দেশের সবকটি পাবলিক হাসপাতালের মত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেও তিল ধারণের জায়গা নেই। এরই মধ্যে আমি ও আমার দুই কমরেড বাঁশখালীর আহতদের দেখতে গেলাম। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ঘুরে জানা গেল হাসপাতালে ১৫ জনের মত আহত ভর্তি রয়েছেন কিন্তু পুলিশ যেহেতু হাসপাতালে এসে আহতদেরই গ্রেফতার করছে তাই ভয়ে কেউ আর নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে না। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে পড়েন এরকম অনেক ছাত্র যাদের বাড়ি বাঁশখালী তারা আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে তেল-গ্যাস-কয়লা খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকে প্রতিবাদ সমাবেশে, মিছিলে যোগ দেন। এরাও গ্রেফতারের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছে, আহতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারছে না।
হাসপাতালের পাঁচতলার পুরুষ ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরে শুয়ে থাকা অবস্থায় প্রথমে আমরা যাকে পেলাম তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পায়ে। তাঁর বাবা ছিলেন পাশে আর ছিল দু’জন পুলিশ। হাতকড়াতে লম্বা একটা দড়ি লাগিয়ে ধরে রেখেছে তারা আহত সেই মানুষটিকে। আহত লোকটির বাবা বললেন যে এ’টি তার ছোট ছেলে। ছেলেটি চায়ের দোকান চালায় আর চালায় তিন সন্তান নিয়ে একটা সংসার। তিনি আরও বলেন ছেলেটি কোন মিছিলে যায়নি। মিছিলে গেলে দোকান কে চালাবে?- উল্টো প্রশ্ন করেন তিনি।
পরের জনের দেখা মেলে। এবার আমরা পুলিশ দেখেই এগিয়ে যাই। এই ব্যক্তির গুলি লেগেছে মুখ গহ্বরে, অপারেশন করেছে ডাক্তার কিন্তু রক্ত পড়ছে এখনও, কথা বলতে পারছেন না। তাঁর বড় ভাই রক্তপাত থামাতে তুলা দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন যে তিনি কিছুই জানেন না ঘটনার। তিনি নিজে লবন চাষী, ঘটনার সময় ক্ষেতে ছিলেন। আর তার ভাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। এখন এক চাচা আর আত্মীয় স্বজন মিলে চিকিৎসার টাকা যোগাড়ে ছুটোছুটি করছেন।
এরপরের জন কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন আজকেই তাকে হাতকড়া পরিয়েছে। তার কন্ঠনালীতে গুলি বা ছররা লেগেছিল সেটা অবশ্য বের করা হয়েছে। তিনি কৃষক-দিনমজুর।
সবশেষে আমরা ক্যাজুয়ালটি বিভাগে যাই। দেখা হয় দুজ’ন আহত ব্যক্তির সাথে। আহত ব্যক্তির একপাশ ছররাতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। ডাক্তাররা কোন অপারেশন করেনি। অপেক্ষা করছেন তিনি। এগিয়ে এলো তার ভাগনে, দু’চোখ তার ছানি পড়া। জানালো যে তারা মাটি কেটে ভাত খায়। পুকুরের মাটি কাটার কাজ করছিলো, মজুরিটা পর্যন্ত পায়নি তার মধ্যে এই অবস্থা। পাশের বেডের আহত ব্যক্তির ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছিলো। আমরা পত্রিকায় খবর পড়ে তাকে দেখতে এসেছি বললে তিনি শুধু হাত নেড়ে ধন্যবাদ দেন।
খবরে প্রকাশ, ৪ এপ্রিল ২০১৬ বিকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের গ্রামবাসীদের ওপর পুলিশ গুলি করেছে। একজন নারী সহ মোট ৫ জন খেটে খাওয়া মানুষ সেই গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা বলছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য। পুলিশ নিজেই মানুষ মেরে উল্টো ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও তিন হাজার গ্রামাবসীর বিরুদ্ধে এখন মামলা দায়ের করেছে।
কেন পুলিশের গুলি?
পত্রিকাতে প্রকাশ বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপ আর চীনা এক কোম্পানী মিলে প্রায় ১২২৪ মেগাওয়াটের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। প্রকল্পে বিনিয়োগ হবে ২.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার আসবে চায়না থেকে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে এদের ৬০০ একর জমি লাগবে। কয়লা পুড়ালে পরিবেশের ক্ষতি হবে এবং ফসলের জমি হারিয়ে যাবে এই বিবেচনায় গ্রামবাসীরা এই বিদ্্যুৎকেন্দ্রটির বিরোধিতা করছেন।
Categories: আন্দোলন বার্তা
Leave a Reply