নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক ইউটোপিয়া, সন্ধ্যা ৭.২১, ৮ মার্চ, ২০১৬ — ইব্রাহীমপুর এলাকার শ্রমিক নারী-পুরুষ জনিয়ার (১৫) দাফন শেষে কাফরুল থানা দখল করে রেখেছে। তারা গৃহপরিচারিকা জনিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চায়। এদিকে সকল নারী সংগঠন তাঁদের নারী দিবসের গতানুগতিক সভা-সমাবেশ স্থগিত করে, জরুরী ভিত্তিতে কাফরুল থানায় জড়ো হতে শুরু করছে। এই মাত্র দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি কাফরুলে আন্দোলনকারী জনতার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা জরুরী ভিত্তিতে নজরুল ইসলাম, এ্যাসিসটেন্ট ইন্সপেক্টর জেনারেল, ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ (মিডিয়া) সাথে দেখা করেন। তারা জানতে চান, পুলিশের গাফিলতি ও এখনও অভিযুক্ত পরিবারের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। সাক্ষৎকারকালে, তারা আরও জিজ্ঞেস করেন যে, ধর্ষণকারী প্রভাবশালী পরিবারের হওয়ার কারণেই কি পুলিশের এই গড়িমসি? এই সময়ে ইসলাম, নারী সাংবাদিক সমিতির প্রতিনিধিদের সুবিচারের আশ্বাস দেন। জবাবে প্রতিনিধিবর্গরা জানান, তাঁরা আশ্বাসের জন্য আসেননি, ওয়াকিবহাল করতে এসেছেন যে, নারী সাংবাদিক সমাজ জনিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকা-কে সাধারণ আরও একটি কেস হিসেবে দেখছে না। উপস্থিত সাংবাদিকরা জানায়, এই সময় নারী সাংবাদিকদের সাথে ইসলামের বাকবিতন্ডা হয়।
গতকাল সকালে (৭মার্চ ২০১৬) মিরপুরের কাফরুলে জনিয়া বেগমকে (১৫) ধর্ষণের পরে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। জনিয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও পরিচালক মো. আহসান হাবীবের বাসায় ছুটা কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করত। তাঁর মা ফুলবানু এই পরিবারে কাজ করতেন। গত কয়েকদিন মায়ের পরিবর্তে জনিয়া কাজে যাচ্ছিল। রোজদিনের মতন সকাল বেলা ইব্রাহিমপুরের ভাড়া বাড়িতে সবার কাছে বিদায় নিয়ে জনিয়া ঘর থেকে বের হয়। সকাল ৭টায় ন্যাম গার্ডেন সরকারী অফিসার্স কোয়র্টারে কাজে এসে সে জানায়, তার মা আর এই বাড়িতে কাজ করবে না, মায়ের বদলে অন্য একজন নারীকে সে কাজে এনে দেবে।
তার দুই ঘন্টা পরে, আনুমানিক বেলা ৯টার দিকে কোয়ার্টারের দাড়োয়ান জনিয়ার লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে এসে, কাফরুল থানার এস আই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন, সেখানে লাশের মুখ ওড়না দিয়ে বাঁধা, রক্তাক্ত, স্তনের নীচে কালো দাগ থাকার উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। জনিয়ার বাবা, রিকশা চালক গনি মিঞা জানান, তা সত্ত্বেও জনিয়ার মায়ের ধর্ষণ ও হত্যা মামলা গ্রহণ করেননি পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ অগ্রাহ্য করে পুলিশ নিজে বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় ঢাকা শহরের নারী সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্থানীয় জনগণ ও নারী সমাজ অবরূদ্ধ করে রেখেছে। ইব্রাহীমপুর থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত মূল সড়কগুলোতে নারী দিবসের প্রতিবাদী মিছিলের কারণে যান চলাচল ব্যাহত আছে, তবে অফিসফেরত মানুষ বিরক্ত না হয়ে শ্লোগানে গলা মিলাচ্ছেন – নারী দিবস দিচ্ছে ডাক জনিয়া ধর্ষণকারী নিপাত যাক। ধর্ষণকারীর আশ্রয়, কাফরুল থানা ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও। ধর্র্ষণকারী যেই হও, (মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বা সচিবালয়), শাস্তি তোমায় পেতেই হবে।
সব মিলিয়ে এবারের নারী দিবসে এক অন্যরকম আবহ তৈরী হয়েছে ।
[মূল সংবাদের জন্য দেখুন বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদন কাফরুলে গৃহকর্মীর নৃশংস মৃত্যুঅপমৃত্যুর মামলা করে ‘পানি ঘোলা করছে পুলিশ’ – সায়দিয়া গুলরুখ]
Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ, যৌন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ
Leave a Reply