চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা: মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বিভ্রান্তিকর কলামের উত্তরে

চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা: মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বিভ্রান্তিকর কলামের উত্তরে

নাসরিন সিরাজ

সম্প্রতি, জনপ্রিয় কলাম লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল “শহীদের সংখ্যা এবং আমাদের অর্ধশত বুদ্ধিজীবী” শিরোনামে একটি লেখায় একটি সমস্যা উত্থাপন করেছেন এভাবে:

“…জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারটা আমরা খুব ভালোভাবে বুঝি; কিন্তু আমি আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপারটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।…কিছুদিন আগে আমাদের দেশের পঞ্চাশজন বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমাকে একই সঙ্গে বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং আহত করেছিলেন।…”

আমার লেখার বিষয় মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ঐ লেখায় পরিবেশিত তিনটি বিভ্রান্তিকর দিক নিয়ে। এখানে পাঠক লক্ষ্য করবেন কিভাবে জনাব ইকবাল পুরোপুরি ভ্রান্তির ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্দোলনকে খারিজ করেছেন। আন্দোলনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এই রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এবং এখানে বসবাসকারী সকল মানুষের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

“অর্ধশত বুদ্ধিজীবী”, এরা কারা ?

zafrullah_et_al

আদালত অবমাননা আইনের প্রয়োগ চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃত দানকারী নাগরিকেরা আদালতে, শুনানী শেষে। ছবি ইন্টারনেট।

প্রথমেই পাঠকের কাছে “অর্ধশত বুদ্ধিজীবী” বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাই। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল যেহেতু ঠিকমত ব্যাখ্যা করেন নি তাই পাঠকের কাছে মনে হতে পারে “অর্ধশত বুদ্ধিজীবী” বুঝি নতুন আত্মপ্রকাশ করা ভীষন একাট্টা একটা দল। আসলে কিন্তু “অর্ধশত বুদ্ধিজীবী” দলটি খুব একাট্টা নয়। এই দলের মধ্যে বিভিন্ন বয়সের, জাতের, লিঙ্গের, রূচির, পেশার মানুষ রয়েছেন। এরা যে সবাই ব্যাক্তিগতভাবে পরষ্পরকে চেনেন এমন না। তাঁদের কাজের পরিধি ও মাধ্যম একেক জনের একেক রকম।

এই দলের সকলকে ঠিক বুদ্ধিজীবীও (একাডেমিক অর্থে) বলা যায় না, যদিও দলটিতে বাংলাদেশের পাবলিক ও বানিজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিদেশের বি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও একাডেমিক গবেষক রয়েছেন। কিন্তু তাদের সকলের লেখাপড়ার বিষয় আবার এক নয়। অংক থেকে শুরু করে সমাজ বিজ্ঞান পর্যন্ত নানান ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এখানে রয়েছেন।

বিদ্বৎসমাজের পন্ডিতরা ছাড়াও এই দলে আছেন আইনজীবী, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনয়, সংগীত ও নৃত্য শিল্পী, অনুবাদক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী, নারী অধিকার কর্মী, অভিবাসী অধিকার কর্মী ও আদিবাসী অধিকার কর্মী। এই দলটির মানুষগুলোর রাজনৈতিক যুক্ততা “আপনারা কোন্ পার্টির পলিটিক্স করেন?” এই প্রশ্ন উত্থাপন করেও ঠিক বোঝা যাবে না। কারণ, এঁরা সরাসরি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, জাতীয় পার্টি মার্কা পার্টিগুলোর সাথে জড়িত নন। ভোটের সময় এঁরা কে কোন মার্কায় ভোট দেন সেটা গোপনীয়, তাই সে নিয়ে অযথা অনুমান করতে যাবো না।

তবে এঁরা যে রাজনীতি বিমুখ ও পক্ষপাতহীন নন সেটা অবশ্যই নানা সময় তাদের কাজকর্মে প্রকাশ পেয়েছে। সাধারণ চাকুরে মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থ নষ্ট হচ্ছে এ’সব বিষয়ে আলোকপাত করতে তাঁরা প্রায়ই পদস্থ ও গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ জনসমক্ষেই বিশ্লেষণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নয়, এই বৈচিত্রময় দলটির উদ্বেগ চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে:

দ্বিতীয় যে পয়েন্টটি আমি পাঠককে পরিষ্কার করতে চাই সেটা হল পঞ্চাশ জন নাগরিকের এই দলটি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে মোটেও ব্যাস্ত হন নি। বরং, এই দলটিতে এমন মানুষ আছেন যাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, স্বজন হারিয়েছেন। এই দলে এমন মানুষও আছেন যাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক দালাল নির্মূল করতে ১৯৯০এর দশকের প্রথমদিকে যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেছেন। এই দলে তরুনদের সংখ্যা নেহাত কম নয়, এবং এরা যুদ্ধের পরে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মেছে। তাই তারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে বলা যাবে না কিন্তু তাদের বেশীরভাগই তাদের গবেষণায়, লেখায়, উপন্যাসে, চলচ্চিত্রে, গানে, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা, মুক্তিযোদ্ধা, ও সাধারণ মানুষের অবদানের কথা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছে।

তাহলে “পঞ্চাশ জন বুদ্ধিজীবি” কি করেছেন? যেটা তারা করেছেন সেটা হল আদালত অবমাননা আইনের প্রয়োগ যে চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে এরকম একটি উদ্বেগ প্রকাশ। এবং সেটি তাঁরা করেছিলেন সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে। নির্দিষ্টভাবে, তাঁরা বাংলাদেশে বসবাসরত বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ এর দেয়া সাজার বিষয়টি নজরে আনেন। উল্লেখ্য বার্গম্যান তাঁর একটি লেখায় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা প্রসঙ্গে বিভিন্ন গবেষকের বিভিন্ন মতবাদ হাজির করেছিলেন যেগুলো ইতিপূর্বেই পাবলিক পরিসরে প্রকাশিত। এটা ঠিক যে তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণে বার্গম্যানের নির্দয় ও নির্মোহ ভাবটি বজায় ছিল, যেটা তিনি সাংবাদিক হিসেবে করতে বাধ্য। তবে তথ্যের প্রতি নির্মোহ ভাব জারি রাখলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে জড়িত বাঙালী দোসরদের প্রতি যে তাঁর মোহ নেই সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯৫ সালে লন্ডনে প্রবাসী রাজাকাররা কে কোথায় আছে সে নিয়ে তৈরী গীতা সাহগালের তথ্যচিত্র “ওয়ার ক্রাইমস ফাইলে” তাঁর সক্রিয় যুক্ততা।

আদালতে ন্যায্যতার লড়াই:

lady justice
এবারে আসি জনাব ইকবালের তৃতীয় বিভ্রান্তিটির তথ্য পরিবেশনা প্রসঙ্গে। ইকবাল লিখেছেন:

“…এর পরের ঘটনাটি অবশ্য রীতিমতো কৌতুকের মতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যখন এই বুদ্ধিজীবীদের তাদের বিবৃতিকে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন তখন হঠাৎ প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর আদর্শ এবং অধিকারের জন্য বুক ফুলিয়ে সংগ্রাম করার সাহস উবে গেল এবং তারা বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলেন।”

লেখক ইকবালের এই তথ্য পরিবেশনা পুরোপুরি ভুলে ভরা। সত্য হল আদালতে এই মামলাটি নিষ্পত্তি হতে অনেক লম্বা সময় লেগেছে এবং এই লম্বা সময়ে এই পঞ্চাশজনের সকলে এক ভাবে আইনী লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন নি। অবশ্যই এটা সত্য যে এঁদের মধ্যে কেউ কেউ মহামাণ্য আদালতের কাছে “নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা” করে আদালত অবমাননার মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু এটাও তো সত্য যে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া না পর্যন্ত এই ৫০ জনের অন্ততঃ ২৩ জন ব্যাক্তি আইনী লড়াই চালিয়ে গেছেন। এবং মহামাণ্য আদালত তাঁদের যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়েই আদালত অবমাননার অভিযোগ না এনে তাঁদের অব্যাহতি দিয়েছেন।

অতএব দেখা যাচ্ছে যে পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল “৫০ জন বুদ্ধিজীবির” ওপর ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করলেন। এর ফলে নীচের প্রশ্নটি উদয় হয়:

ইকবাল কি মূলতঃ “৫০ জন বুদ্ধিজীবী” কে পাবলিকের সামনে শুধু হেনস্তাই করতে চেয়েছেন?

ইকবাল লিখেছেন, “রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা যখন গণহত্যার সংখ্যাটি গ্রহণ করে নিয়েছি এবং সে সংখ্যাটি যেহেতু একটা আনুমানিক এবং যৌক্তিক সংখ্যা (উনি সম্ভবতঃ বলতে চেয়েছন “যৌক্তিক অনুমান”)…”। অতএব – “সেই সংখ্যাটিতে সন্দেহ প্রকাশ করা হলে যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অসম্মান করা হয়…”।

আমার মনে হয় তিনি তাঁর এই শেষ বাক্যটি পুনঃলিখন করতে পারেন, সেটাই বরং তাঁর পুরো লেখাটার সাথে মানানসই হয়, এভাবে- “রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা যখন গণহত্যার সংখ্যাটি গ্রহণ করে নিয়েছি… তখন সেই সংখ্যাটিতে সন্দেহ প্রকাশ করা হলে সেটা হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতা।” যদিও সেটা তিনি লেখেননি। সম্ভবত তাঁর এখনও এতোটুকু হুঁশ আছে যে বিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে তিনি কোন প্রশ্ন উত্থাপনকারীকেই হেয় প্রতিপন্ন করতে পারেন না, খারিজ করতে পারেন না। বরং প্রতিষ্ঠিত [পড়ুন রাষ্ট্রীয়] সত্যকে প্রশ্ন করার/ পুনঃপাঠ করার সাহসী মন ও বিজ্ঞানী মাথা তৈরীর মহান ব্রত নিয়েই তিনি বিজ্ঞানী হয়েছেন, শিক্ষক হয়েছেন।

তবে, “রাষ্ট্রদ্রোহী” বললে পাঠকের মনে এই “৫০ জন বুদ্ধিজীবী” সম্পর্কে একটু আধটু সম্মান উদ্রেক হবার হয়তো সম্ভাবনা ছিল। পাঠক ভাবতেন- হয়তো এঁরা রাষ্ট্রীয় উচ্চপদস্থদের ক্ষমতার অগণতান্ত্রিক অপব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে আইনের মার-প্যাাঁচের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এঁরা “মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অসম্মান” করেছেন বললে সেই সম্ভাবনাটা আর থাকে না। যে সব পাঠক উপরিল্লিখিত তিনটি সত্য জানেন না সে সব পাঠক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা পড়ে মনে করেছেন- এই ৫০ বুদ্ধিজীবি পন্ডিত হতে পারেন, কিন্তু নীতি-নৈতিকতার ধার ধারেন না।

আসলে ফ্যাসাদটা কোথায়?

আলোচ্য এই মামলায় আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া একজন হিসেবে এখানে আমি নিজের একটু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা পাঠকের সাথে ভাগাভাগি করতে চাই। দেখুন, যাঁরা “নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা” করে আলোচ্য মামলাটি থেকে রেহাই পেয়েছেন তাঁদের আচরণ আমার কাছে কৌতুককর মনে হয়নি, যেমন মনে হয়নি “নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা” না করে আমি কোন বীরের মত কাজ করেছি। বরং আদালতে এই মামলাটি চলার সময় আমি এবং আমার পুরো পরিবার “মুক্তিযুদ্ধের শত্রু” হিসেবে সামাজিকভাবে অপদস্থ হবার আতঙ্কে ছিলাম।

মামলা চালানোর জন্য দামী উকিলের জন্য মোটা অংকের টাকা যোগাড় করা আমার জন্য সহজ ছিল না, কিন্তু টাকার অভাবের চেয়েও তখন যে কারণে নিজেকে অসহায় লাগতো সেটা হল সংবাদ মাধ্যমগুলো যেভাবে আমাদের মামলাটিকে পাঠকের কাছে পরিচিত করাতো। মামলাটির আসল ইস্যু (চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা) উপেক্ষা করে খবরের কাগজগুলো মামলাটির খবর পেশ করতো “ডেভিড বার্গম্যানের মামলা” বলে। শুনানীর বিবরণ পরিবেশন করতো এমনভাবে যেখানে বিশেষ করে উল্লেখ করা হত আদালতে কিভাবে আমাদের অপদস্থ করা হচ্ছে। এবং এই পরিবেশনে সেন্সর করা হয়েছে কিভাবে এই মামলাটির উসিলায় মহামাণ্য আদালতের সাথে কিছু সাধারণ নাগরিকের একটা সংলাপ হয়েছে। এই সংলাপের সবচেয়ে বড় অর্জন: বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিকও যে মহামাণ্য আদালতকে প্রশ্ন করতে পারে, তার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারে সেই অধিকারটুকুর খবর জানা।

কিন্তু সংবাদপত্রগুলোর (সম্ভবত স্বপ্রনোদিত) সেন্সরশীপের কারণে পাঠক বঞ্চিত হলেন চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইস্যুতে তৈরী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই ইতিহাসটি জানা থেকে। ফলে সম্ভাব্য আদালত অবমাননা থেকে অব্যাহতি পাবার পরও আমাদের উত্যক্ত করা হয়েছে। পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে পাঠক কমেন্টে, ফেসবুকে অনেক পাঠক তখন কটাক্ষপূর্ণ ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে গেছেন, এবং তাদের টার্গেট ছিল বিশেষ করে দুজন।

১. মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত প্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলো মূলত ট্রান্সন্যাশনাল ঔষধ বেনিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করতে “তৃতীয় বিশ্বে” মোড়লগিরি করে তাদের রাহু থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে রাষ্ট্র যেন একটি স্বাধীন ঔষধ ও স্বাস্থ্যনীতি করতে পারে সে জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। স্বাস্থ্য সেবাকে সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে আনার জন্য তাঁর কর্মসূচীর তালিকা দীর্ঘ। আর এই কাজ করতে গিয়ে তিনি শাসক-শোষক শ্রেণীর হামলার শিকার হয়েছেন অনেকবার। যেমন, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলে (মানে ১৯৮০ এর দশকে) তাঁর স্বস্তা ঔষধ তৈরীর কারখানায় আগুন দেয়া হয়েছে, এমনকি খুন করা হয়েছে, আক্রমন করা হয়েছে গ্রামে গঞ্জে কর্মরত গণস্বাস্থ্যের কয়েক ডাক্তারকে/স্বাস্থ্য-কর্মীকে।

Anu Photo

প্রফেসর আনু মুহাম্মাদ। জাতীয় জাদুঘরের সামনে ২০১৩ সালে তাঁর জন্মদিনের শুভেচ্ছা হিসেবে  পাওয়া একমুঠো কদমফুল উপহার সহ বন্দি হয়েছেন তাসলিমা মিজি বহ্নির ক্য়ামেরায়

