযাপনকারী লক্ষণাসমূহ অনুধাবন করা দুরূহ হবে। শুরুতেই স্বৈরাচারী জাতীয়তাবাদ ও গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের গঠনকে বিবেচনায় নিয়ে অপর-বাস্তব/ভার্চুয়াল পরিসরের মধ্যে অথবা মাধ্যমে জারিকৃত এই বিদ্বেষের প্রগাঢ়করণ ও সমসাময়িক ক্রমবৃদ্ধিকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। সাইবার যুদ্ধে সরাসরি শারীরিক মোকবেলা আবশ্যকীয় নয়, ঠিক যেমন ঘটে যুদ্ধবিদ্যার সাম্প্রতিক প্রযুক্তি ও কৌশলে। এমনকি বেনামে/ছদ্মনামে/অন্যনামেও এখানে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা যায়।

গত বেশ ক’বছরে এক সাংশ্রয়িক/সুশৃঙ্খল তরিকায় ঘৃণা উৎপাদন ও সঞ্চালন করে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় অপর-বাস্তব/ভার্চুয়াল পরিসরে প্রতিপক্ষকে বিনাশ করার এক বিধ্বংসী আকাক্সক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে বিরুদ্ধ ও প্রতি-বিরুদ্ধ পক্ষগুলোর সীমানা নির্ধারণ ও সংজ্ঞায়ন করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য অর্জনের ক্ষেত্রে আশাবাদের বিপরীতে বিদ্বেষের এই নতুন রূপটি বিভেদ ও বিয়োজন উৎপাদন করছে। একীভূত আর সমতাভিত্তিক বৈশ্বিক সম্পর্কের আশা সবসময়ই সন্দেহজনক ছিল। যোগাযোগে ও প্রতিরোধে বৈপ্লবিক অবদান থাকার পাশাপাশি অন্তর্জাল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, এবং ব্লগ-দুনিয়া এমন এক পরিসর হয়ে উঠেছে যেখানে অপরত্ব/অন্যতা নির্মানের সঙ্গে যোগাযোগের সাবলীলতা ওতপ্রোতভাবে বিজড়িত হয়ে পড়েছে। অমোচনীয় দূরত্ব ও শূন্যতা ভার্চুয়াল পরিসরের সাথে আমাদের দৈনন্দিন আটপৌরে যাপনের নির্যাসে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাল জগতে বিচরণকারী প্রযুক্তির আত্মশ্লাঘায় ভোগা আমাদের মত ভোক্তাদের পরিণতি হয়েছে টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট কেবল আবির্ভাবের প্রেক্ষিতে গীত মহীনের ঘোড়াগুলির জনপ্রিয় গানের মত – ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে ড্রইংরূমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী/ ভেবে দেখেছ কি তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে, তারও দূরে/তুমি আর আমি যাই ক্রমে দূরে/সরে সরে।’ আমরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে বিচ্ছিন্নতর হয়েছি। গানের ভিতরে লুকানো শহুরে বাঙালি মধ্যবিত্তের যে রোমান্টিক বাসনা বহু আগে হারানো সম্প্রীতি এবং ঐক্যকে ফিরে পেতে চায় সেই বাসনাকে আমি এখানে গ্রহণ করছি না। বরং আমি চিহ্নিত করতে চাই যে, এই ঘৃণা সংহতি ও বিভেদের রাজনীতির শর্তে উৎপাদিত। এখানে বাস্তব ও অপর-বাস্তব/ভার্চুয়ালের মধ্যকার সীমানা বিলীন হয়ে গেছে, এখানে উভয় পরিসরই আত্ম নির্মাণ, পুনর্গঠন ও রক্ষণের, আর অপরকে অপমান ও বিনাশ করার দুর্দমনীয় বাসনা উৎপাদনে এক অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। জাতিগত, রাষ্ট্রীয়, ভাষাগত, লৈঙ্গিক, জাতীয়তাবাদী আর ধর্মীয় অপর আর আত্ম-পরিচয় নির্মানের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশিষ্ট প্রক্রিয়াগুলো উদ্ভূত এই নিশ্চিতির এক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশের পাবলিক পরিসরে ঘৃণার এই নতুন গঠন মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ঘৃণার অপর ভালোবাসা নিয়ে লেখা অনেক সহজ ও বহুচর্চিত। অথচ ঘৃণার মোকাবেলা করে, ঘৃণার সঙ্গে যাপন করে ঘৃণা নিয়ে লিখতে চেষ্টা করা যথেষ্ট কঠিন ও বেদনাদায়ক কাজ। এই ছোট লেখায় আমি ঘৃণার নতুন অভিজ্ঞতা, অভিব্যক্তি ও গঠন সম্পর্কে আলাপ করতে চাই। আমি ঠাহর করি, ঘৃণা কোনো দুর্ঘটনাপ্রসূত প্রভাব, মানসিক অবস্থা কিংবা অভিব্যক্তি না; বিদ্বেষ অনৈতিহাসিক ও স্বাভাবিকতা থেকে বিচ্যূতিও না। বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী বীনা দাস যেমন সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেছেন, তেমনই আমার দাবি হল স্বাভাবিকতা ও আটপৌরে দৈনন্দিনতা থেকে বিচ্যুতি হিসাবে ঘৃণা বা বিদ্বেষকে তত্ত্বায়ন করার বা উপলব্ধি করার চেষ্টা করা একদমই চলবে না।১ বরং আটপৌরে দৈনন্দিন যাপনের জালের বুনটের মধ্যে ঘৃণা গ্রন্থিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। আমাদের আমরা হয়ে ওঠার পরিণতির উপরে ঘৃণার প্রভাব সরাসরি। আমাদের সাবজেক্টিভিটির গঠন অনেকভাবেই ঘৃণার সঙ্গে বিজড়িত হয়ে আছে। ডারউইনীয়দের মত করে ঘৃণার শিকড় আত্মরক্ষা ও প্রতিশোধের মধ্যে প্রোথিত বলে ভাবলে চলবে না। ঘৃণা/বিদ্বেষের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এডওয়ার্ড এল. গ্লাসিয়ের বলেন, ‘ঘৃণা হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক বাজার থেকে বের হওয়া যেখানে রাজনৈতিক উদ্যোক্তাগণ দৈনন্দিন নাগরিকদের সঙ্গে মেলামেশা করেন। ঘৃণার সরবরাহকারী ও ভোক্তা উভয়েই কৌশলগতভাবে আচরণ করেন। রাজনীতিবিদগণ ঘৃণা সরবরাহ করেন যদি তা তাদের নীতির সম্পূরক হয়ে ওঠে। যদি গরিবরা বিষমভাবে কালো হন তাহলে যে রাজনীতিবিদগণ জনকল্যাণের বিরোধী তারা বর্ণবাদী ঘৃণা প্রচারকে উপকারী হিসাবে বিবেচনা করেন। ভোক্তারা ঘৃণা চান যদি তা কিছু মনস্তাত্ত্বিক প্রয়োজন পূরণ করে (যেমন নিজেদের অতীত ব্যর্থতা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে) কিংবা যদি বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী বার্তাগুলো কার্যকর বলে মনে হতে থাকে।’২ কার্যকরী হলেও সাম্প্রতিক অসহিষ্ণুতা ও বিদ্বেষের বিস্ফারকে তাদের স্ব স্ব ঐতিহাসিকতা সমেত নিরিখ করার জন্য গ্লায়েসিরের এই বিশ্লেষণ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ক্ষমতা সম্পর্কের অসমতাকে এ-বিশ্লেষণ আমলে নেয় না। চাহিদা-যোগান ভিত্তিক এ-বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা ঘৃণার বিবিধ মাত্রা ও প্রকারের সঙ্গেও বোঝাপড়ায় লিপ্ত হতে পারি না। সেকারণেই, ঘৃণার সকল প্রকার ও অভিব্যক্তিকে একই কাঠামোর মধ্যে রেখেও বোঝার চেষ্টা করা উচিৎ না।

