যৌননিপীড়ন ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রকল্প

নাসরিন সিরাজ

ভিড়ের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরায় অপরাধী ধরার ধাপ্পাবাজি

ভিড়ের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরায় অপরাধী ধরার ধাপ্পাবাজি

আবারো ঢাকায় বাংলা নববর্ষ উৎযাপনে সবচাইতে বেশি লোক জমায়েত হয় যে এলাকায়- শাহবাগ মোড় থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত রাজপথটি এবং তার সাথে লাগোয়া সরওয়ার্দী উদ্যান ও রমনা পার্ক- সেখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মদদে ও তাদের কর্মীদের দ্বারা যৌননিপীড়নের ঘটনা ঘটলো। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির অলিখিত ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ধ্যায় আক্রমনগুলোতে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশ, গণমাধ্যম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে এর মধ্যে টেনে নামিয়েছেন। ফলে গণমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে ঘটনাটা ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিসরে এখন সবচাইতে আলোচিত বিষয়, যৌননিপীড়ন মূলক ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে চলছে নানা তৎপরতা। একদিকে গণমাধ্যমে, প্রতিবাদ সমাবেশে যৌননিপীড়নের ঘটনাগুলো বর্ণনায় শব্দ ও ছবি বাছাইয়ে পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা আবারো প্রকাশ পাচ্ছে। অন্যদিকে সেগুলোকে সমালোচনা করে, বিশেষ করে নারীরা প্রকাশ করছেন তুখোড় সব নারীবাদী লেখা ও ভিডিও। কিন্তু আমার নজর কেড়েছে অন্য আরেকটি বিষয়।

লক্ষ্য করছি কিছু মানুষ নেমে পড়েছে পুরুষকে কাম বোধের কাছে হেরে যাওয়া সামান্য অ-মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে। নরপশু শব্দটি নিপীড়কদের জন্য রূপক হিসেবে অনেকেই অনেক সময় ব্যবহার করেন কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এর যথেচ্ছ ব্যবহার আসলেই কৌতুহলদ্দীপক। বিশেষ করে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া অস্পষ্ট ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে সেনসেশন তৈরী করে যেভাবে ন্যায় বিচার প্রত্যাশীদের ধোঁকা দেয়া হচ্ছে সেটা আশংকাজনক।

ঢাকায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে। মওকা বুঝে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাসের মত ট্রিট করার মালিক-নেতা, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাষ্ট্রের ভান্ডার লুটের নায়ক আনিসুল হক ঘোষনা দিয়েছে সে নির্বাচিত হলে পুরো ঢাকা সিসিটিভি ক্যমেরা দিয়ে সারাক্ষণ নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসবে। তথ্যমন্ত্রী ও একাত্তর টেলিভিশন নেমে পড়েছে ইসলামিক মিলিটেন্ট নামক জুজুবুড়ি ভয় প্রচারে। প্রথমে প্রশাসন “কিছু ঘটেনি” বলে পার পেয়ে যেতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু প্রতিবাদের মুখে এখন “অপরাধী পাওয়া গেছে” বলে কাকে যে ধরছে সেটা নিয়ে তাই সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরী হয় বই কি।

যৌন নিপীড়কদের ধরতে পারলে খুন করে বুকের জ্বালা মেটাতে চায় অনেক ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। এই যে ন্যায় বিচার আর সহিংসতার অর্থ এক করে ফেলা এবং মানুষকে অ-মানুষ হিসেবে দেখার সংস্কৃতি এটা কি যৌননিপীড়ন নির্মূলে কোন ভূমিকা রাখবে? না কি ক্ষমতাসীনরা নিজেরাই একটা অস্থিরতা তৈরী করে মানুষের বিপক্ষে মানুষকে লেলিয়ে দিচ্ছে? একজনকে বানাচ্ছে অপরাধী অপরজনকে শিকার? এটাই কি জনগণ শাসনের বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেশজ তরিকা?



Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ, যৌন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ

Tags: , , , , , ,

1 reply

Trackbacks

  1. অন্ধকারে যৌননিপীড়ক চেনার উপায় |

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: