
লোগাং গণহত্যার প্রতিবাদে ২৮শে এপ্রিল, ১৯৯২ পাহাড়ি গণ পরিষদ লোগাং অভিমুখে এক পদযাত্রার ঘোষণা দেন, সুত্র: রাডার, ১৯৯২
১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার লোগাং গুচ্ছগ্রামের তিনজন পাহাড়ী নারী মাঠে গরু চড়াতে গেলে পাশ্ববর্তী গুচ্ছগ্রামের কিছু সেটলার বাঙালী যুবক তাদের ধষণের চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার জন্য গরুর ঘাস কাটার কাস্তে দিয়ে আক্রমণকারীকে আঘাত করে, এর মধ্যে একজন যুবক পরে রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়। এই হত্যার জবাবে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপস্থিতি লোগাং গ্রামের পাহাড়ী ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করা না হলেও, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে হাজারের অধিক জুম্ম নারী-পুরুষ-শিশু হত্যার কথা বলা হয়েছে। এই ঘটনার আজ পর্যন্ত বিচারতো দূরের কথা, সরকার ঘটনার সত্যতাও শিকার করেনি, করেনা। ১০ এপ্রিল, ২০১৫ লোগাং হত্যাকাণ্ড, পাহাড়ে রক্ত নদী, রক্ত বন্যা হিসেবে পরিচত, এ ঘটনার ২৩ বছর পূরণ হলো । এ হত্যাকাণ্ডের সময় সমতলের রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথেযুক্ত নানা পেশার নাগরিকের সাথে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ খাগড়াছড়িতে ছিলেন। ঠৈাটকাটা ব্লগার শহিদুল ইসলাম সবুজ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের একটি বিস্মৃতির বিরুদ্ধাচারণমূলক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আলাপকালে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের হত্যাকাণ্ডের পর ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা বলেন। পার্বত্য জেলা ভিত্তিক একটি প্রকাশনা রাডারে সেই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এই প্রতিবেদনটিও এই সাক্ষাৎকারের সাথে সংযুক্ত করেছি। রাষ্ট্র আরোপিত বিস্মৃতির বিরূদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে।
ঠোটকাটা: ১৯৯২ সালে লোগং হত্যাকাণ্ডের সময় আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিলেন? আপনার অভিজ্ঞতায় পাহাড়ে নির্যাতনের ইতিহাসটি শুনতে চাই আমরা?
আনু মুহাম্মদ: ১৯৯২ সালে পাহাড়ি গন পরিষদ নামে একটা সংগঠন ছিল। পাহাড়ি গন পরিষদের নেতা কর্মীদের সাথে আমাদের পরিচয় ও যোগাযোগ ছিল। তাছাড়া পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ে বিভিন্ন কথাবার্তায়, আলাপ আলোচনায় যুক্ত ছিলাম, বিভিন্ন লেখা লেখিও করেছিলাম। সেই সূত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামী জুম্মা জনগোষ্ঠির সাথে একটা যোগাযোগ ছিল। ১৯৯২ সালে তারা আমাকেসহ বেশ কয়েকজনকে পার্বত্য চট্রগ্রামে আমন্ত্রণ জানান। এই আমন্ত্রনের উপলক্ষ ছিল বৈসাবি উৎসব। বিজু, বৈসু এবং সাংগ্রাই উৎসব। সেখানে তারা আমাদের একটি প্রতিনিধি দলকে মন্ত্রণ জানান। প্রতিনিধি দলে আমি, কথাশিল্পী আকতারুজ্জামান ইলিয়াস, আইনজীবি সারা হোসেনসহ আমরা বেশ কয়েক জন ছিলাম। ১০ এপ্রিল রওয়ানা হই আমরা । এপ্রিলের ১২/১৩ তারিখ থেকে বৈসাবি উৎসব শুরু হবে। আমরা রাঙামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ির এই সব উৎসবে যোগদান করব এবং বিভিন্ন মানুষজনের সাথে কথা বার্তা হবে, তারপর আমরা ফিরব, এই হচ্ছে পরিকল্পনা। ১০ তারিখে খাগড়াছড়ি পৌছানোর আগে, পথেই আমরা খবর পাই যে সেখানে একটা হত্যাকাণ্ড হয়েছে। খাগড়াছড়িতে পৌছানোর পরে খবরটা সম্পর্কে নিশ্চিত হই এবং জানি যে এটা একটা বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড । এই পরিস্থিতিতে ১১ তারিখে পার্বত্যচট্রগ্রাম গণপরিষদেরনেতা কর্মীদেরসহ একটা বৈঠক করি । বৈঠকে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে জানান যে তারা বৈসাবি উৎসবসহ সব উৎসব বর্জন করবে।
কোন উৎসব হবে না কোথাও, তার বদলে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। আমরা গেলাম উৎসবে যোগদান করতে, কিন্তু সেখানে গিয়ে একটা খুবই দুঃখজনক ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলাম। গণপরিষদের সিদ্ধান্তের সাথে সংহতি জানিয়ে আমরাও সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা এই প্রতিবাদ সমাবেশে থাকবো। কারণ আমরা এই ধরনের সকল হত্যাকাণ্ডবিরোধী, আমরা পার্বত্য চট্রগ্রামে সামরিক শাসনের বিরোধী। আমরা সকল জাতির সমান অধিকার চাই, সংকল জাতির সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চাই। সে কারনে তাদের উপরে যে নিপীড়ন হচ্ছে, এই রকম একটা হত্যাকাণ্ড। আমাদের দায়িত্ব তাদের প্রতিবাদের সংগে থাকা। আমরা সংহতি জানানোর জন্য থেকে গেলাম এবং বিভিন্ন কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে ঢাকায় ফিরব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথম আমাদের কর্মসূচী হলো লোগাং যে এলাকায় হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেখানে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা আমরা করলাম। পরিকল্পনা মাফিক ১২ তারিখ আমরা লোগাং-এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কিছু দূর যাওয়ার পরে আমাদেরকে আটকানো হলো, বাধা দেয়া হলো। একটা আর্মি চেকপোষ্ট, তারা আমাদেরকে বাধা দিল। বাধা দিয়ে তারা তাদের চেকপোষ্টের ঘরের মধ্যে আমাদের বসতে বললো। চেকপোস্ট-এ দায়িত্বরত সামরিকবাহিনীর সদস্যরা আমাদের জানালো, আমরা আপনাদের যেতে দিতে পারব না, আপনাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা যেতে দিব না। আপনাদের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে অনুমতি দেয়া সম্ভব না। অনেক তর্ক বিতর্ক হলো। কিন্তু তাদেরকে কনভিন্স করা গেলনা এবং বোঝাগেল যে এটা তাদের সিদ্ধান্ত যে, তারা যেতে দিবে না। তবে তারা জানাল, পাবর্ত্য চট্রগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সাথে কিছু কথা বলতে চায়।
যাই হোক আমরা আর লোগাং যেতে পারলাম না। কিন্তু ঘটনার শিকার প্রতক্ষদর্শী কয়েকটি পরিবারের সাথে কথাবার্তা বলে ঘটনার ভয়াবহতার একটা ধারণা পেলাম। সেই দিন বা তার পরের দিন মনে হয়, রাতে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হলো খাগড়াছড়ি ক্যান্টমেন্টে। ১২ তারিখে রাত হবে। সেখানে আমাদের একটা প্রেজেন্টেশন দেয়া হলো। সামরিক বাহিনী পাবর্ত্য চট্রগ্রামের মানুষের জন্য কি পরিমাণ উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন সেটা নিয়ে একটা বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো। এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য যে নানান দিক থেকে চক্রান্ত হচ্ছে সেটার কথাও বোঝালো আমাদের । তারপরে জাতীয় সর্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, উন্নয়নের জন্য তারা যে ভূমিকা পালন করছে, কিছু বাঙালী বুদ্ধিজীবি সেই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে, হঠকারী ভূমিকা রাখছে সেটাও বলল। সেই বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের তালিকায় যাদের নাম বলল সেখানে দেখলাম আমার নামও আছে। তারা তাদের অবস্থানটা আমাকে জানালো যে, আমার সম্পর্কে কি ভাবছে। তারপরে আমরা খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ সমাবেশে থাকলাম। পরে আমরা রাঙ্গামাটিতেও সমাবেশ করলাম।
ঠোটকাটা: লোগাং হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটেইতো মৌলিক অধিকার রক্ষা কমিটি গঠিত হয়, তাই না?
আনু মুহাম্মদ: পাহাড়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশ করে ঢাকায় ফিরলাম। ঢাকায় ফিরেছিলাম সম্ভবত ১৫ তারিখে হবে। ঢাকাতেও প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছিল। আমরা নিজেরা চিন্তা করলাম যে, আমাদের তো একটা দায়িত্ব আছে। ঢাকায় ফেরার পরে ঐ সময় কিছু সাংবাদিকদের সাথে কথা হয়েছিল। আমরা ভাবলাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম চলমান পরিস্থিতিতে বাঙালী, পাহাড়ী রাজনৈতিকদল গুলোও ঠিকমত ভূমিকা পালন করেনি। বাঙালী এবং পাহাড়ীদের একটা ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা থাকা দরকার। সেই তাগিদ থেকে আমরা নিজেরা বসলাম। আমরা যারা পাহাড়ে গিয়েছিলাম, আমরা সবাই একত্রে বসলাম। আমাদের মধ্যে নিজামুল হক নাসিমও ছিলেন। এখন তিনি বিচারপতি। আমরা সবাই বসে কিছু কথাবার্তা বললাম। হাসান আরিফও ছিলেন, তিনি পরে এটার্নিজেনারেল হয়েছিলেন। বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা একটা বক্তব্য দিব, আমাদের সম্মিলিত বক্তব্য, সেই সম্মিলিত বক্তব্য আমরা প্রস্তুত করলাম এবং সেটা সাংবাদিকদের কাছে পাঠালাম। সেটাকে আমরা একটা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করলাম। খুজলে হয়তো সেটা এখনো পাওয়া যাবে। পার্বত্য চট্রগ্রাম নীপিড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ি বাঙালি যৌথ প্রতিবাদ তখন নতুন ঘটনা ছিল ।
অনেকগুলো বৈঠকের পর মৌলিক অধিকার সংরক্ষন কমিটি নামে একটা সংগঠন সৃষ্টি করলাম। ৯২-এর এপ্রিল মাস থেকে পরবর্তী কয়েক বছর সারাদেশে পাহাড়ি-বাঙালীদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের যৌথ মঞ্চ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই কমিটি। আমি মনে করি, আমাদের সেই সফরটা এই সংগঠিত হয়ে ওঠাকে তরান্বিত করেছে।এই কমিটি গঠিত হওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ী-বাঙালী সংহতির এক নজিরবিহীন ঐক্য তৈরি হল। আমরা ধারাবাহিকভাবে সামরিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব ছিলাম। ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে পাহাড়ে নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপার কাজটা কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই কারণে আমরা নজরদারিতে পড়লাম। আমি খাগড়াছড়ি থেকে আসার পরে, বিভিন্ন ভূমিকা নেয়ার কারনে অনেক ধরনের হুমকি পেয়েছি। যেমন, উড়োচিঠি, বাসায় এসে হুমকি দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে হুমকি এই সমস্ত অনেক ধরনের হুমকি এসেছে সেই সময়।
অসমাপ্ত
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সাথে ঠোটকাটার দীর্ঘ সাক্ষাত্কারের অংশবিশেষ, বিশেষ করে লোগাং হত্যাকাণ্ডের বিস্মৃতির বিরুদ্ধাচারণমূলকঅংশটুকু প্রকাশ করলাম আমরা।.পার্বত্য চট্রগ্রাম প্রশ্নে আলাপ, বিশ্লেষণসহ পূর্ণাঙ্গটি আগামীতে পোস্ট করব আমরা।
==========================================================================
ভোরের কাগজ, ২৪ এপ্রিল, ১৯৯২
কিছুই দেখি না, কিছুই শুনি না, কিছুই বুঝি না
আনু মুহাম্মদ
বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতির বাইরে যেসব সংখ্যালঘু জাতিসত্তা আছে তাদের সম্পর্কে বাঙ্গালী শিক্ষিত ভদ্র সন্তানদের নাক উঁচু ভাবটা কোন গোপন ব্যাপার নয়। এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি হল – এসব জাতি হচ্ছে বর্বর, এই খায় সেই খায়, চেহারা কি রকম, কোথায় থাকে গোছের; আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি হল – বৈচিত্রের জন্য এদের কিছু জিনিস রক্ষা করা দরকার, কিছু মুখস্ত “নাচ-নাচ” “পোশাক” দিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ কর, ওরা উপজাতীয় – কি-সব ভাষায় কথা বলে বেশ মজার ভাব ভঙ্গি করে তবে এগুলো ধ্বংস হতে দেয়া ঠিক নয় – এ জাতীয় পিঠ চাপড়ানো ভাব।
এই দুই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত বেশ গর্ব অনুভব করে, নিজেকে উঁচু সভ্য জাতির একজন ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করে, কখনো ধমক দিয়ে কখনো মার দিয়ে কখনো “আদর” করে নিজেদের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করতে চায়। শত শত বছর বাঙ্গালী এই দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হয়েছে – বিশেষতঃ ইংরেজ ও ইউরোপীয়দের এই নাক উঁচু ভাব তো লুকানো ব্যাপার ছিল না – গদগদ বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের কাঁধে ব্রিটিশ প্রভুর জোয়ালের দাগ এখনও তার খুব প্রিয় স্মৃতি। ইংরেজরা যেভাবে শুধু বাঙ্গালী কেন ভারতীয়দের দেখতো, সেই একই দেখার যোগ্যতা বাঙ্গালী অধিপতিরা অর্জন করতে পারে মহাগর্বিত। এই যোগ্যতা আর কিছু নয় শাসক শ্রেণীর আসনে যাওয়া। বাঙ্গালী শাসকশ্রেণী আরেকটা জাতির উপর চড়াও হয়ে, তাকে ঘৃণা করে, অসম্মান করে, হত্যা করে, ধর্ষণ করে, ঘর ছাড়া করে, অনুগ্রহ করে খুব গর্ব অনুভব করে।
তাদের উপর চড়াও হয়েছে বাঙালী শাসকশ্রেণী, যাদেরকে সভ্য কোন জাতি বলেই সে স্বীকার করে না, তাদের কোন জাতীয় উৎসব এখনো ঠিক করতে পারেনি, ভাষা আর ধর্মীয় পরিচয়ের দ্বন্দ্বে তাদের পরিচয় সংকট এখনও কাটেনি। কিন্তু সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহ তাদের জাতীয় উৎসব সম্পর্কে দ্বিধান্বিত নয়, দ্বিধান্বিত নয় নিজেদের পরিচয় নিয়েও।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বসবাস করেন তাদের মধ্যে প্রধান তিনটি হচ্ছে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা। এদের ভাষা, সংস্কৃতি, উৎসব সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানি না – না জানায় আমাদের কোন লজ্জাও নেই, মাঝে মধ্যে একটু আধটু জেনে ওদের কৃতার্থ করবার ভঙ্গি করি। ওদের আবার উৎসব কি হবে? – এ জন্য জাতীয় বেতার-টিভি ওদের জাতীয় উৎসব সম্পর্কে একটি অনুষ্ঠান তো দূরের কথা একটি ছোট খবরও দেয় না।
বস্তুতঃ উৎসব করবার মত অবস্থায় ওরা এখন নেই। সারাক্ষণ মৃত্যু, উচ্ছেদ, নিপীড়ন ও ভয়ে ভীত মানুষদের পক্ষে কোন উৎসবের কথা চিন্তা করা মুশকিল। তবু যদি দেখা যায় এই অবস্থা বছরের পর বছর চলছে তাহলে ঐ জনগোষ্ঠীর আর কিছু করবার থাকে না। তখন মৃত্যুর সঙ্গে উৎসবকে এক করে নিতে হয়, সচল জীবন দিয়ে অচল জনপদের প্রতি ব্যাঙ্গ ছুঁড়ে দিতে হয়।
এ বছরেও তাই উৎসবের প্রস্তুতি চলেছে। উৎসবের নাম বৈসাবি; ত্রিপুরাদের বৈসুক, মারমাদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিজু – এক সঙ্গে বৈসাবি। শহুরে বাঙালীরা অভ্যস্ত না হলেও গ্রামাঞ্চলে চৈত্য শেষে এবং বৈশাখের শুরুতে যে উৎসবের আমেজ তৈরি হতো এবং এখনো কিছু কিছু হয় তা চাকমা-মারমা-ত্রিপুরা জাতি – জাতীয় উৎসব হিসাবেই পালন করে। তাদের এই উৎসব তিনদিনব্যাপি- চৈত্যের শেষ দু’দিন এবং ১লা বৈশাখ। চাকমাদের বিজু উৎসবের প্রথম দিন ফুল বিজু, দ্বিতীয় দিন মূল বিজু, তৃতীয় দিন সামাজিক মিলন। এ সময়ে মেয়েরা ৩০ চৈত্যের ভোরে পাহাড়ী নদীতে ফুল দিয়ে উৎসব শুরু করে। নতুন জামাকাপড় পরে ঘুরে বেড়ায় শিশুরা। স্থানে স্থানে পাহাড়ের ঢালে গান, নাচের অনুষ্ঠান হয়। বাড়িতে বাড়িতে খায় সকালে, নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে উৎসব শেষ হয়।
এ বছরও সে রকমই পরিকল্পনা হচ্ছিল। তিনদিন সব রক্তচক্ষু ভুলে থাকার প্রস্তুতি। কিন্তু হল না। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়ে যদিও বা উৎসবের আয়োজন করা যায় কিন্তু তাজা রক্তের উপর উৎসব করা যায় না।
উৎসব শুরুর ঠিক এক দিন আগে লোগাং- এ দরিদ্র, বন্দি, নিরস্ত শত শত মানুষ নিহত হলেন। শিশু, নারী, বৃদ্ধ। তখন মধ্যাহ্ন। প্রচণ্ড দুপুর। ঘরে ক্লান্ত দুর্বল অসহায় মানুষেরা প্রহর গুনছে। হিংস্র আক্রমন হল তখনই। খোলা ঘরে কিংবা ঘরে ছিটকিনি দিয়ে আগুন ধরানো হলো। আগুন ধরালো যারা, যারা দা, বটি, লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো তারা সবল; তাদের বরঞ্চ আগুন নেভানোর দায়িত্ব- দুরবল্কে রক্ষা করবার দায়িত্বের কথা বলেই তারা আছে। শত শত ক্ষুদ্র কুটির নিমেষে পুড়ে গেল, পুড়ল মানুষ। নারী- শিশু মাথা হাত পা পোড়া আধপোড়া দেখেছেন অনেকেই। প্রিয়জন নিহত হলে কি কান্নার অধিকার থাকবে না? চিৎকার করে অভিযোগ জানানোর অধিকার থাকবে না? বর্বরদের বিরুদ্ধে পুরো দেশকে জানানোর অধিকার থাকবে না?
না। থাকবে না। কিছুই বলা যাবেনা, কাঁদা যাবে না। শিশুদের নিয়ে বাবা হাঁটে, মা মরে গেছে – কোথায় যাবে কি করবে কে জানে? সন্তানেরা হেঁটে বেড়ায় অনিশ্চিত – বাবা-মা দুজনেই মরেছে। …… বর্বর ঘাতক বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়- তৃপ্তির ছাপ চোখেমুখে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করলাম। নিহতদের স্বজনরা পালিয়ে বেড়ায়, একটু বসে কান্নার সাহস নেই। কেউ যেতে পারবে না তাদের কাছে।
তারাই জেতে পারবে পোড়া, আধপোড়া জনপদে যারা ফিরে এসে বলবে- ‘কিছুই হয়নি, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক চলছে। ওরা খুব সুখে আছে।“
এই কণ্ঠ আমারা চিনি। এসব বর্বর ঘটনা ও যুক্তির সঙ্গে বাঙালীর পরিচয় অনেক দিনের। বাঙ্গালী জনগণ শুধু এ তথ্যটুকু জানেন না, তাদের দোহাই দিয়ে তাদের স্বজাতি শাসকেরা একই রকম হায়েনার বর্বর থাবা চাপাচ্ছে অন্য জাতির উপর।
এ সবকিছুই ঘটছে, কিন্তু আমরা কিছুই দেখি না, কিছু শুনি না, কিছুই বুঝি না।
শাসক শ্রেণীর বদৌলতে পত্রিকার পাতায় ও টিভি-বেতারে তৈরী খবর পরিবেশিত হয়, চিন্তা নেই- সব ঠিকঠাক। সন্তুষ্ট হবার মত খবর দেখে শুনে বাঙ্গালী শিক্ষিতেরা তৃপ্ত ভঙ্গিতে ঘুমাতে যায়। বর্ণবাদের শিকার বাঙ্গালী নিজেই বর্ণবাদীতে পরিনত হয়।
পাহাড়ের কোলে কোলে রক্তপাত চলতে থাকে।
===========================================================================
১৮ এপ্রিল, ১৯৯২, সুত্র: রাডার
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রত্যাগত ২৩জন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, লেখক, আইনজীবি, সাংবাদিক, ছাত্রনেতা ও মানাবাধিকার কর্মীর যুক্ত বিবৃতি
আনু মুহাম্মদ: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা অর্থাৎ পার্বত্য জনগণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব বৈ-সা-বি অনুষ্ঠানের কথা ছিল ৩০,৩১ চৈত্র ও পহেলা বৈশাখ (১২,১৩,১৪ এপ্রিল)। বৈ-সা-বি উদযাপন কমিটি এতে যোগদানের জন্য আমাদের আমন্ত্রন জানায় এবং সেমত আমরা গত ১১ এপ্রিল খাগড়াছড়ি যাই। ঐদিন দেশের সকল জাতীয় দৈনিকে একটি খবর প্রকাশিত হয় এই মর্মে যে, ”শান্তিবাহিনীর হামলায় খাগড়াছড়ির লোগাং গ্রামের ১ জন বাঙালী ও ১০ জন উপজাতীয় নিহত হয়েছেন।” খাগড়াছড়ি গিয়ে আমরা স্বভাবতঃই ঐ অঞ্চলে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করি ঘটনার সত্যাসত্য জানবার দায়িত্ববোধ থেকে। কিন্তু পরের দিন ১২ই এপ্রিল লোগাং যাবার পথে পানছড়িতে আমরা বাধাপ্রাপ্ত হই এবং আমাদের নিরাপত্তার কথা বলে নিরাপত্তাবাহিনী আমাদের ঘটনাস্থলে যেতে বাধা প্রদান করে। ফিরবার পথে এবং খাগড়াছড়িতে বহুসংখ্যক প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনার শিকার ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। কর্তৃপক্ষীয় বিভিন্ন ব্যাক্তির সাথেও আমাদেও কথা হয়। এ সব কিছু থেকে আমরা স্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, লোগাং গ্রামে একটি গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। একজন বাঙালী কিশোর নিহত হওয়ার সূত্র ধরে সেখানে চাকমা ও ত্রিপুরা গুচ্ছগ্রামে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ও আনসার বাহিনীর কিছু বাঙালী দুষ্কৃতকারীর সহযোগীতায় হামলা চালায়। চারশরও বেশি ঘর সেখানে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় এবং শিশু-নারী-বৃদ্ধসহ ২ শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। এ বর্বর গণহত্যার বর্ণনা শুনে আমরা স্তম্ভিত হই, এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এ বর্বর গণহত্যার কারণে পুরো অঞ্চলে পাহাড়ী জনগণের বার্ষিক উৎসবের সকল কর্মসূচী পরিত্যাক্ত হয়। আনন্দমুখর জনপদ শোক ও অশ্রুর জনপদে পরিণত হয়। ঘরছাড়া, মা হারানো, বাবা হারানো, সন্তান হারানো নিরীহ দুর্বল দরিদ্র জনগণের সঙ্গে আমরাও ক্ষুব্ধ। একই সঙ্গে আমরা ক্ষুব্ধ প্রকৃত ঘটনা চেপে রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের ন্যাক্কারজনক চেষ্টায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পার্বত্য জনগণের উৎসবের অংশীদার হতে গিয়ে আমরা তাঁদের শোকের ও ক্ষোভের অংশীদার হয়েছি। অঞ্চলের জনগণ ও কর্তৃপক্ষের বিভিন্নস্তরে কথা বলে এবং বাস্তব অবস্থা দেখে বুঝেছি সমগ্র এলাকায় কার্যতঃ সামরিক শাসন চলছে। সমগ্র বেসামরিক প্রশাসন আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের অধীনস্ত, এলাকায় সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের স্বাধীন কোন কার্যক্রম নেই। চলাফেরার সীমাবদ্ধতা সাংঘাতিকভাবে সীমাবদ্ধ।
পাহাড়ী জনগণের সঙ্গে বাঙালী জনগণের একটি কৃত্রিম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং তা অব্যাহত রেখে লাভবান হচ্ছে একটি কায়েমী স্বার্থবাদী মহল। জাতীয় ঐক্য, অখন্ডতা ও বাঙালী জনগণের স্বার্থের কথা বললেও এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐক্য, অখন্ডতা ও বাঙালী সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিগত নিপীড়নের বিরূদ্ধে দীর্ঘদিন যারা লড়াই করছেন, সেই বাঙালী জনগণ অন্য জাতির নিপীড়ন অনুমোদন করতে পারেন না। এই অবস্থার দায়-দায়িত্ব রাজনৈতিক কর্র্তৃপক্ষের, বাঙালী শাসক শ্রেণীর।
পার্বত্য অঞ্চলের অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে চলাফেরার, মত প্রকাশ, তথ্য প্রকাশ ইত্যাদির উপর নানা প্রকার বিধি নিষেধ আরোপ করে বিপুল লুণ্ঠন পরিচালিত হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। ঐ অঞ্চলে যে বিপুল রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে তার বাস্তব পরিণতি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করার যথেষ্ট কারণ আছে। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিন্নি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষদের বাঙালীদেও চাইতে বিভিন্নভাবে সন্দেহ ও অসম্মানের চোখে কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে কারণে জটিলতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিপুল সম্পদ ও সম্ভাবনার এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের এই পরিস্থিতি সমগ্র জাতীয় উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। আমরা তাই পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশু পদক্ষেপ হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ করছে। আশা করছি নির্বাচিত সরকার এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে পার্বত্য অঞ্চলে স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগী হবেন।
(১) অবিলম্বে লোগাং হত্যাকান্ডের স্বাধীন, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। পুরো ঘটনা বিস্তারিতভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে এতদিন যত হত্যাকান্ড, ধর্ষণ, নিপীড়ন হয়েছে সেই ঘটনাবলীর বিচার বিভাগীয় তদন্তকার্য পরিচালনা করে সকল তথ্য প্রকাশ করতে হবে ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
(২) পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ২০ বছরে সৃষ্ট পরিস্থিতি, রাজস্ব ব্যয় ও তার ফলাফল সম্পর্কে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
(৩) পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সমাধানের জন্য বলপ্রয়োগের নীতি বর্জন করে বিষয়টিকে সংসদের অধীনস্থ করতে হবে এবং ঐ সংসদে খোলাখুলি আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) সংসদ সদস্য ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কমিটি গঠন কের তার মাধ্যমে ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী-দল ও সামাজিক শাস্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে এবং ঐ অঞ্চলে সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করবার প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
(৫) প্রশাসনকে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে বেসামরিক নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসন কার্যকর করতে হবে।
(৬) অঞ্চলের সমগ্র জনগণকে হাতগোণা কিছু লোকের শান্তিবাহীনির সঙ্গে এক করে দেখার বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি বর্জন করতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহ যাতে নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এ দেশের সব মৌলিক অধিকার ধারণ করে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক হিসেবে বেচেঁ থাকতে পাওে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের নাম: ১. পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, ন্যাপ ; ২.দিলীপ বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল; ৩. নিজামুল হক নাসিম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ৪. শাহজাহান মিয়া, সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন; ৫. আনু মুহাম্মদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ; ৬. সৈয়দ হাশমী,শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ; ৭. মোস্তফা ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল; ৮. আদিলুর রহমান খান শুভ্র, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ৯. সারা হোসেন, ব্যারিস্টার; ১০. নাসির-উদ-দৌজা, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন; ১১. আহাদ আহমেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন; ১২. বিপ্লব রহমান, প্রকাশন সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন; ১৩. প্রিসিলা রাজ, সংবাদদাতা, প্রিয় প্রজন্ম; ১৪. আব্দুল জলিল ভুইঞা, ডেইলী স্টার; ১৫. আখতার আহমেদ খান, বাংলার বাণী; ১৬. সলিমউল্লাহ সেলিম, আলোকচিত্র সাংবাদিক; ১৭. সৈয়দ সারোয়ার আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ অবজারভার, ১৮. গুবীর দাস, ভোরের কাগজ; ১৯. আহমেদ যোবায়ের, দৈনিক জনতা; ২০. রোজালীন কান্তা, হটলাইন, বাংলাদেশ; ২১. শিশির মোড়ল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ; ২২. মাসুদ আলম, জাতীয় যুব জোট।
Categories: কথোপকথন
Leave a Reply