যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মরিচের গুঁড়ো

যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মরিচের গুঁড়ো

“নয়-দশ বছরের মেয়েটির কাপড় ছেঁড়া, শরীরে মানুষের দাঁতের দাগ। কামড়ে মাংস থেতলে গিয়েছে…দৃষ্টিসীমায় ছিল বহু পুলিশ…ভুভুজেলার তিব্র চিৎকারের ফাঁকে শুনতে পেলাম আশপাশের লোকজন বলছে, ‘ভিডিও কর! এইটা ভিডিও কর!” উপরের বাক্যগুলো দিয়ে একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবারের পয়লা বৈশাখে রমনায় ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন খবরটা এক নাগরিক, সাংবাদিক। শাহবাগে বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। যৌন নিপীড়ন বিরোধী তৎপরতা প্রত্যক্ষ করছি আমরা। পাশাপাশি দেখছি কিছু গণমাধ্যমে যৌননিপীড়নের মত গুরুতর অপরাধকে শ্লীলতাহানী আখ্যা দিয়ে অপপ্রচার চলছে। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের “সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে অপরাধী ধরবো” তামাশা।

আমার এক শিক্ষক পরামর্শ দিয়েছেন যৌন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে নারীদের পুরোনো রক্ষাকবচ মরিচের গুঁড়ো এস্তেমাল করার জন্য। কথাটা প্রতীকি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যৌন নিপীড়নের মত গুরুতর অপরাধকে বিভ্রান্তিকর নামে ডেকে যারা তামাশা করছেন তাদের চোখের ঠুলি সারাতে আমাদের লেখাই মরিচের গুঁড়ো। তাই ২০১০ এ বুধবার নামক একটি সাপ্তাহিকে প্রকাশিত একটি পুরোনো লেখা ঠোঁটকাটায় আবার প্রকাশিত হল। এবারের ঘটনা ও তাকে ম্যানেজ করার জন্য প্রশাসন ও তার অপশক্তিগুলো যে কান্ডগুলো করছে তার সাথে পুরোনো ঘটনা ও ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মিলগুলো ঝালিয়ে নিলে নারীমুক্তির লড়াই শক্তিশালী হবে বলেই আমরা আশা করছি।

২০১৫ এর ১৪ ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখে রমনায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিক্ভুদ্ধ নারী সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ।

২০১৫ এর ১৪ ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখে রমনায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিক্ভুদ্ধ নারী সমাজের প্রতিবাদ সমাবেশ।

যৌন নিপীড়নের পক্ষে/বিপক্ষের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ, ২০১০

নাসরিন সিরাজ

২০০৯ সালের মে মাসে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। এই অর্জনের পর, ২০১০ এর শেষে এসে যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো কিভাবে রাষ্ট্র , নীতি নির্ধারকরা ও গণমাধ্যম বিলি বন্টন করেছে সেটা বুঝবার চেষ্টা থেকে এই পর্যবেক্ষণ। জাতীয় পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট প্রত্রিকা, ব্লগ কিংবা ফেসবুকে এ বছরে প্রকাশিত লেখালেখি থেকে দেখা যায় এ বছরও যৌন নিপীড়ন নিয়ে আলোচনা বেশ সরগরম ছিল। এই উত্তপ্ততা নির্দেশ করে যে ঘরের বাইরের পরিসরে নারীর অস্তীত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যৌন নিপীড়ন বিরোধী এই নির্দেশনাকে আরও সম্প্রসারিত করার দরকার যেটা যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতেও সাহায্য করবে।

হাইকোর্টের নির্দেশনামা জারি হবার সাথে সাথে যৌন নিপীড়নের ঘটনা হ্রাস পাবে এরকম আশা যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের সাথে যারা দীর্ঘদিন যুক্ত আছেন তারা করেননি। বরং সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গীয় বৈষম্য দূর করতে যৌন নিপীড়ন বিরোধী ব্যপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে জনসচেতনতা তৈরীই ছিল সংশ্লিষ্টদের পরবর্তী লক্ষ্য। হাইকোর্টও সেরকম নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল এ বছরটা ঠিক বিপরীত কাজটাই হল।

প্রথমত: যে ভয়াবহ কাজটি হল সেটি সরকার নিজেই করেছে আর তা হল “ঈভ টীজিং” শব্দটিকে আস্তাকুঁড়ে থেকে উদ্ধার এবং সমাজের দৈনন্দিন বাতচিতের মধ্যে এই হালকা শব্দটির পুনর্বহাল। নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ তার লেখায় (eve teasing: of semantic shifts and criminal cover ups, 15.11.2010. New Age) এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি এ বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো উল্লেখ ও বিশ্লেষণ করে যুক্তি দেন যে মূলত: আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কর্মী বা ক্যাডারদের যৌন সন্ত্রাস ঢাকা দিতে এবং তাদের শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করতে এটা করা হয়েছে। তিনি আরও যুক্তি দেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রোভার স্কাউটদের সাথে নিয়ে “ঈভ টীজিংকে না বলুন” প্রচারণা শুরু করে এবং জুনের ১৩ তারিখকে “ঈভ টিজিং প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে ঘোষণা দিয়ে যৌন নিপীড়নকে হাল্কাকরণ প্রক্রিয়ায় বাতাস দেন। একই লেখক (Thou spoke with a man’s tongue , Mananiya Prime Minister!, 13.12.2010. New Age) রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বিশ্লেষণ করে বলেন যে প্রধানমন্ত্রী নারী হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরুষের ভাষাতেই কথা বলছেন। আপাত: দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের “শত্রু” হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত-ই-ইসলামীর প্রধানের নারী বিদ্বেষী অবস্থানকেও প্রধানমন্ত্রী সমর্থন করছেন। উল্লেখ্য “ঈভ টীজিং” এর কারণ প্রসঙ্গে জামায়াত প্রধান মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন মেয়েরা রাতে বের হয় বলেই এই ঘটনাগুলো ঘটে। একই প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইয়াসীন হাবিব বলেছেন, “ঈভ টীজিং” না থাকলে পৃথিবীর সব পুরুষ হিজড়া হয়ে যাবে। ঈভ টীজিং না থাকলে দেশে অরজাকতা সৃষ্টি হবে। অনেক মহিলা হালকা কাপড় পরে বের হয় পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। তারা নিজেদের কারণে “ঈভ টীজিং” এর শিকার হচ্ছেন।” (সূত্র: আমাদের সময়)। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার “মেয়েদেরও শালীন ভাবে চলা উচিত” এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রেহনুমা প্রশ্ন করেন- দেশের বড়লোক সমাজের মেয়েরা কি পোশাক পরে না পরে বা যৌন স্বাধীনতার নামে কি ফ্যান্টাসীতে ভোগে না ভোগে সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে সাধারণ, কর্মঠ মেয়েদের (প্রকৃতপক্ষে যাদেরকে রাস্তাঘাটে দেখা যায়) প্রাত্যহিক সমস্যাকে কেন তরল করা হচ্ছে, যখন আমরা জানি যে যৌন নিপীড়নের কারণে মৃত্যুর (আত্মহত্যা, খুন) ঘটনা অগুনতি এবং স্কুল ছেড়ে দেয়ার হার উচ্চ?

এ বছরই আমরা দেখতে পেয়েছি সরকারের অপারেশন রোমিও হান্ট নামে র্যা ব প্রকল্প এবং কিশোরদের গলায় “বখাটে” সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ। এ বছর মোবাইল কোর্ট বসিয়ে “বখাটেদের” “ঈভ টীজিং” করার দোষে শাস্তিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার নিজেই যেহেতু বিভ্রান্ত আর পক্ষপাতদুষ্ট তাই এই উদ্যোগগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিক শামীমা বিনতে রহমান তার লেখায় (ইভটিজিংয়ের বিস্তার ও মিজানুর রহমানের প্রতিবাদের খেসারত, ২২.১০.২০১০, bdnews24.com) তুলে ধরেন কিভাবে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও সরকারের এই তরলীকরণ প্রক্রিয়ায় জীবন দিচ্ছেন। তিনি লেখেন যে মিজানুর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল তখন স্থানীয় মানুষের সংগবদ্ধ উদ্যোগে (পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল) একজন আসামীকে স্থানীয় এক আইনজীবির বাসা থেকে পাকড়াও করা হয়। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যৌন নিপীড়নের আসামীদের রক্ষার ব্যপারে স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, “ নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর কলেজের রসায়ন বিভাগের ৩৬ বছর বয়সী শিক্ষক মিজানুর রহমানের ঘটনা কেবল যৌন উৎপীড়ক, পুরুষালী মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দৃষ্টান্তই নয়, ইভটিজিংকে হাল্কাভাবে নেয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের অসারতা উন্মোচনেরও দৃষ্টান্ত।”