একজন ব্যক্তি কিংবা মতাদর্শিক, লিঙ্গীয়, যৌন আচরণ প্রবণতা, জাতীয় বা জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয়ের দিক থেকে অংশীদারী একদল মানুষের প্রতি ঘৃণাকে এবং ঘৃণা সৃষ্টি করাকে একটি সাধারণীকৃত পাটাতন থেকে বিশ্লেষণ করা যাবে না। এই লেখার ছোট পরিসরে বিস্ফোরিত ও প্রগাঢ় হয়ে ওঠা অন্যের প্রতি জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা নিয়ে আলাপ করায় আমি আগ্রহী।

বিজ্ঞানী ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নৃশংস হত্যাকা-ের প্রতিক্রিয়ার মানস চৌধুরির লেখা৩ থেকে সাহায্য নিয়ে আমি কিছু সুনির্দিষ্ট অনুশীলনের কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন কুশীলব/কারক কর্তৃক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষতা যেভাবে আবিষ্কৃত ও পুনরাবিষ্কৃত হয় তার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। হয়ত, নিতান্তই অপর-বাস্তব পরিসরের সত্তাতাত্ত্বিক অস্তিত্ত্বের কারণে কোনো একজন ব্যক্তি বা কোনো সমষ্টিকে অপর বা প্রতিপক্ষ হিসাবে খাড়া করে দেয়া আর অনন্ত বিদ্বেষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা সহজ ও প্রচলিত চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যহতভাবে মেরুকরণ উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিমালার ইতিহাসে ঘৃণার এই নির্দিষ্ট প্রপঞ্চ সম্পূর্ণ নতুন এমন দাবি আমি করছি না। মানস যেভাবে চিহ্নিত করেছেন, কিছু কিছু মেরুকরণের (যেমন : আস্তিক/নাস্তিক) শাহবাগ-পরবর্তী প্রপঞ্চ হিসাবে পাবলিক পরিসরে নতুনভাবে উদ্ভাস ঘটেছে। মানসের মতন আমিও মনে করি, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারণাবলি ও অনুশীলনসমীহের মধ্যেই রয়েছে এই প্রপঞ্চগুলোর গঠন এবং বিভিন্ন কারক/কুশীলবের সমষ্টির মাধ্যমে সৃষ্ট ঘৃণার সহিংস সঞ্চালনের ইতিহাস। এখনও পর্যন্ত সেই ইতিহাস যে আমাদের কাছে খুব স্বচ্ছ্ব ও বোধগম্য তা আমি বলব না। আগ্রহোদ্দীপকভাবে, তৎপর বিভিন্ন গোষ্ঠাগুলোর মধ্যকার সংহতি খোঁজা হয় এবং জাহির করা হয় দূরাচারী জাতীয়তাবাদী ঘৃণার অংশীদারিত্বমূলক জমিনে। হয়ত, এই মেরুকরণ আটপৌরে দৈনন্দিনতার চাদরের নিচের আরামের অন্তরালে থাকে। হয়ত, পাবলিক পরিসরে তৎপর কুশীলবদের সক্রিয়তা আর শর্তের প্রয়োজনে বিনাশী ঘৃণা হিসাবে এই মেরুকরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তবে নিশ্চিতভাবেই সাধারণের যাপনের কল্যাণে এমন ধরনের প্রতিপক্ষতার ঘৃণার কোনো ভূমিকা নাই।

সাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী এবং জাতিগত ঘৃণা প্রায়শই একে অন্যের মধ্যে লীন হয়ে যায়। অপর-বাস্তব পরিসরে গঠিত ঘৃণা বাস্তবের ঘৃণা ও সহিংসতাকে পুনর্গঠন করে। অপর-বাস্তবের ক্ষমতা তাই অসীম আর তা বাস্তবে বিলীন। ফেসবুকে সঞ্চালিত জাল-মন্তব্য অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে রামুর মত বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গায়। উৎপাদিত ঘৃণাকে তুলনামূলকভাবে শনাক্ত করা সহজ। কিন্তু সেই ঘৃণাকে অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়ে যা ঐতিহাসিকভাবেই চৈতন্যের মধ্যে প্রোথিত হয়ে গেছে। এপ্রসঙ্গে আমি সেই সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও সহিংসতার দিকে ইঙ্গিত করতে পারি যাকে অংশক রাজনৈতিক ও উৎপাদিত হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক ঘৃণার গঠনের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। এই ঘৃণার উদ্ভব-পরম্পরা প্রাক-আধুনিক/প্রাক-ঔপনিবেশিক সময়েও খুঁজে বের করা যায়। ইন্ডিয়ান হিস্টোরি কংগ্রেসে গত বছরের অধিবেশনে প্রদত্ত সভাপ্রধানের বক্তৃতায় প্রখ্যাত ইতিহাস-চিন্তক ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত স্পষ্ট করে দেখান যে, বর্তমান ভারত জাতি-রাষ্ট্রে (আমি যুক্ত করছি – বাংলাদেশসহ অন্যান্য জাতি-রাষ্ট্রেও) ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের’ প্রত্যয়টি কতটা আধুনিক।৪ প্রাচীন বিভিন্ন লিখিত উৎসের উল্লেখ করে তিনি দেখিয়েছেন যে, এক সম্প্রদায়/জাতির মানুষ অন্য সম্প্রদায়/জাতির সদস্যকে ঘৃণা করত, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষকে ঘৃণা করত, এক ধর্ম/মতের অনুসারী অন্যকে ঘৃণা করত, ‘ভিতরের’ মানুষ ‘বাইরের’ মানুষকে ঘৃণা করত। । ঐক্য খোঁজার প্রচেষ্টা তখনও যে ছিল না তা নয়। কিন্তু আমি মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আধুনিক ঐক্য, সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতার আধুনিক ও উদারনৈতিক ধারণাগুলোর আলোকায়ন-পরবর্তী ও ঔপনিবেশিক ইতিহাস রয়েছে। জাতি ও রাষ্ট্রের সংহতির আকাক্সক্ষা থেকে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ও চিন্তকই যেমন করেছেন তেমন করে প্রাক-ঔপনিবেশিক সময়ে সাম্প্রদায়িত, আঞ্চলিক এবং অন্যান্য ধরনের ঘৃণাগুলোকে ঝেঁটিয়ে ফেলে দেয়া যায় না। ইতিহাসের মধ্যে এই গোপনকরণ ও আড়ালকরণের মাধ্যমে, তাঁরা এমন এক অতীত খুঁজতে চেয়েছেন যা খ-িত, এবং যা আধুনিক সংবেদন, বাসনা ও ঐতিহাসিকভাবে গঠিত স্বভাব দ্বারা তাড়িত। এর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব¡ অস্বীকার করে কিংবা হাজার বছর ধরে সৃষ্ট ঘৃণার জন্য উপনিবেশিক শাসকদের দায়ী করে আমরা ঘৃণার মোকাবেলা ও বোঝাপড়া করতে পারব না।

অসহিষ্ণু শিশ্নকেন্দ্রীক/ফ্যালোসেন্ট্রিক ও পর্নোগ্রাফিক (আমার সহযোদ্ধা আল মামুনের কাছ থেকে ধার করে এই প্রত্যয়দুটো ব্যবহার করছি) জাতীয়তাবাদী, সাম্প্রদায়িক, মতাদর্শিক ও জাতিগত বিদ্বেষের অভিব্যক্তি নিয়ে আমি বেশি উদ্বিগ্ন। এ-পরিস্থিতি এমন অনানুষ্ঠানিক হেত্বাভাস/ফ্যালাসি বা মিথ্যে সঙ্কটকে অনুমোদন করে যেটা হলো ‘তুমি হয় আমার পক্ষে, নয়ত বিপক্ষে’ (জর্জ বুশের বহুল সঞ্চালিত উক্তি – তুমি হয় আমাদের পক্ষে, নয়ত সন্ত্রাসীদের পক্ষে’- এ-বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত করে)। এই হেত্বাভাস/ফ্যালাসিই রূপান্তরিত হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক অসহনীয় ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতার সঞ্চালনের ভিত্তিপ্রদানকারী পাটাতনে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সহিষ্ণুতার উদারনৈতিক ধারণার নিজস্ব সীমানা রয়েছে। দীনা সিদ্দীকি দেখিয়েছেন, ‘বিদ্বেষ-বচন’ আর ’স্বাধীন মতামতের’ মধ্যকার সীমানা গভীরভাবেই রাজনৈতিক আর সবসময়ই অস্থিতিশীল’।৫ তবে মনে রাখতে হবে যে প্রাতিষ্ঠানিক হাতিয়ার ও শাসনকারী মতাদর্শের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধের জন্য ‘স্বাধীন মত/ মুক্ত চিন্তার’ ধারণা ও প্রবণতাগুলোর প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। এখনকার বিদ্বেষ-বচনরাশি আর সেগুলোতে একধরনের পর্নোগ্রাফিক প্রদর্শনের দৃশ্যমান ও সুপ্ত উদগ্র আকাক্সক্ষা আত্মপরিচয় ও আত্ম-সত্তার রাজনীতিকে পুনর্গঠন করেছে। দম-আটকানো ও সহিংস বিদ্বেষের বিস্ফারের এই শিশ্নকেন্দ্রীক/ফ্যালোসেন্ট্রিক, উগ্র এবং প্রদর্শনকামী প্রপঞ্চের সঙ্গে জাতীয়তাবাদ ও জাতিকেন্দ্রিকতাবাদের গঠন গ্রন্থিবদ্ধ হয়ে আছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অধ্যয়নের সাহায্যে দেখানো যেতে পারে যে, যে ঘৃণার কথা আমি বলছি তা প্রায়শই সেক্যুলার আর ধর্মীয়, উদারনৈতিক আর রক্ষণশীল, প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীলের মধ্যকার সীমারেখা অতিক্রম করে যায়। সহজ কথায়, প্রচলিত সকল বর্গই এই ঘৃণার তৎপর উৎপাদক ও ভোক্তা।

আরেকটি প্রসঙ্গ বিবেচনা করা জরুরি। পাবলিক পরিচয় থেকে ঘৃণা মুছে যাবে এমন দূরাশা আমি করিনা। এটা হওয়া অসম্ভব। যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের শিকার একজনের কাছে এমন অনুরোধ করা রাজনৈতিক ভ্রান্তি হবে যে তিনি নিপীড়ক বা ধর্ষককে যেন ঘৃণা না করেন। আমাদের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করছি তাদের পক্ষে বিস্মৃত হওয়া সম্ভব না। আমরা সেই রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের ঘৃণা করা থেকে বিরত থাকতে পারি না যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পৈশাচিক সহায়তা করার মত কদর্য অপরাধ করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হয়ে আসা বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিগুলোকে আমরা এই অনুরোধ করতে পারি না যে তাঁরা যেন নিপীড়নকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের সদস্যদের ঘৃণা না করেন। নিপীড়িতের নিপীড়নের স্মরণ সম্ভবত নিপীড়ককে ঘৃণা করার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। একথা সম্পূর্ণ পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে, সঞ্চারিত প্রতিটি ঘৃণার বিরুদ্ধে তৎপরতা জারি রাখা রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়। এমনকি বিদ্যমান প্রতিটি বিদ্বেষকে শনাক্ত করাও সম্ভব না। উদাহরণস্বরূপ, সংখ্যালঘুর ঘৃণার চেয়ে পাবলিক পরিসরে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠের ঘৃণাকে শনাক্ত করা সহজ।

সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ঘৃণার নৈর্বচনিক ও কৌশলগত প্রয়োগের কথা আমি বলছি না। বরং প্রতিটি ঘৃণার প্রপঞ্চকে ঐতিহাসিকভাবে জারি-থাকা অসম ক্ষমতা ও পুঁজির সম্পর্কের মধ্যে রেখে আমি সুচারুরূপে বোঝার পক্ষে। ঘৃণা সৃষ্টি ও আড়াল করে রাখার ঐতিহ্যের মধ্যে বিকশিত একধরনের সংবেদনা ও গঠিত-স্বভাব হিসাবে আমি ঘৃণাকে বুঝতে চাই। বিরাজমান ক্ষমতা সম্পর্ককে টিঁকিয়ে রাখার অংশ হিসাবে সমসাময়িক ব্যবহার ও প্রয়োগের জন্য বিবিধতাবিশিষ্ট ঐতিহ্যমালা থেকে কেবল ঘৃণাকে নির্বাচন করার পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে আমি যুঝতে চাই। অধিপতিশীল ক্ষমতা সম্পকের্র আরামকে বিগড়ে দেয়ার জন্য কার্যকর সক্রিয়তা ও তৎপরতা গঠিত হয়ে উঠতে পারে যেসব সম্ভাবনাময় ঘৃণার মাধ্যমে সেগুলো গোপন করার প্রক্রিয়া ও কাঠামোকে আমি প্রশ্ন করতে চাই। এই শিশ্নকেন্দ্রীক আর কামতৃপ্তিকর – সাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী, জাতিগত ও মতাদর্শিক – ঘৃণার অভিব্যক্তিগুলো দৈনন্দিন ঘৃণার এই যাপনের সঙ্গে আমার লিপ্ত হতে চাওয়া আর এই যাপনকে মোকাবেলা করতে চাওয়ার ইচ্ছাপূরণ করতে পারে না।

পাঠসূত্র :
১. Ash Zengin, On life and words : An Interview with Veena Das, Faminist approaches in Culture and Politics, Vol. 10, 2010.

২. Edward L. Glaeser, The Political Economy of Hatred,Working Paper 9171 [http://www.nber.org/papers/w9171]

৩. মানস চৌধুরী, অভিজিৎ হত্যা : প্রেম, ঘৃণা, বিষাদ আর আতঙ্কের উপাখ্যান। [http://shokalerkhobor24.com/?p=56968]

৪. Brajadulal Chattopadhyaya, Interrogating ‘Unity in Diversity: Voices from India’s Ancient Texts, General President’s address, Indian History Congress, 28-30 December, 2014

৫. Dina M. Siddiqui, To ban or not to ban, is that really the question? Feminist solidarity in neoliberal times. [http://www.thedailystar.net/op-ed/feminist-solidarity-neoliberal-times-70765]

[টিকা: লেখাটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল দি নিউ এজের ২০১৫ এর স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। বাংলা সংস্করণে পরিমার্জন ও পরিবর্ধন ঘটেছে। তরজমা, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন জাহিন জামাল। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মানস চৌধুরীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ তাঁর পরামর্শের জন্য]



Categories: বাংলাদেশে নারীবাদ

Tags: , , , , , ,

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: