উদিসা ইসলাম
গল্প দিয়ে শুরু করি।যেকোন দিবসকে ঘিরে প্রতিবেদন তৈরী করার একটা রেওয়াজ পত্রিকায় আছে। তেমনই কোন এক মা দিবসে অফিসে থেকে মা দিবসে কী করতে চাই বা তারা কী চান তা নিয়ে প্রতিবেদকদের সভায় আলাপকালে কোন কোন এক পুরুষ সহকর্মী নিজে নিজেই বলে ওঠেন: এমন একজনকে দিতেসে যে নিজে মা না। গল্প এখানেই শেষ। ওই সহকর্মীর কথা প্রথম যেটা মনে হলো: সহকর্মী আমাকে বেশ্যা ভাবে নিশ্চিত। কারণ আমি প্রতিনিয়ত যৌনকর্মীদের নিয়ে প্রতিবেদন করি। তারপর মনে হলো উনি আমাকে হয় মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকার যেকোন একটা ভাবেন। কারণ আমি ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রতিবেদন করি।
শিরোনামে ফিরে যাই। মা হওয়া কী মুখের কথা শুনতে শুনতে কৈশোর কেটেছে। যেকোন ঘটনায় উদ্ধার পাওয়ার পর, মা ঘাড়ে দোষ নিলে একথা বলতেন মাঝে সাঝে।
আমি বলতাম: কেন? মুখের কথা না কেন? কী করতে হয়?
মা গল্প বলতেন, মায়েদের সব সহ্য করে নিতে হয়।
না নিলে? না নিলে ভাল মা হওয়া যায় না।
কিন্তু সে তো মা হয়েই গেছে?
জন্ম দিলেই মা হয় না। মা হওয়া অন্য বিষয়।
আমার হেডমিস্ট্রেস মা সেদিনে সময়ের অভাবে বা ঠিক ‘তাত্ত্বিক’ না হওয়ার কারনে বাকী আলাপ এগোয়নি কিন্তু এইচএসসি প্রথম বর্ষে আমি বুঝে গেছি: মা অন্য জিনিস। পেটে না ধরেও মা হওয়া যায়। মা অনুভূতির নাম। নাড়ীর সম্পর্ক কথাটা সমাজ তৈরী করে দেয়, সেই টান অন্য কোথাও হতে পারে: কাগজের সাক্ষরের সম্পর্কের বাইরের যেকোন সম্পর্কে।

বাংলার মায়েরা মেয়েরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা
পেটে ধরা মায়ের সংখ্যা কমুক এমন বয়ান দেওয়া আমার কাজ না। কিন্তু আজকের লেখা পুরুষদের জন্য যতটা না তারচেয়ে বেশি নারীদের জন্য। সেই নারীদের যারা মা হয়েছেন। দায়িত্বটা তাদের বেশি। ‘আমার সন্তানেরটা অন্য কেউ বুঝবে বেশি?’ প্রশ্ন তোলেন যারা তাদের বলি: বুঝতেই পারে। আপনার চেয়ে সংবেদনশীল লাফাঙ্গা কেউও বুঝতে পারে, তবে সে যেহেতু আপনার সন্তানের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিচ্ছে না তাই আপনার মনে হচ্ছে সে বুঝবে না। ফলে মা নারী যারা তাদের বুঝতে হবে, সন্তান জন্ম দেওয়ার মধ্য দিয়ে মা হয়েছেন তিনি বটে, কিন্তু মা কেবল অনুভূতির নাম, যেটা যে কেউ-ই ফিল করতে পারেন। এটা একটা সম্পর্কের নাম যেটা আপনার রক্ত, আপনার স্পন্দন থেকে বেড়ে ওঠা বটে কিন্তু এরজন্য পেটে ধরার দরকার পড়ে না। সম্পর্ক চর্চায় এধরনের সম্পর্কও সম্ভব, আমি বিশ্বাস করি।
Categories: বাংলাদেশে নারীবাদ, যাপিত জীবন
Leave a Reply