৯ই মে, ১৮৫৮: শান্তি প্রতিষ্ঠায় মা দিবস
১৮৫৮ সাল। সমাজ ও পরিবারের সুস্বাস্থ্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞায় মা দিবস শুরু হয়েছিল। শিশু মৃত্যুর হার তখন ছিল ব্যাপক। এই প্রেক্ষিতে পয়ঃনিষ্কাষন ব্যাবস্থার পরিবর্তনের ডাকে এ্যাপালেচিয়ার সমাজ কর্মী এ্যান জারভিস প্রথম মা দিবসের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল ওয়ার শেষে, ঠিক এক যুগ পরে ১৮৭০ সালে দাসপ্রথা নিপাত যাক (abolitionist) আন্দোলনের জুলিয়া ওয়ার্ড বিধ্বংসী যুদ্ধের প্রতিবাদে মা দিবস পালন করেন।
কিন্তু মা দিবসের যুদ্ধবিরোধী চেতনা উদারনৈতিক মাতৃত্বের বানিজ্যিক উদযাপনের বিষয় হয়ে উঠে দ্রুতই। দিবসটির চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক, অরাজনৈতিক বানিজ্যিক উদযাপনের প্রবনতার প্রতিবাদে এ্যান জার্ভিস, এই দিবসটি বাতিল করার জন্য ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন। জার্ভিসের মা দিবসের বানিজ্যিকরণবিরোধী সংগ্রাম নিয়ে প্রিয়.কম-এ ফাহমিদা উর্নি সবিস্তারে লিখেছেন। তাই আমরা মা দিবসের যুদ্ধ বিরোধী ঐতিহাসিক ঠিকুজির সন্ধানে মনোনিবেশ করেছি।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সামাজিক মনোজগতে মা দিবস স্থান নিয়েছে। দিবসটির ইতিহাস বিবর্জিত পালন ও প্রসারে বাজারে ছড়াছড়ি পণ্য ও কর্পোরেট মিডিয়ার ভূমিকা আছে। এই বাজার-কেন্দ্রিক ইতিহাসের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়া ইতিহাস নিয়ে একটি ফিচার তৈরি করেছে, (হাওয়ার্ড) জিন এডুকেশন প্রজেক্ট (Zinn Education Project)। ঠোটকাটার পাঠকদের জন্য এই ফিচার থেকে মা দিবসের ঘোষণার ভাবানুবাদ হাজির করলাম আমরা।
[ভাবানুবাদকের টীকা: তৎকালীন খ্রীষ্টান ধর্মের ভাষাব্যাবহার সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা ঘোষণটির বক্তব্য অনুবাদের জন্য অনিবার্য। কিন্ত এই ঐতিহাসিক সময়কাল এবং বিশেষ ভাষা ব্যাবহারের সাথে পরিচিত নই বলে মূল ইংরেজীটাও চট করে দেখে নেয়ার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করছি। – সায়দিয়া গুলরুখ]
মা দিবসের ঘোষণা ১৮৭০
জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে
আজকের যুগের সকল নারী, জেগে উঠুন।
সকল হৃদয়বান নারীরা, আমাদের ব্যাপ্টিজম জল বা চোখের জল দিয়েই হোক না কেন, জেগে উঠুন।
দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলুন,”জঞ্জাল এজেন্সিগুলোর চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত চাই না, আমাদের স্বামীরা যুদ্ধ-ধ্বংসজজ্ঞে সৌরভান্বিত হয়ে সাধুবাদ ও ভালবাসার জন্য আমাদের কাছে আসবে না; আমাদের পুত্র সন্তানদের যে দয়া, ধৈর্য্য ও মহানুভবতার শিক্ষা আমরা দিয়েছি, আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সেই শিক্ষা ভুলে যেতে বাধ্য করবে, তা হয় না। আমরা, এই দেশের নারীরা, অন্য দেশের নারীর প্রতি সহানুভুতিশীল, তাই আমাদের ছেলেরা আরেক দেশের মায়ের সন্তানকে আঘাত করবে, সে অনুমতি আমরা দিতে পারি না।
বিধ্বস্ত দেশের বুক থেকে একটা কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা সোচ্চার হয়েছি। সমস্বরে বলছে, ”ধরণীকে নিরস্ত্র কর। নিরস্ত্র কর। খুনের তলোয়ার দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় না। রক্তপাত অসম্মানকে মুছে ফেলতে পারে না, সহিংসতা পারে না স্বত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। যুদ্ধের সমনের জবাবে পুরুষেরা লাঙ্গল, হাতুড়ি ত্যাগ করেছে, এক নতুন সম্ভাবনাময় দিনের খোঁজে এখন নারীরা ঘর-বাড়ি-সংসারের যা কিছু পড়ে আছে তা ফেলে বেরিয়ে আসবে।
এই সব নারীরা প্রথমে নারী হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হবে। যত আপনজন হারিয়েছে তাদের শোক আর মাতমে মিলিত হবে। একজন আরেকজনের শান্ত¦না-উপদেশের মধ্যে একটি মানব পরিবার হয়ে শান্তিতে (the great human family living in peace) বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে পাবে। প্রত্যেকে মানুষ হৃদয়ে সৃস্টিকর্তার (of God) জন্য পবিত্র আনুগত্য ধারণ করবে, সিজারের (পার্থিব কর্তৃত্বের, তথা রাষ্ট্রের) জন্য নয়।
নারীত্ব ও মানবতার নামে, আমি আন্তরিকভাবে আহবান জানাই যে, জাতীয়তার সীমানা উপেক্ষা করে একটি সাধারন নারী কংগ্রেস গঠন করা হোক, যেখানে এই কংগ্রেসটি সবচেয়ে কার্যকর হবে সেই স্থানেই, বিভিন্ন জাতীয়তার নারীর সংহতি ও তাদের আর্ন্তজাতিক নানা প্রশ্নের সমাধানের লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠা পাক, যত দ্রুত সম্ভব।
সর্ব সাধারণের শান্তির উদ্দেশ্য।
মে ১৮৭০।
Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ
Leave a Reply