নাসরিন সিরাজ

যৌন নিপীড়ন বোঝাতে এই ছবিটি অনেক সময় ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ইরোটিক সাহিত্যে এরকম কাছাকাছি ভঙ্গির ইমেজ কি স্বাভাবিক আনন্দময় সহবাস বোঝাতেও ব্যবহার হয় না? নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌন আচরণ আর নারীর উপর পুরুষের আক্রমনাত্মক যৌনজ আচরন কত দূরের?
ধর্ষণ কেন ঘটে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকে পুরুষের যৌনতা ও আক্রমনাত্মক চরিত্রের অস্বাভাবিক বা বিকৃত আচরণকে দায়ী করেন । স্বাভাবিক পুরুষ থেকে এভাবেই ধর্ষণকারীকে পৃথক করা যায়। এটা ঠিক যে ধর্ষণের সাথে যৌনতা এবং আক্রমন এই দুইয়ের যোগ রয়েছে কিন্তু আমাদের মেনে নিতে যত কষ্টই হোকনা কেন যৌনতা এবং আক্রমনাত্মক বা আগ্রাসী চরিত্র আলাদা আলাদাভাবে বা মিশ্রভাবে স্বাভাবিক ও দরকারী পুরুষালী বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃত। মিনমিনে মেনিমুখোকে কি পুরুষ বলে? পুরুষ মানেই তো শৌর্য-বীর্য। তাহলে কি ধর্ষণের কারণ সামাজীকিকরণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে? সমাজে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক থেকে ধর্ষণ কত দূরের?
একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, সমাজ নারী পুরুষের যে আদর্শ ছাঁচ তৈরী করেছে তার মধ্যেই ধর্ষণের মূল বীজ রোপিত। সমাজ নারীত্ব হিসেবে নিষ্ক্রিয়তা ও নাজুকতার যে আদর্শ ছাঁচ তৈরী করে ধর্ষণের মাধ্যমে আসলে সেটিই আগ্রাসী পুরুষত্ব দ্বারা আক্রান্ত হয়। ক্যাথি রবার্টস তার বিশ্লেষণে সমাজের তৈরী করা নারীত্বের তিন ধরনের নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেক করেন। ক. মজ্জাগত নিষ্ক্রিয়তা যেটাকে আবার অনেকে প্রকৃতি প্রদত্ত বা জন্মগত নিষ্ক্রিয়তা বলে থাকেন। নারীর বৈশিষ্ট্য বলতে যে বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা সাধারণভাবে জানি সেগুলোর কথা ভেবে দেখুন। একজন মানুষের বৈচিত্রহীন একঘেয়ে কার্যকলাপ আর সিদ্ধান্ত নিতে না পারার নিঃশব্দ জীবন দেখতে পাবেন। খ. দ্বিতীয় নিষ্ক্রিয়তায় নারীকে সমাজ কাজ করতে দেখে ঠিকই কিন্তু সেই কাজকে পুরুষের সহযোগি বা সহকারি বা অধিনস্ত হিসেবে দেখা হয়। গ. তৃতীয় ধরনের নিষ্ক্রিয়তা হল সমাজের মন গড়া নিষ্ক্রিয়তা। এর মানে নারীটি যাই করুক বা বলুক না কেন সেটা আগে থেকেই অনুমান করে নিয়ে সেই কাজকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেনা। সত্যিকার রক্ত মাংসের নারীর আচরণ, কার্যকলাপের সাথে এই তিন ধরনের নিষ্ক্রিয়তার মিল বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নেই কিন্তু ভয়ংকর ব্যপার হল এই তিন ধরনের নিষ্ক্রিয়তা দিয়ে নারীর সত্যিকার কার্যকলাপকে ঢেকে ফেলা হয় তথা সত্যিকার নারীকে মুখোশ পরানো হয়।
নারী সম্বন্ধে এই তিনটি নিষ্ক্রিয়তার ধারনা এতো বেশী শক্তিশালী যে, মা বা ঘরের স্ত্রীকে বলা হয় “কোন কাজ করে না”। সেই একই নিষ্ক্রিয়তার ধারণার কারণেই একজন পুরুষ রাস্তায় চলতে চলতে নারীর প্রতি মন্তব্য ছুঁড়ে দেয় কিংবা শরীর ম্পর্শ করে। সেই একই দৃষ্টিভঙ্গীর বলে পুরুষেরা পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে ধর্ষণের ইচ্ছা পোষণ করে বা ধর্ষণ করে। আর বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থা সেই ইচ্ছাকে উৎসাহিত করা কিংবা কার্যকর করার জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র। শুধু ধর্ষণই নয় দূর্বল ও সুবিধা বঞ্চিতদের শোষণ নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতেও এই সমাজ ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় কোন উপায় নেই। উপরন্তু সামাজিকীকরণের দ্বারা যাবতীয় বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখার প্রক্রিয়া চলে। নারী ও পুরুষের সম্পর্কের যে বৈষম্য, নারী ও পুরুষের যে আদর্শ মডেল সমাজ তৈরী করেছে সে হিসেবে ধর্ষণ ঘটাটাই খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
ধর্ষণকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আইনের বইগুলোতে যে সংজ্ঞা রয়েছে সে থেকে জানা যায় যে, ধর্ষণ হল সে ধরণের যৌন আগ্রাসন যেখানে নারীর অনুমতি ছিল না বা নারীর পক্ষ থেকে বাধা ছিল। কিন্তু নারীত্বের ধ্বজাধারী বৈশিষ্ট্য হল আত্মরক্ষায় অপারগ এমন একজন যে তার নিজের আত্মরক্ষাহীনতা সুযোগ গ্রহণকারী একজন পুরুষের জন্য অপক্ষো করে। সমাজে যে শুধু ভরণ পোষণের জন্য নারী পরনির্ভর হিসেবে বেড়ে ওঠে তাই নয় তার শরীরী রক্ষাও অন্যের ওপর নির্ভরশীল বলে বিবেচিত হয়। সে কারণে লক্ষ্য করবেন যে আইনের মার প্যঁচে জেরার মাধ্যমে এটিই প্রমাণের চেষ্টা করা হয় যে নারীটি যথেষ্ট পরিমাণে নিষ্ক্রিয় ছিল কি না বা “নারী” ছিল কি না। এবং নারীত্বের আদর্শ ছাঁচের বাইরের বৈশিষ্ট্য যেমন, সক্রিয়তা, আত্মনির্ভরশীলতা বা পরমুখাপেক্ষিতার অভাব নারীটিকে দুশ্চরিত্র বা খারাপ প্রমাণ করে। অর্থাৎ, নারীর অবস্থা এখানে শাখের করাতের মত । ভালো নারী হেসেবে স্বীকৃতি পেতে গেলে নারীকে হতে হবে নিষ্ক্রিয় বা পরোক্ষ ভাবে সক্রিয় যে সব সময় নেতৃত্ব চর্চার জন্য পুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আবার পুরুষ সেই নেতৃত্বের চর্চা ( যেটি পুরুষরা সম্মিলিত ভাবে সমাজের বিভিন্নস্তরে ও কর্মকান্ডে করে থাকে) করলে তাকে ধর্ষণ হিসেবে প্রমাণও করতে হবে।
এবারে আসি নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ক বলতে আমরা যে স্বাভাবিকতাকে সত্য হিসেবে জানি সে বিষয়ে। মোটা দাগে বলতে গেল নারীর জন্য যৌনতা এবং সন্তান জন্মদান একসূত্রে গাঁথা। জন্ম নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি এবং ঔষধ আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সন্তান জন্মদান থেকে আলাদা করে যৌনসুখ নারীর কোন বিষয় ছিল না। এটি একচেটিয়াভাবে পুরষের। নারীর কাছে এটি একটি পরোক্ষ ক্রিয়া যেখানে সে পুরুষকে তৃপ্তি দান করে বা পুরুষের বীর্য গ্রহণ করে কৃতার্থ হয়। এমনকি এও ধারণা করা হয়ে থাকে যে, যদি নিয়ন্ত্রণকারী পুরুষটি তৃপ্ত হতে গিয়ে ব্যাথাও দেয় সেটিও নারীর জন্য আনন্দ দায়ক। বা সে আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করবে। আর যৌন সম্পর্কের ওপর পুরুষের নিয়ন্ত্রণ বলতে বোঝায় যে, নারীটি যৌন মিলন চায় কি চায়না বা সম্পর্কটি উপভোগ করছে কি করছেনা সেটা নিয়ে পুরুষটির নির্বিকার থাকা বা সেটিকে বিবেচনায় না আনা। এবং সম্পর্কটির মধ্যে শুধুমাত্র যৌন মিলন ছাড়া অন্য কোন গভীর কারণ না দেখানো। এখন, বৈবাহিক সম্পর্ক বা দুজনের অনুমতি সাপেক্ষে যে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক সেক্ষেত্রেও এরকম জানা যায় যে, নারীর আবেগ অনুভূতির পরোয়া না করে তার আপত্তিকে ধর্তব্যে না ধরে পুরষরা নরীর সাথে যৌন ক্রিয়া করে। এবং নারীত্বের নিয়মানুযায়ী পুরুষের প্রয়োজন মেটানো এবং তাকে তৃপ্ত করা নারীর প্রথম দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারীকে শুধু দেখা যায় কিন্তু তাকে শোনা যায়না। অন্যভাবে বলতে গেলে এই নিয়মানুযায়ী পুরুষেরা নারীরা কি বললো বা করলো তা উপেক্ষা করে বা বাতিল করে। যেমন নারীর “না” কে “হ্যা” ধরা বা “না” টা একেবারেই না শোনা। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক আর যৌন আগ্রাসন একাকার হয়ে যায়।
আবার দেখুন, প্রতিদিনকার সামাজিক কার্যকলাপে নারীকে “নেই ”এর সারিতে ফেলে দেয়া খুবই স্বাভাবিক একটি আচরণ। যেমন অচেনা কাউকে সম্বোধন করতে স্যার ব্যবহার, নারী-পুরুষের যৌথ জাত হয়ে যায় ম্যান কাইন্ড/মানবজাতি বা ইতিহাস হয়ে যায় হিউম্যান হিস্ট্রি বা মনব ইতিহাস। এই বিষয়টি শুধু ইংরেজী বা বাংলা শব্দের ব্যবহারের বা ব্যকরণগত বিষয় নয় এটি প্রকাশ করে মনোজগতে বা চিন্তাজগতে নারীর অনুপস্থিতি বা বিশেষ অর্থে উপস্থিতি এবং ভাব প্রকাশে নারী পুরুষ নির্বিশেষে শুধুমাত্র পুরুষকেই দেখার প্রবনতা। এই প্রবনতাটি আমাদের অন্তর্মূলে এতো গভীরভাবে গেঁথে গেছে যে ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সামনে আসলে বা এই স্বাভাবিক প্রবনতাটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে কেমন একটা লেজে-গোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়।
নারী ও পুরুষ বোধক শব্দ রয়েছে তাদের ব্যবহারও রয়েছে কিন্তু যথাযথ প্রকাশ বা অপ্রকাশ নির্ভর করে সমাজে বিদ্যমান নারী ও পুরুষের বৈষম্যমূলক সম্পর্কের ওপর। সমাজে নারীর কথা না শোনা ( শুধু কান দিয়েই নয়) এবং শব্দ ব্যবহারে নারীর নিষ্ক্রিয় অবস্থাকে দেখানো কিংবা ধর্ষণের সময় নারীর বাধা বা “না” কে না শোনা এক সূত্রেই গাঁথা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালে আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ধর্ষণের পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা মত ও বিতর্ক চলছিল। এই সময়ে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষক তার ক্লাশে মন্তব্য করেছিলেন, “চিনি খেতে মিষ্টি, এখন এটাকে জোর করে খাওয়ালেও মিষ্টিই লাগবে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমেও আসলে প্রকাশ পায় যৌনতা সম্বন্ধে সমাজে বিদ্যমান ধারনা যেখানে নারীর মত বা ইচ্ছা বা উপভোগ একেবারেই অনুপস্থিত বা অস্বীকৃত। তাই পুরুষালী দৃষ্টিভঙ্গী তথা সমাজে বর্তমানকালে বিদ্যমান প্রচলিত মতবাদ অনুযায়ী ধর্ষণ হয়ে যায় যৌন মিলন বা একটি যৌন ক্রিয়া। কিন্তু নারীর কাছে তা সহিংসত্,া আক্রমন আর বেদনা।
এবারে আসি নারী ও পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক বলে আমরা যেগুলোকে জানি তার মধ্যে সামাজিক বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশের আলোচনায়। দেখা যায় যে, নারীর পরনির্ভরশীলতা কিংবা পুরুষের কর্তৃত্বের বর্বর বহিঃপ্রকাশ ভালোবাসা হিসেবে পরিগনিত হয়। এ ক্ষেত্রে ক্যাথি রবার্টসের দেয়া দশ বছর আগেকার লন্ডনের একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। ‘একবার এক পুরুষ তার স্ত্রীর মাথা কিভাবে ফাটলো ব্যাখা করছিলেন এই বলে যে, “অনেক সময় তুমি যে ভালোবাসো তা প্রকাশের একমাত্র রাস্তা- শারিরীক শাস্তি”।’ আমাদের দেশেও কিন্তু স্বামীর পিটুনিকে ব্যাখ্যা করতে একই ধরণের কথা আপনি শুনতে পাবেন যে, “স্বামী যেমন ভালোবসবে তেমনি শাসনও করবে”।
আবার, দম্পতি পরিবার ধারণা মালিকানা ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। “তুমি আমার, আমি তোমার”- ভালোবাসার সব কথা মালিকানাত্বের দাবী দাওয়ায় ভরা। এবং এগুলো শুধু ভালোবাসার কথাই নয় এগুলোর মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন ঘটে। দাম্পত্য সম্পর্কের মাধ্যমে একটি পুরুষ যেমন একটি নারীর ওপর মালিকানার অধিকার পায়। পুরুষ সঙ্গীটির এই হেন মালিকানার প্রতি নারীটির অনুভূতি হচ্ছে :- পরম নির্ভরতা। সামাজিক সাধারণ বোধ বুদ্ধিতেই এই পারষ্পরিক মালিকানা ও নির্ভরতার সম্পর্কের স্বীকৃতি রয়েছে। যেমন আরেকটি ধারণা মীথের মত সমাজে গেঁথে আছে আর তা হল, নিজের শারিরীক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেকটি নারীরই একটি পুরুষের দরকার আর পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন সে তো কোন জীবনই নয়।
স্মরণ করুন মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ের কথা যখন ঘরের সোমত্ত মেয়েটির ধর্ষিত হবার আশংকায় অভিভাবকরা মেয়েদের বিয়ে দিতে শুরু করলেন। যেন নারীটি প্রকৃত মালিকের কাছে পরম নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। ধর্ষিত নারীটির বেদনার চাইতে পরিবারে/সমাজে বড় হয়ে ওঠে পাকিস্তানী সৈন্যের দ্বারা নারী সম্ভোগের বিষয়টি। সহিংসতার চাইতে বড় হয়ে ওঠে পর পুরষের (বা পর জাতের) সাথে যৌন মিলনের, সতীত্ব সংরক্ষণ বিষয়টি। নারীর শরীরের প্রকৃত মালিক পরিগনিত হচ্ছে পুরুষ তাই দেখা যায় যে সেই পুরুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য নারীর ওপর আক্রমন হয়েছে। অতীত এবং বর্তমান কালেও বিভিন্ন দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও যুদ্ধে পুরুষের অহমিকা, ইজ্জত, মান-সম্মানকে আঘাত করতে নারীর ওপর যৌন আক্রমন ঘটেছে।
একেকটা সময় আসে যখন আমরা ধর্ষণের খবরা খবর বেশী পেতে শুরু করি। আম কাঁঠালের যেমন একটা মৌসূম থাকে যেন ধষণেরও একটা মৌসূম আসে। সেই মৌসূম যেন হঠাৎ করে আমাদের “বিবেককে” নাড়া দেয় আর আমরা কিছু “নর পশুর” “বিকৃত” কার্যকলাপ দেখে শিহরিত কিংবা বিস্মিত হই। নারী যে পুরুষের অধীন, ভোগ্য যৌনজ পণ্য হিসেবে বিবেচিত তার শুরু এঙ্গেলসের মতে সেই তবে থেকে যবে থেকে ব্যক্তিগত মালিকানার ধারনার উৎপত্তি হয়েছে। আর প্রতিনিয়ত তার অস্তিত্ব আমাদের আশে পাশে শ্বাস নেয়া বায়ূর মত। তবে তারমানে এটা ধরে নেবেন না যে নারীরা চুপ করে বসে আছে বা খুব সহজে ছেড়ে দিচ্ছে তার ওপর যাবতীয় নিপীড়নকারীকে। কখনই ভুলে যাবেন না ১৯০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার টেক্সটাইল নারী শ্রমিকদের ডাকা হরতালের কথা যার ফলে সেখানকার কারখানাগুলো ১৩ সপ্তাহ বন্ধ ছিল। ভুলে যাবেন না ৮ ই মার্চের ইতিহাসের কথা। যে বন্ধুর আর দীর্ঘ পথ নারী তখন থেকে হাটতে শুরু করেছে তার এখনও শেষ হয়নি ঠিকই কিন্তু সেই লড়াইয়ে প্রত্যেকটি নারী আর সহযোদ্ধা পুরুষরা স্বপ্ন দেখে সকল বৈষম্যের গোড়া তুলে ফেলার। স্বপ্ন দেখে সমতার সমাজের।
(১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ক্যাথি রবার্টসের women and rape বইটি ধর্ষণ নিয়ে একটি চমৎকার নারীবাদী বিশ্লেষণের উদাহরণ। তিনি লন্ডনের “ রেপ ক্রাইসিস সেন্টার” এর কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেছেন অনেক বছর। পরবর্তীতে তাঁর অভিজ্ঞতাগুলোকে তিনি পিএইচডির গবেষণা কাজে লাগান। ক্যাথি রবার্টস তাঁর এই বইটির জন্য ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের গবেষণা করেছিলেন। বইটি পড়তে গিয়ে আমি আমার আশেপাশের সমাজকে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের যে সূত্র খুঁজে পেয়েছি এই লেখাটি সেই অনুপ্রেরণায় লেখা।)
First published in Notun Path,2004. (3:1). P. 100-101.
Categories: বাংলাদেশে নারীবাদ, যৌন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ
Leave a Reply