২. প্রফেসর আনু মুহাম্মদ। ইনি ১৯৯০এর প্রথম দিকে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের একজন অনবদ্য পন্ডিত এবং এ’দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তিকামী অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সংগঠক। একদিকে একাডেমিক পরিসরে তিনি বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠীর উন্নয়ন (পড়–ন সর্বনাশা) দর্শন ও তার সাথে বিশ্বব্য়াংক, আইএমএফ এর মত আন্তর্জাতিক মোড়ল সংগঠনগুলোর যোগাযোগ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বিশ্লেষণ করে গেছেন। অন্যদিকে পাবলিক পরিসরেও তিনি এগুলো নিয়ে গণমানুষের সাথে আলাপ করেছেন, তাদের সংগঠিত করেছেন যেন জনগণ তাদের নিজেদের সর্বজন (কমন/পাবলিক) সম্পত্তি ও সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস, কয়লা, বন্দর এগুলো রক্ষা করতে নিজেই হুঁশিয়ার ও সোচ্চার হয়।

চলমান এরকম কিছু আন্দোলন উল্লেখ করছি : ক) পাবলিকের প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাকে দেউলিয়া করে বহুজাতিক তেল কোম্পানীগুলোর (যেমন শেল, শেভরন, কেয়ার্ণ ইত্যাদি) কাছে বাংলাদেশের তেল ও গ্যাস সম্পদ ইজারা দিয়ে আবার সেই তেল-গ্যাসই রাষ্ট্রের ডলার রিজার্ভ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ক্রয় করা- এই চলমান চক্রাকার সর্বনাশ সম্পর্কে গবেষণা ও জনগণকে সেটা জানানো এবং সরকারকে নজরদারির মধ্যে রাখা। খ) সাবসিডাইজ্্ড মূল্যে গ্যাস ও বিনামূল্যে কারখানা তৈরীর জমি সরবরাহ করে ভারতীয় কোম্পানী টাটাকে বাংলাদেশে স্টীল ইন্ডাস্ট্রি করতে দেয়ার পাঁয়তারা বন্ধ করা; এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দিলে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ স্টীল ইন্ড্রাস্ট্রিকেই পরোক্ষভাবে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হত। গ) পুরো উত্তর বঙ্গকে মরুভূমি বানানোর ও লাখ লাখ স্থানীয় মানুষকে বাস্তুহারা ও উৎপাদনের উপায় থেকে উৎখাত করার প্রকল্প “ফুলবাড়ি উন্মুক্ত কয়লা খনি প্রকল্প” প্রতিহত করা। ঘ) বাংলাদেশের সর্বশেষ ও একমাত্র বনাঞ্চল সুন্দরবনের অস্তীত্বের জন্য হুমকী “রামপাল কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র” সম্পর্কে জনগণকে হুঁশিয়ার ও সোচ্চার করা ও এই প্রকল্প বাতিলের জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা।

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখাটি পড়লে মনে হয় তিনিও কটাক্ষপূর্ণ ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যকারীদের মতই, যারা ইতিহাস বিস্মৃত এবং শুধুমাত্র সংবাদপত্রের সাম্প্রতিক খবর পরিবেশনা ও বিশ্লেষণ গ্রহণ করেন এবং প্রশ্নাতীত হিসেবেই গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালী জাতীয়তাবাদ অগণতান্ত্রিক বা এক্সক্লুশনারী ছিল না:

দেখুন, দুনিয়াতে হাল আমলের (মাত্র ১৫০ বছরের মত পুরোনো) জাতীয়তাবাদের উত্থান ও জাতি-রাষ্টের আবির্ভাব নিয়ে যেসব পন্ডিত ব্যক্তিরা (যেমন বেনেডিক্ট এন্ডারসন, আরনেস্ট গেলনার) তত্ত্ব দিয়েছেন তারা বলেন যে দুনিয়ার সব জায়গায় একই পরিস্থিতি ও প্্েরক্ষাপটে জাতীয়তাবাদ গজিয়ে ওঠেনি, যদিও এটা মোটামুটি সকলের মধ্যে কমন যে জাতীয়তাবাদ মূলত গজায় সমাজের মধ্যবিত্ত ও এলিট সার্কেলেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাস নিয়ে বলতে গিয়ে ঐতিহাসিক ভেন সেন্দেল বলেন, এমনকি ১৯৩০ সালের দিকেও বাংলাদেশ নামের একটি জাতি-রাষ্ট্র আবির্ভূত হবে এমন কল্পনা কেউ করেনি এবং মাত্র ১৯৫০ সালের দিকেই বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনাটির আলামত দেখা যেতে থাকে।

আরো লক্ষ্য করুন, যখন বৃটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হয়ে অখন্ড ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুই দুটি জাতি রাষ্ট্র হল তখন ধর্ম ভিত্তিক দ্বিজাতি তত্ত্ব এই অঞ্চলে চাগিয়ে উঠেছিল। ইকবাল নামের এই অঞ্চলের একজন দার্শনিক তত্ত্ব দেন যে হিন্দু ও মুসলিম নাকি দুইটি আলাদা জাতের (স্পিসিজ) মানুষের সম্প্রদায়। দেশভাগের সময় এই দ্বিজাতি তত্ত্ব কি ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গা, সহিংসতার ক্ষেত্র তৈরী করেছিল সেটা ঐতিহাসিকরা লিপিবদ্ধ করেছেন।

এবারে দেখুন, পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে পূর্ব-পাকিস্তানের (বাংলাদেশের তৎকালীন নাম) মুক্তি চাওয়ার সময় কিন্তু “আমরা সবাই মুসলমান/এক জাত তাই একসাথে থাকতে হবে” এই ধর্মভিত্তিক জাতি তত্ত্ব অতিক্রম করে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ভিন্ন চেহারা নিতে শুরু করে। শুধুমাত্র উর্দূ পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা হবে এরকম অগণতান্ত্রিক বা এক্সক্লুশনারী রাষ্ট্রীয় নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেই কিন্তু বাঙালী জাতীয়তাবাদের আবির্ভাব।

Muktijuddho poster

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাঙালী জাতীয়তাবাদী পোস্টার যুক্ত করেছে নারীদেরও।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যে পোষ্টারগুলো ও গানগুলো বাঙালী জাতীয়তাবাদ গঠনে মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশী আবেদন তৈরী করেছিল সেগুলো লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই সেগুলো কিন্তু এক্সক্লুশনারী ছিল না, এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ জনগণকে এক্সক্লুড করে জাতি বিদ্বেষী আদর্শকে আশ্রয় করে বাঙালী জাতীয়তাবাদ দানা বেঁধেছে এমন বলা যাবে না। বরং জনপ্রিয় পোস্টার গানে আমরা দেখি যে সেগুলো পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের মধ্যকার নানা বৈচিত্র ইনক্লুড করতেই উদ্যোগী ছিল। যেমন, “বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালী” পোস্টারটি, “ছোটদের বড়দের সকলের, চাষা আর মুটেদের মজুরের, গরীবের নিঃস্বের ফকিরের, আমারই দেশ সব মানুষের” গানটি। অবশ্যই স্বীকার করতে হবে বাঙালী ছাড়া এই ভূখন্ডে বসবাসকারী অন্য জাতের মানুষদের কিভাবে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ইনক্লুড করা হবে সেই নিয়ে তখনকার চিন্তাভাবনায় দূরদর্শিতার ঘাটতি ছিল। কিন্তু এটা তো সত্য যে পূর্ব-পাকিস্তানের সকল জাতির মানুষই তখন পাকিস্তার রাষ্ট্র থেকে মুক্ত হয়ে নতুন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্নকে আপন ভেবেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাঙালী জাতীয়তাবাদ যেভাবে গঠিত হয়েছিল সেখানে কাউকে যদি এক্সক্লুড/ডিমোনাইজ করা হয়ে থাকে তো সেটা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সামরিক শাসকদের। যেমন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি (স্বৈর-শাসক) জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে জানোয়ার/হায়েনার সাথে তুলনা করা হয়েছিল তার শাসনের অগণতান্ত্রিক গোঁয়ার্তুমিকে ফুটিয়ে তুলতে। পাকিস্তান আর্মিকে পাক-হানাদার বাহিনী বলে সবসময় বর্ণনা করা হয়েছে কারণ তারা বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে নিজ নাগরিকদের রক্ষার বদলে নিজেরাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিজ দেশের নিরীহ নাগরিকদের ওপর।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদের মতাদর্শে মুক্তির এই চেতনাটি কিন্তু আমাদের (মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মদের) বিস্মৃত হলে চলবে না। যেমন বিস্মৃত হলে চলবে না যে আমাদের সেই মুক্তিযুদ্ধকেই সারা বিশ্বের যুদ্ধ বিরোধী ও মুক্তিকামী তরুনরা (এমনকি খোদ পশ্চিম-পাকিস্তানীরাও) তখন সমর্থন করেছিল, এমনকি কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিল।

এখন, এই সময়ে এসে একজন বৃটিশ নাগরিক যদি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের তালাশে, তাদের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে মনোযোগী হন সেটাকে সমর্থন না করাটা মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক স্পিরিটের সাথে যায় কি?
অথচ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কতগুলো ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে “৫০ জন বুদ্ধিজীবির” চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক আন্দোলনটি পুরোপুরি খারিজ করে গুরুত্ব দিয়েছেন যে ডেভিড বার্গম্যান “আমাদের লোক নয়”। তিনি লিখেছেন:

“সাদা চামড়ার প্রতি আমাদরে দশেরে অনকে বুদ্ধিজীবির এক ধরনরে দাসসুলভ আনুগত্য আছে। বছরখানকে আগে মুক্তযিুদ্ধে শহীদ মানুষরে সংখ্যা নিয়ে এক সাংবাদকিরে উক্তরি জন্য তাকে আর্ন্তজাতকি অপরাধ আদালত শাস্তি দয়িছেলিনে, এ দেশে এ রকম কিংবা এর কাছাকাছি ঘটনা অনেকবার ঘটেছে কিন্তু কখনোই আমাদরে বুদ্ধিজীবিরা সেটা নিয়ে ব্যস্ত হননি। কিন্তু সম্ভবত এবারের মানুষটি সাদা চামড়া হওয়ার কারণে একজন নয়, দু’জন নয়; ৫০ জন বাংলাদেশী বুদ্ধজীবি তার পছেনে সারবিদ্ধভাবে দাঁড়য়িে গেলেন। ”

আচ্ছা, “সব সাদা চামড়া” কি এক? মানুষ তো রোবট নয়। “সাদা চামড়াদের” মধ্যে যেমন ট্রান্সন্যাশনাল সংগঠন ও পুঁজির লবিইস্ট আছেন যারা দেশে ঢুকে দেশের উন্নয়ন নীতিকে সর্বনাশের নীতিতে রূপান্তরিত করছেন তেমনি সেটা ঠেকানোর মত, প্রতিবাদ করার মত মানুষও তো “সাদা চামড়াদের” মধ্যে রয়েছে। আচ্ছা বাংলাদেশের শাসক গোষ্টীর মানুষগুলো তো আমাদেরই দেশী লোক কিন্তু তারা কি সবসময় আমাদের স্বার্থ আমল দিচ্ছে?

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাগাড়ম্বর ও সাধারণ মানুষের অ-গ্রন্থিত অভিজ্ঞতা:

ইকবাল ভেবেছেন “৫০ জন বুদ্ধিজীবি” খালেদা জিয়ার “শহীদের সংখ্যা” নিয়ে বাগাড়ম্বর মূলক রাজনৈতিক বক্তৃতা চিনতে অক্ষম? আমি তো মনে করি আক্কেল আছে এমন যে কোন নাগরিক আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র মত বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি/নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার বেশ ভালই বোঝেন।

আমার জন্ম ১৯৭৪ এ, স্বাধীন বাংলাদেশে। দেশেই আমার লেখাপড়া/দেখাশোনার শুরু। সেই সূত্রে আমার জানা, যে সব বাহাদুররা (পড়–ন এলিট) বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন এবং আছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে বরং বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের, রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অবদান লিপিবদ্ধ ও স্বীকৃতি দিতেই বেশী আগ্রহী ছিলেন। স্বাধীন দেশ মানে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাবো, শাসক শ্রেণীর জুলুম থেকে মুক্তি পাবো- সাধারণ মানুষের এই সব স্বপ্ন স্বাধীনতার পরপরই ভেঙ্গে দিয়েছে স্বাধীন দেশের ক্ষমতার গদিতে বসা দেশীয় এলিটরা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় গরীব/সাধারণ মানুষের কি অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা পর্যন্ত বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবার উপক্রম।

Womens-role-in-Liberation-War

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটি ছবি। আলোকচিত্রী অজানা

ইকবালের বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন (তাঁর প্রতি আমার সালাম)। ইকবাল লিখে গেছেন সেই কাহিনী। কিন্তু বাংলাদেশে যারা লেখা পড়া জানেন না, বা লেখাপড়া জানলেও যাদের এমন কোন খুঁটির জোর নেই যে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অভিজ্ঞতাগুলো লিখে সেটা ইতিহাসের মত উচ্চস্থানে বসাবেন তাদের কি আমরা ভুলেই যেতে থাকবো? কিসের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ৭ কোটির অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের, অভিজ্ঞতার, স্বপ্নের মূল্য প্রতিনিয়ত বাগাড়ম্বর দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে দেখতে থাকবো?

আমি তো মনে করি এই নিষ্ক্রিয়তাই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সাথে, বীরাঙ্গনাদের সাথে, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে, সে সময়কার শরনার্থীদের সাথে, যুদ্ধের ভেতর দিয়ে পাওয়া প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতার সাথে বেঈমানী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয়তা খুব জরুরী। আর স্বাধীনভাবে চিন্তা ও মত প্রকাশ করার পরিবেশ তৈরীর আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিকামী সক্রিয়তা বৈ কি!



Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ

Tags: , , , ,

4 replies

  1. জেনে শুনে মিথ্যা বলা ও সত্য লুকানো দুটিই গুরুতর অপরাধ। শ্রদ্ধা রেখেই বলতেছি জাফর ইকবাল স্যার তার লিখায় মিথ্যা তথ্য দেন না তবে জেনে শুনে সত্য লুকান। সত্য লুকিয়ে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠিত করতে চান অপরের মাঝে। উনার এই চালাকিটা সবাই সব সময় ধরতে পারে না। তাই উনি যা বলেন বা লিখেন সেটা অনেকেই বিশ্বাস করে বসেন ও প্রচণ্ড আকর্ষণে চিরতরে ব্ল্যাক হোল নামক মহাকর্ষীয় বস্তুর মতো জাফর ইকবাল নামক কথা সাহিত্যিকের কথার অতল গহ্বরে ঢুকে পড়েন যা থেকে কোনদিনও বেড় হয়ে আসতে পারেন না। বেড় হয়ে আসার জন্য যে পরিমাণ তথ্য উপাত্ত যোগাড় করে পড়তে হয় তা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন এর সময় উপাচার্যের কার্যালয় বা বাসভবন অবরোধ করলে সেটা অপরাধ হয় কিন্তু উনি বেমালুম ভুলে যান তার নেতৃত্বে শাবিপ্রবির শিক্ষকদের একটা অংশ কতবার, কত দিন শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরোধ করে রেখেছিলেন, কতবার উপাচার্যকে সিন্ডিকেট বা একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করতে দেন নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নৈতিকতা চর্চার আহবান জানানোর পূর্বে উনি নিজেকে প্রশ্ন করতে ভুলে যান যে তিনি নিজেই নৈতিক ভাবে সৎ কি না?

  2. I really appreciate your writings from the core of my heart. Patriotism does not mean to say ‘YES’ to the state power, most of the time patriotism means say ‘NO’ to the state power and lead the movement against all sorts of odds. Thanks.

  3. ভাল পর্যবেক্ষণ ।

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: