https://womensmemorialmarch.wordpress.com/
জানুয়ারী মাস। ১৯৯২। কন্কনে শীতের রাত। শেরিল এ্যান জো। দ্ইু সন্তানের মা। পরিবারে আর কেউ নেই। পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গের বিনিময়ে আয় করেন। থাকেন আদিবাসী কোস্ট সালিশ টেরিটরিতে, এখন যাকে লোকে কানাডার ভ্যানকুয়েভার শহর হিসেবে চেনে। সেই রাতে কাজ করতে বাইরে গিয়ে শেরিল আর ফেরেনি। পরদিন সকালে পাওয়েল স্ট্রীটে তাঁর ছিন্নভিন্ন শরীর খুঁজে পাওয়া যায়। দুই স্তন কেঁেট রাস্তার এ মাথা আর ও মাথায় ফেলে রাখে ঘাতক পুরুষ। যোনির চামড়া কেঁটে এনে ফেলে দূরের আরেক রাস্তায়।
শেরিলের এই ভয়াবহতম হত্যাকাণ্ডে তাঁর সহকর্মী, সাথী, আত্মীয়-পরিজন শোক-বেদনা-ক্রোধে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রতিবাদের ডাক দেয় ভালোবাসা দিবসে। কয়েকশত আদিবাসী নারী ভ্যানকুয়েভারের ডাউন-টাউন ইস্টসাইডের কার্নেগি হলের সামনে লাল আর হলুদ গোলাপ নিয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় শোকযাত্রা। শহরের প্রতিটি কোণায় যেখানে শেরিলের দেহাবশেষ পড়ে ছিল, সেখানে নারীরা পবিত্রকরন আচার অনুষ্ঠান (cleansing ceremony) পালন করে। সেইজ জ্বালায়। গান গায়। প্রতিটি রাস্তায় যেখান থেকেই আদিবাসী নারী নিখোঁজ হয়েছেন সেখানেই নারীরা এই আচার অনুষ্ঠান পালন করে। নিখোঁজ নারীদের ছবি রেখে আসে, রেখে আসে আদিবাসীদের আত্মীয় ঈগল পাখীর পালক।
শ্রদ্ধা জানিয়ে নারীরা হলুদ গোলাপ নিয়ে হাজির হয় জমায়েতে। হলুদ হল আশার প্রতীক – এই প্রত্যাশার প্রতীক যে নিখোঁজ নারীরা নিরাপদে ঘরে ফিরে আসবে একদিন। শ্বেতাঙ্গ কানাডীয় রাষ্ট্রের পুলিশের নীরব সমর্থনকে প্রত্যাখান করে নারীরা প্রতিবাদী পরিসংখ্যান নিয়ে হাজির হন রাস্তায় –
১৯৭৮ একজন নারী নিখোঁজ
১৯৮৩ দুইজন নারী নিখোঁজ
১৯৮৪ একজন নারী নিখোঁজ
১৯৮৫ দুইজন নারী নিখোঁজ
১৯৮৬ একজন নারী নিখোঁজ
১৯৮৮ একজন নারী নিখোঁজ
১৯৮৯ একজন নারী নিখোঁজ
১৯৯১ দুইজন নারী নিখোঁজ
১৯৯২ দুইজন নারী নিখোঁজ
১৯৯৩ চারজন নারী নিখোঁজ
১৯৯৩ একজন নারী নিখোঁজ
১৯৯৫ চারজন নারী নিখোঁজ
১৯৯৬ তিনজন নারী নিখোঁজ
১৯৯৭ চৌদ্দজন নারী নিখোঁজ
১৯৯৮ নয়জন নারী নিখোঁজ
১৯৯৯ পাঁচজন নারী নিখোঁজ
২০০০ চারজন নারী নিখোঁজ
২০০১ আটজন নারী নিখোঁজ
কেবল ভ্যানকুয়েভারের একটি পাড়া (ডাউন ইস্ট সাইডে) থেকেই দ্ইু দশকে ৬৫জনের অধিক নারী নিখোঁজ হন। কানাডীয় রাষ্ট্র মুখ ঘুরিয়ে থাকে। রাষ্ট্র ও বৃহত্তর সমাজের বিস্মৃতি ও উপেক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা হচ্ছে ১৪ই ফেব্রুয়ারীর ওইমেনস মেমোরিয়াল মার্চ/নারীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোভাযাত্রা। এই প্রার্থনা সভা।
গত দুইযুগ ধরে কানাডীয় আদাবাসী নারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভালোবাসা দিবসে সমগ্র নর্থ আমেরিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই দিবসটি পালন করছে। শোক যাত্রা, প্রার্থণা সভার মধ্য দিয়ে নিখোঁজ ও খুন হয়ে যাওয়া বোনদের নাম, গল্প, ছবিতে মুখরিত করে তুলছে বর্ণবাদী বিস্মৃতির দেয়াল। এই বিস্মৃতির দেয়াল নারী আন্দোলনকেও নানা ভাগে ভাগ করেছে, ১৪ই ফেব্রুয়ারী এই সহিংসতার দেয়াল ভাঙ্গার ডাক।
[ডাউনটাউন ইস্টসাইড উইমেন্স সেন্টার ও ওইমেনস মেমোরিয়াল মার্চের ওয়েবসাইটের প্রকাশিত তথ্য হতে সংকলিত ]
Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ
Leave a Reply