রওশন আরা রুশো: “আজ বুর্জোয়া এক দলের কাঁধে স্বৈরাচার আরেক দলের কাঁধে রাজাকার বসে আছে।”
এই বছর স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসে আমরা ঠোটকাটার পক্ষ থেকে স্বৈরাচার সরকার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও এই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা নিয়ে একটা আলাপ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা কমরেড মোশরেফা মিশুর সাথে আলাপ করেছিলাম।আলাপটি চালিয়ে নেয়ার জন্য আন্ত্রজাতিক নারী দিবসে আমরা রওশন আরা রুশো (সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সদস্য, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাসদ ঢাকা মহানগর কমিটি সাথে স্বৈরাচার সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর অভিজ্ঞতা, এই আন্দোলনে নারীর ইতিহাস এবং স্বৈরাচার সরকারের বিচারের প্রশ্নটি ধামাচাপার পরার ধারিবাহিক তত্পরতা নিয়ে আলাপ করি। সময়াভাবে তিনি আমাদের সংক্ষেপে একটি লিখিত সাক্ষাত্কার দিয়েছেন —
ঠোঁটকাটা: এই বছর স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসে আমরা ঠোটকাটার পক্ষ থেকে স্বৈরাচার সরকার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও এই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা নিয়ে একটা আলাপ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা কমরেড মোশরেফা মিশুর সাথে আলাপ করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আপনার কাছে এই প্রশ্নগুলো রাখছি। এই আন্দোলনের সময় আপনি কোথায় কিভাবে সংযুক্ত ছিলেন, কি ভাবে রাজনৈতিক কাজ পরিচালনা করতেন?
রওশন আরা রুশো: ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন জারির সময় আমি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সক্রিয় কর্মী হিসেবে ঢাকা মহানগরে কাজ করি। একই সাথে বাসদ এর নারী সংগঠন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সংগঠক হিসেবে কাজ করি। সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে নারীদের এবং ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করার জন্য বাসদ সহ ১৫ দলীয় জোট পরবর্তী ৫ দলীয় জোটে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে সামিল ছিলাম। একই সাথে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজকে সংগঠিত করতে ১৭ টি নারী সংগঠনের সম্মিলিত জোট ‘ঐক্যবদ্ধ নারী সমাজ’ এর কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করি।
ঠোঁটকাটা: অাপনার নারী কমরেডদের কথা বলুন—
রওশন আরা রুশো: স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আমাদের দল বাসদ ও নারী সংগঠনের নারী কমরেডরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিটি মিছিল, সভা-সমাবেশ, হরতাল-ধর্মঘট-অবরোধ এ জীবন বাজি রেখে অংশ নিয়েছে। বেশ কয়েকজন নারী কমরেড সামরিক স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং কারাভোগ করেছেন।
ঠোঁটকাটা: এই ছবির সামনের সারিতে যে নারী আছেন, তাকে কি আপনি চিনতেন?
রওশন আরা রুশো: ছবিতে যে নারী রয়েছেন সম্ভবত তিনি সেই সময়ের জাসদ ছাত্রলীগের নেত্রী শিরিন আক্তার।
ঠোঁটকাটা: অন্য সকল সংগ্রামের ইতিহাসের মতন এই ক্ষেত্রেই দেখা গেছে নারীর ইতিহাস আড়ালেই থেকে গেছে, কিন্তু আলোকচিত্র ভিন্ন কথাবলে…
রওশন আরা রুশো: পুঁজিবাদী সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারনেই অন্য সকল সংগ্রামের মতোই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নারীর ভূমিকা ইতিহাসের আড়ালেই থেকে গেছে।
ঠোঁটকাটা: আজকে যখন স্বৈরাচারী এরশাদ, ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য এমন কোনো নির্যাতনের কৌশল নেই যা সে ব্যবহার করেনি, সেই এরশাদকে সরকারের অংশ হিসেবে সংসদে বসতে দেখি, তখন মনে হয় ল্যাটিন আমেরিকাতে কিন্তু স্বৈরাচারের বিচারের দাবির আন্দোলন হয়েছে, আমাদের এখানে আমরা এরশাদকে দিপালী, জাফর, জয়নাল, কাঞ্চনের হত্যাকারীকে আদলতে আনতে পারলাম না কেন? আপনার কি মনে হয়?
রওশন আরা রুশো: এটা খুবই লজ্জার যে আন্দোলন করে, জীবন দিয়ে যে স্বৈরাচারের পতন ঘটালো সংগ্রামী জনগণ, ক্ষমতার মসনদ দখল, টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধনিকশ্রেণীর রাজনৈতিক দল সমূহ সেই পরাজিত স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলিয়ে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে ক্ষমতার অংশীদার করেছে।
এটা শুধু স্বৈরাচারী এরশাদের বেলাতেই নয়, ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতি যে পাকিস্তানীদের দোসরদের পরাজিত করেছিল সেই রাজাকার-আলবদরদেরও শাসক বুর্জোয়া শ্রেণী আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ক্ষমতার অংশীদার করেছে। সে কারণে আজ বুর্জোয়া এক দলের কাঁধে স্বৈরাচার আরেক দলের কাঁধে রাজাকার বসে আছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে, স্বৈরাচার-রাজাকারের বিচার করতে এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীর ভূমিকার স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন পুঁজিবাদী শোষণমূলক-পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিবর্তন করে শোষণ-বৈষম্যহীন সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর এ লক্ষ্যে সকল বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা আজ জরুরী।
[ঠোঁটকাটার জন্য সাক্ষাত্কারটি সংগ্রহ করেছেন শহিদুল ইসলাম সবুজ]
Categories: আন্দোলন বার্তা, কথোপকথন
Leave a Reply