এবারে আসি যৌন নিপীড়ন বিরোধী তৎপরতায়। যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা বাস্তবায়নের সমস্যা নিয়ে বরাবরের মত এ বছরও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সোচ্চার ছিল। জুন মাসে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও রেজিস্টারকে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নির্দেশ মালায় নির্দিষ্ট করা গাইডলাইন লংঘন করার কারণে শমন জারি করে। সূত্র : Press Release: High Court Orders Vice Chancellor and Register in Charge of Jahangirnagar University to Show Cause Re Contempt for Disclosing Identity of Complainant. date : 3.6.2010. link : http://solidarityworkshop.wordpress.com/2010/06/03/pr-hc-ju-contempt/) উল্লেখ্য, হাইকোর্টের নির্দেশের অনুচ্ছেদ ৮(ক) এবং ১০ (৩) অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণের আগ পর্যন্ত অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের পরিচয় গোপন রাখার কথা বলা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ সেটি লংঘন করে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনার অভিযোগকারী শিক্ষিকার নাম বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় (২৭ এপ্রিল) বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করে।

২৭ নভেম্বর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর একটি গোলটেবিল আলোচনা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক নাসিম আখতার হোসেইনের আহবানে সেখানে উপস্থিত হন সাংবাদিক এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সক্রিয় শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্রী-ছাত্র ও বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৮ বছরের (দেখুন ধর্ষণ বিরোধী ছাত্রী আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ’৯৮ তে সংগঠিত আন্দোলন নিয়ে প্রকাশনা সংকলন, অশুচি, ১৯৯৯) যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন সংগঠন ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়নে সক্রিয় অংশগ্রহনের অভিজ্ঞতার আলোকে ঐ গোল-টেবিলে আলোচনা করা হয়। যেমন: যৌন নিপীড়কদের শাস্তি প্রদানের সফলতা (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকুরিচ্যুত করা গেছে বা পদাবনতি করা গেছে কিন্তু রাষ্ট্রের সাধারণ আইনের কাছে তাদের সোপর্দ করা যায়নি) থেকে দেখা গেছে যে “আইন তাদেরই ধরে যাদের ক্ষমতা নেই। যখন অপরাধীর সাথে ক্ষমতার সাথে, রাজনৈতিক দলের সাথে, শিক্ষকদের ভোটের রাজনীতির সাথে সম্পর্ক থাকে তখন তাকে আর শাস্তি দেয়া হচ্ছে না ( বক্তা: নাসিম আখতার হোসেইন)। তিনি আরও বলেন যে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটা নিয়ে সক্রিয় হবার কথা কিন্তু কেবল মাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা কাজ হচ্ছে। এই সফলতায়ও খুশী হওয়া যাচ্ছে না কারণ আইন সেখানে কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে সরকারের এ বছরের কার্যকলাপকে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে আখ্যায়িত করে স্থায়ী সমাধানের জন্য কি করা যেতে পারে সেটা আলোচনা করার জন্য গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালন করেন। আলোচনায় উঠে আসে যে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ সেল গঠন করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এই সেলের সদস্য তারাই হচ্ছে যারা প্রশাসনের সাথে যুক্ত বা অনুগত ব্যক্তি। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বদলে অভিযোগকারীর দোষ নিয়ে তারা বেশী আগ্রহী। নারীর জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে অভিযোগ সেলে শুধু নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তিই যথেষ্ট নয়। কারণ তারাও এই ব্যবস্থার বাইরে কাজ করে না। যেমন এ বছরে আলোচিত আব্দুল্লাহ হেল কাফী কেইসের তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগকারীর সমস্যা হিসেবে উল্লেখ আছে যে তার ব্যক্তিত্বের সমস্যা আছে, সে অস্থির মতি, চঞ্চল প্রকৃতির এবং তার দ্রুত ধৈর্য স্খলন ঘটে। এই “অপরাধগুলো”র কারণে অভিযোগকারী শিক্ষিকারও চাকুরিতে পদাবনতি ঘটে। দেখা গেছে যৌন নিপীড়নকে চিহ্নিত না করে সেটাকে “অসদাচরন” আখ্যা দিয়ে বিষয়টিকে হালকা করা হয়। যেমন একই তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে অভিযোগকারী অভিযোগ “বাড়াবাড়ি”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েন বলেন, “অসৎ চরিত্র ও অদক্ষতা যে যৌন নিপীড়ন থেকে আলাদা বিষয় এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বুঝতে হবে”। “যৌন নিপীড়নের শক্ত প্রমাণ নেই” যুক্তি দিয়ে অনেক মামলা খারিজ করা হয় প্রসঙ্গে বিচারপতি গোলাম রাব্বানী নারী নির্যাতনের স্বাক্ষী নিজেই, অর্থাৎ তাকে ইনজুরড ইউটনেস হিসেবে ধরতে হবে এই সুযোগ আমাদের দেশের আইনেই আছে এবং সেটার চর্চা তিনি নিজেও করেছেন (তিনি আরও দেখতে বলেন BLD 16, Vol 230)

২০০০ দশকের শুরুটা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরে মিলেনিয়াম উৎসবে দুই শতাধিক তরুনের দ্বারা একজন নারীকে বিবস্ত্র করার মাধ্যমে। এই বছরের শুরুটা হয়েছে জন সমক্ষে যৌন নিপীড়ন করায় পিংকির আত্মহত্যার খবর দিয়ে। ২০১০ এর পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীদের দ্বারা কনসার্টে মেয়েদের শরীরে সংগবদ্ধ যৌনজ আক্রমন করে। নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছি আমরা। শুরু করতে যাচ্ছি একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক। যৌন নিপীড়নের মত জটিল একটি বিষয় সরলীকরণ করার প্রকিয়া বন্ধ হোক সেই আশাই করি। আর নারীদের এগিয়ে যাওয়ার, ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসার যে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে সেটা আরও শক্তিশালী হোক সেটা দেখার প্রত্যাশা করি। “পুরুষেরা – যাহারা নানা প্রকার দুষ্টামি করে, বা করিতে সক্ষম, তাহারা দিব্য স্বাধীনতা ভোগ করে, আর নিরীহ কোমলাঙ্গী অবলারা বন্দী থাকে! অশিক্ষিত অমার্জিত-রুচি পুরুষেরা বিনা শৃংখলে থাকিবার উপযুক্ত নহে। আপনারা কিরূপে তাহাদিগকে মুক্তি দিয়া নিশ্চিন্ত থাকেন?” – ১৯০৫ সালে সুলতানার স্বপ্নে বেগম রোকেয়া যে প্রশ্ন করে আমাদের বিব্রত করে রেখেছেন তার অবসান হোক।

ফুটনোট:
যৌন নিপীড়ন বলতে যে বিষয়গুলোকে হাইকোর্টের নির্দেশনামায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হল:
a. Unwelcome sexually determined behaviour (whether directly or by implication) as physical contact and advances;
b. Attempts or efforts to establish physical relation having sexual implication by abuse of administrative, authoritative or professional powers;
c. Sexually coloured verbal representation;
d. Demand or request for sexual favours;
e. Showing pornography;
f. Sexually coloured remark or gesture;
g. Indecent gesture, teasing through abusive language, stalking, joking having sexual implication.
h. Insult through letters, telephone calls, cell phone calls, SMS, pottering, notice, cartoon, writing on bench, chair, table, notice boards, walls of office, factory, classroom, washroom having sexual implication.
i. Taking still or video photographs for the purpose of blackmailing and character assassination;
j. Preventing participation in sports, cultural, organizational and academic activities on the ground of sex and/or for the purpose of sexual harassment;
k. Making love proposal and exerting pressure or posing threats in case of refusal to love proposal;
l. Attempt to establish sexual relation by intimidation, deception or false assurance.
(http://www.dpiap.org/resources/article.php?id=0000194&year=&genreid=05, লিংকটি সর্বশেষ দেখা হয়েছে ২৭/১২/২০১০ তারিখে)

ছবি ফেইসবুক খেকে সংগৃহিত।



Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ, যৌন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ

Tags: , ,

1 reply

Trackbacks

  1. Nari Diganta denounces the heinous act of sexual harassment of girls and young women in Dhaka | Nari Diganta

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: