“অসুখী বিয়ে”র প্রতিক্রিয়ায়ঃ

হাবিবা নওরোজ

রেহনুমা আহমেদের লেখা “অসুখী বিয়ে, বাম ধারা ও নারীবাদ” প্রবন্ধে যে সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটার সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। আমি মূলত এই লেখাটা লিখতে প্রেরনা বোধ করেছি কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য।

(ক)

সিমন দ্য বোভোয়ার একটা বক্তব্য বাম ঘরানার মহলে বেশ প্রচলিত; “একজন নারীবাদী সংজ্ঞার্থেই বামপন্থী, তা সে নিজেকে বামপন্থী বলল কি বলল না, তাতে কিছু যায়-আসে না।” (১) বাম ঘরানার সংগঠনগুলোর মধ্যে সিমোন দ্য বুভোয়ারের এই সাক্ষাতকারটা বেশ প্রচলিত, প্রায়ই এই সাক্ষাতকারের অনুবাদটা প্রচারিত হতে দেখি। আমি নিজেও প্রথম যখন প্রথম এই অনুবাদটা পড়ি তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি! যাক! আমার নারীবাদী অবস্থানের কারনে আমি তাহলে “অতিবিপ্লবী” “ইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক” “এলিট” কিছু করছিনা! আমার ওই স্বস্তিবোধকে তখন খতিয়ে দেখার কথা মনে হয়নি। আজকে বুঝি অপেক্ষাকৃত কম জরুরী পৃথক নারী সংগঠনে কাজ করতে গিয়ে আমার চৈতন্যের যে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় আমি বিভক্ত থাকতাম তার উপরে শান্তির প্রলেপ দিয়েছিল বুভোয়ারের এই বক্তব্য। সংগঠনে আমি অবাঞ্ছিত না! আজকে কোন অস্বস্তি ছাড়াই স্বীকার করতে পারি যে আমি দ্বিধাবিভক্ত ছিলাম একটা প্রশ্নেঃ নারী হিসেবে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জরুরী নাকি শ্রমিক হিসেবে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জরুরী? দৃশ্যত সমাজতান্ত্রিক ঘরানার নারী সংগঠন করাটা আমার সব প্রশ্নের সমাধান দিতে পারেনি। গুরুতর রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা থেকে না অনেক সময়ই সমাজতান্ত্রিক নারী সংগঠনের কর্মসূচী নির্ধারণ এবং এর বাস্তবায়ন নির্ভর করতে দেখেছি ছাত্র, বা গণ সংগঠনের কর্মীদের নারীর প্রতি শুভাকাঙ্ক্ষীর মনোভাব থেকে। “একজন নারীবাদী সংজ্ঞার্থেই বামপন্থী, তা সে নিজেকে বামপন্থী বলল কি বলল না, তাতে কিছু যায়-আসে না।” এই বক্তব্যে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে যদি নারীবাদীদের বামপন্থী হবার অর্থ হয় প্যারেন্ট সংগঠনের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক স্বামীগিরি মেনে নেয়া। এই বক্তব্য প্রমান করে যে নারীবাদীরা নিজেদের বামপন্থী ঘোষণা দিয়েই কেবল মাত্র বাম ঘরানার সংগঠনে গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারেন। বোভোয়ারের এই বক্তব্য আরও ইঙ্গিত করে যে নারীবাদী চৈতন্যকে সমাজতান্ত্রিক, মার্ক্সবাদীরা একটা উপাঙ্গ হিসেবে দেখে মাত্র, এটা একটা সাব ক্যাটাগরি, সতন্ত্র্য ও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নারীর জীবনের গুরুতর প্রশ্ন না মোটেও।

নারী বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় অবিসংবাদিত নেতার উত্তর ছিল ‘মুখ্য দ্বন্দ্ব’ আর ‘গৌণ দ্বন্দ্ব’এর আলাপ। প্রখ্যাত ফরাসী সাংবাদিক অ্যালিস যিনি বোভোয়ারের সাক্ষাতকার নেন তার বক্তব্যে ফরাসী দেশেও একই উত্তর পাওয়ার কথা শোনা যায়।

“অ্যালিসঃ বেশির ভাগ বামপন্থীই উচ্চম্ন্যতাকে এমনভাবে আত্নস্থ করেছে (তুমি একসময় যেমনটি বলেছ) যে, তারা নারীবাদীদের যারা বামপন্থীদের নিজেদের অংশ হিসেবেই ভাবে , ‘পাতিবুর্জোয়া’ বা ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে গাল দেয়। তারা লিঙ্গ দ্বন্দ্বকে একটি ‘গৌণ দ্বন্দ্ব’ হিসেবে দেখে যা ‘মুখ্য দ্বন্দ্ব’ অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণিকে বিভক্ত করে।

সিমনঃ বেচারা! তারা এটা না করে পারে না। কেননা এমনকি বামপন্থীরাও নিজেদের শ্রেষ্ঠতায় অন্ধএটা তাদের রক্তজাত, এটাও আরেকটি তথাকথিত পৌরুষের অতিকথন।” (২)

সংগঠনের একজন নারী কর্মী আমাকে বলেন শ্রমিক নারী নিজের ঘরে স্বামীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হলেও বিবাহিত থাকতে চান, কারন বিয়েটা তাকে একভাবে নিরাপত্তা দেয়। এই কথার অন্তর্নিহিত বক্তব্য শ্রমিক নারী, নারী হিসেবে সমস্যার চাইতে শ্রমিক হিসেবে সমস্যাকে জরুরী মনে করেন, মানে নারী প্রশ্ন শ্রেণী প্রশ্নের অধিনস্ত বিপরীতটা না। মারিয়া মিজের তত্ত্বায়ন অনুসারে প্রান্তিক দেশগুলোতে নারী শ্রমিকের মজুরী বৈষম্যের পেছনে রয়েছে “হাউজওয়াইফাইজেশন” বা “গৃহবধূ” হবার তত্ত্ব যা বিশ্বাস করায় যেহেতু নারী রুজি রুটির উপার্জনের মূল দ্বায়িত্বে নেই তার মজুরীও হবে কম। তার ভাষায়“পুরুষদের যদি পরিবারের রুজি রুটি উপার্জনকারী হবার দাবি, ইউনিওন করার দাবি সহ এই ফার্মগুলো নিয়োগ দিত, খুব কম করে বল্লেও তাদের মুনাফা এবং উতপাদনশীলতা বেশ কম হত। ক্লডিয়া ভন অয়েলহফের মতে তাই পুরুষ সর্বহারা নয় গৃহিণীই হোল পুঁজির সর্বাপেক্ষা কাম্য শ্রমশক্তি। পুরুষ মজুরী শ্রমিক খুব বেশি ব্যয়বহুল, বেশি ‘অনুৎপাদনশীল’ এবং বেশি অনির্ভরযোগ্য” ()  অর্থাৎ নারী হবার কারনেই বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে নারীর মজুরী, শ্রম শোষণের সুত্রপাত। তাহলে নারী হিসেবে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা কিভাবে শ্রমিক হিসেবে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা থেকে পৃথক হোল? শরীরে, মনে, লালন পালনে যে নারী তিনি তার শ্রমিক হিসেবে আর নারী হিসেবে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা পৃথক করেন কিভাবে? আদৌ কি এই দুই নিপীড়নের অভিজ্ঞতাকে বিপরীত দ্বৈততায় দাঁড় করানো সম্ভব? অন্তত শ্রমিক নারীর ক্ষেত্রে? সৌদি আরবে পাঠানো গৃহকর্মীরা যে সীমাহীন যৌন নির্যাতন আর ধর্ষণের শিকার হন তাহলে সেটা শ্রমিক প্রশ্ন থেকে বাইরে থাকবে? কেন?! এটা নারী হবার বা যোনি থাকার ফল বলে?! নারী হবার কারনেই তারা নারীদের জন্য নির্দৃষ্ট কাজগুলো যেমন গৃহকর্মী,গার্মেন্টস কর্মী, যৌন কর্মী হিসেবে নিয়োগ পান। এই শ্রমিকরা কি সত্যি মনে করেন ধর্ষণ, খুন, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, যৌন নির্যাতন, অপমান, অপহরণ, নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি পাবার আগে মজুরী বাড়তে হবে? নাকি এই নিপীড়নগুলো থেকে মুক্তি পেলে মজুরীর লড়াইয়ে তারা সর্বোতভাবে শক্তি নিয়োগ করতে পারবে? নাকি ধরে নেব এই উপমহাদেশে মধ্যবিত্ত বামপন্থী তাত্ত্বিকের যে দোষ ঐতিহাসিকভাবে ছিল এখানেও তারি প্রতিফলন ঘটছে? নিজেদের শ্রেণীজাত রক্ষণশীল, পুরুষালী ভাবাদর্শ তারা নারী শ্রমিকের ভাবাদর্শ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন? বেল হুকস, যিনি ব্ল্যাক ফেমিনিস্টদের মধ্যে অন্যতম তাঁর “ফেমিনিজম ইজ ফর এভরিওয়ান” বইতে আমেরিকান নারীর ঘরের বাইরে, অর্থ উপার্জনকারী কাজের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর সময়ে শ্বেতাঙ্গ, মধ্যবিত্ত নারীরা ঘরের বাইরে কাজের সুযোগ দাবি করেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল বাড়ির বাইরে অর্থনৈতিক কাজের সুযোগই তাঁদের মুক্তি দিতে পারে। সেই সময়ে নিম্নবিত্ত কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ইতমধ্যেই বাড়ির বাইরে নিম্ন আয়ের কাজ করতেন। তারা ঠিকি জানতেন অর্থ উপার্জনকারী কাজই নারীকে মুক্তি দিতে পারেনা। হুকস বলেন “আর্থিক সংস্থান যদি সামগ্রিক ভালো থাকার দিকে চালিত না করা হয়, তাহলে বেশি টাকার অর্থ বেশি স্বাধীনতা না।”(৪) অর্থাৎ নারী গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন বাড়লে যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্যন্য সমস্যা সমাধান হবে তেমনটা বলা যায়না।

(ক)১

নারীবাদী আন্দোলন এবং তত্ত্বায়নে কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিম্বেরলে ক্রেনশর প্রস্তাবিত “ইন্টারসেকশনালিটি” এমন একটি জরুরী অবদান যা আমাদের একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে একইসাথে চলতে থাকা একাধিক নিপীড়নকে বুঝতে সাহায্য করে। আইন বিশেষজ্ঞ কিম্বেরলে ক্রেনশ তার “ডি মারজিনালাইজিং দি ইন্টারসেকশন অফ রেস এন্ড সেক্সঃ এ ব্ল্যাক ফেমিনিস্ট ক্রিটিক অফ এন্টি ডিস্ক্রিমিনেশন ডকট্রিন, ফেমিনিস্ট থিউরি এন্ড এন্টিরেসিস্ট পলিটিক্স” প্রবন্ধে ১৯৮৯ সালে “ইন্টারসেকশনালিটি” শব্দটা অন্তর্ভুক্ত করেন। “ইন্টারসেকশনালিটি” কোন বিমূর্ত ধারণা নয় বরং ব্যক্তি কিভাবে একই সাথে বহুবিধ নিপীড়নের শিকার হন তার বিবরন। ১৯৮৯ সালে কিম্বেরলে ক্রেনশর প্রস্তাবনার পরে “ইন্টারসেকশনালিটি” ব্যাপকভাবে গৃহীত হয় কারন একটা মাত্র শব্দ কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের সাথে যুগপৎ ঘটতে থাকা বহুবিধ নিপীড়নের অভিজ্ঞতা ধারন করতে পারে। কিন্তু এটা কোন নতুন ধারণা ছিলোনা। দাসপ্রথার সময় থেকে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ইন্টারলকিং অপ্রেশনের নামে একই সাথে শ্রেণী, বর্ণ এবং লিঙ্গের বহুবিধ বৈষম্যের কথা বলে আসছেন। ক্রেনশর মতে “যেহেতু ইন্টারসেকশনাল অভিজ্ঞতা বর্ণবাদ এবং লিঙ্গবাদের যোগফল থেকে বৃহত্তর, কোন বিশ্লেষণ যেটা ইন্টারসেকশনালিটিকে বিবেচনায় আনে না তা কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা কোন বিশেষ উপায়ে অধস্তন হন তা পর্যাপ্তভাবে চিহ্নিত করতে পারেনা।” তিনি আরও বলেন “ইন্টারসেকশনালিটির বুনিয়াদি বিষয় এর স্বীকারোক্তিতে যে, ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে বহুমাত্রিক নিপীড়নের শিকার হয়না বরং একক, সমন্বিতভাবে অভিজ্ঞ হয়”(৫) ব্যাবহারিক জীবনে আন্দোলন গড়ে তুলতে এই বক্তব্যের তাৎপর্য অপরিসীম। নারীর জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রশ্নে সংগঠিত হওয়া জরুরী নাকি নারী হিসেবে মুক্তির প্রশ্নে সংগঠিত হওয়া জরুরী এই আলাপে ঘুরপাক খবার সময় ক্রেনশর তত্ত্বায়ন আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাই বলা যায় শ্রমজীবী নারীর শ্রেণী নিপীড়নের অভিজ্ঞতা আর নারী হিসেবে নিপীড়নের অভিজ্ঞতা সরল রৈখিক কোন বিষয় না এবং এদের মধ্যে কোনটার সমাধান বেশি জরুরী সেই বিবেচনার প্রশ্নও তাই হাস্যকর। নারী শ্রমিক এককভাবে নারী হিসেবে বা এককভাবে শ্রমিক হিসেবে নিপীড়িত হয়না, এই নিপীড়নগুলো যুগপৎ এবং জটিল।

(খ)

রেহনুমা ম্যাম বলেছেন “আমার কথা হচ্ছে , মোশরেফা মিশু বা কমরেড পার্বতী নিজেদের নারীবাদী বলুন আর নাই বলুন, তারা নারীর অভিজ্ঞতার যেই বিশ্লেষণ ও যুক্তি/কাউন্টার-যুক্তি হাজির করেন, তা যে কোন বিচারে নারীবাদী।”(৬) এখানে আমার কিছু কথা বলার আছে। কেবলমাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেই না পাশ্চাত্যেও নারীবাদী তকমাটা একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি এবং অর্থ বহন করে। অনেকসময়ই নারীবাদী বা “ফেমিনিস্ট”দের সেখানে “ফেমিনাজি” বলা হয়। “ফেমিনাজি” শব্দটার অন্তর্নিহিত ইঙ্গিত খুবি স্পষ্ট। যেমন মেগ লাক্সটন “স্টাডিস ইন পলিটিকাল ইকোনোমি” বইতে বলেন“১৯৬৮র সেপ্টেম্বরে, বিশেষত তরুন শ্বেতাঙ্গ নারীদের একটি ছোট দল একটি ভেড়াকে মুকুট পরিয়ে মিস অ্যামেরিকা সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রতিবাদ করে এবং একটি আবর্জনার ঝুড়িতে গার্ডল, কার্লার, লেডিস হোম জার্নাল এবং প্লেবয় ম্যাগাজিনের সংখ্যা জমা করে বানিজ্যিকভাবে নির্মিত নারী সৌন্দর্যের আদর্শের প্রতিবাদ করেন। নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদন সহ তারা ব্যাপক প্রচার লাভ করে যেটাতে ‘ব্রা বার্নিং’ বলে একটি শব্দবন্ধ ব্যাবহার করা হয়। যদিও তারা কিছুই পোড়াননি তথাকথিত ব্রা বার্নিং ইতিহাসের সাথে চলে আসতে থাকে।”(৭) এই হোল পশ্চাত্যের অবস্থা। আমাদের দেশেও কেউ যদি নিজেকে নারীবাদী দাবি করে তাহলে তার প্রত্যেকটা কাজ যতধরনের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মধ্যে দিয়ে যাবে তাতে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রায় দ্বিগুণ কঠিন হয়ে উঠতে বাধ্য। নারীবাদীর ভাবমূর্তি আমাদের দেশে একজন উগ্র, বহুগামি, মারমুখী, পুরুষ বিদ্বেষী, বিয়ে-পরিবার-প্রেম প্রত্যাখ্যানকারী, আমাদের দেশের সমাজ, সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন, পাশ্চাত্য প্রভাবাচ্ছন্ন মেয়ের চেহারা নেয়। আমি বাম রাজনীতি করা কোন মেয়েকে আজো পর্যন্ত নিজেদের নারীবাদী দাবি করতে শুনিনি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি তারা কর্মী বা নেতাদের সামনে কখনোই নিজেদের নারীবাদী বলার মত কোন বোকামি করবেননা। সংগঠনের পুরুষালী সংস্কৃতির ভিতরে তারা নিজেদের মার্ক্সবাদী বা সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী বলেও নিজেদের “জনবিচ্ছিন্ন” এবং হাস্যস্পদ প্রমান করতে চাইবেনা কোনভাবেই। বাম ঘরানার সংগঠনগুলোতে নিজেদের মার্ক্সবাদী বা সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী বলে পরিচিত হওয়াতে যে লজ্জা, হাস্যস্পদ, এলিট হবার সমালোচনা জড়িত সেটা প্রমান করে বাম ঘরানার সংগঠনে সামগ্রিকভাবে নারীবাদ বিষয়টাকে কিভাবে দেখা হয়।

(গ)

“অসুখী বিয়ে” বামধারা ও নারীবাদ বইতে আমার একটা জরুরী বিষয় অনুপস্থিত মনে হয়েছে। মিশু আপা বলেছেন “বাম ছাত্র সংগঠন করার সময় থেকে এ পর্যন্ত আমি যা দেখেছি, বাম দলগুলোর কথা বলছি, যেই নারী বুদ্ধিমান আর দেখতে ভালো, বাম পুরুষদের ভাষায়, “সুন্দরী অ্যান্ড শার্প,” তাকে বিয়ের জন্য বাছাই করা হয়।”(৮) আমি নিশ্চিত না বিয়ের প্রস্তাব আসলে বিয়ের প্রস্তাব কিনা, অর্থাৎ প্রেম বা শোয়ার প্রস্তাবকে ভদ্রলোকী ভাষায় তিনি বিয়ের প্রস্তাব বলছেন কিনা। একটা জিনিস ব্যাখ্যা করতে চাই, বিয়ের বাইরে নারী পুরুষের এমন সম্পর্ক অস্বাভাবিক, অনৈতিক মনে করিনা আমি। আশ্চর্য তখন হতে হয় যখন দিবানিশি দাবি করা হয় বাংলাদেশে প্রচলিত মূলধারার পুঁজিবাদী, পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির “পাল্টা সংস্কৃতি” বাম ধারার সংগঠনগুলোতে তৈরি হয়েছে। আমি মিশু আপুর এই বক্তব্যের সাথে সংযোজন করতে চাই। আমি বলতে চাই সুন্দরী আর শার্প হওয়াটাই যথেষ্ট না, ধনী বা সচ্ছল হওয়াটা একটা জরুরী বিষয়। আমি মনে করি, এবং আমার সাথে অনেকেই সম্মত হবেন যে বাম সংগঠনগুলোতে অনেক পুরুষ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পেরেছেন তার কারন অপেক্ষাকৃত ধনী নারী বা চাকরিজীবী নারীকে তারা জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করতে পেরেছেন। এখানে প্রশ্ন এটা না যে নারীর সম্পত্তি ব্যাবহারে নারীর আপত্তি ছিল কিনা, আমার কাছে জরুরী প্রশ্ন বরং এটা মনে হয় নিজের জীবন দিয়ে এরকম পৃষ্ঠপোষক বা শুভানুধ্যায়ীর ভূমিকা নেবার পর সংগঠনে নারী প্রশ্নে এই নারীরা কোন ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেন? একটা উদাহরন দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে, কালের কণ্ঠে ১০মার্চ,২০১৬ তে “নির্লোভ মানুষ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম” নামের একটি প্রতিবেদনে আরিফুজ্জামান তুহিন লেখেন “জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৬ সালের শেষ দিক থেকে ১৯৭৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দুই বছর জেল খেটে বেরিয়ে মা বাবাকে একটি শর্ত দিয়ে বিয়ে করতে রাজি হন তিনি। সেই শর্ত ছিল, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ভরণ-পোষণ করতে যিনি রাজি থাকবেন তাকে তিনি বিয়ে করবেন… অবশেষে একজন নারীকে পাওয়া গেল, যিনি মুজাহিদুল ইসলামের ভরণপোষণ দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি। ১৯৮৯ সালের ৫ আগস্ট তাঁদের বিয়ে হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত মুজাহিদুল সেলিমের স্ত্রী নাসিমা সুলতানা তাঁর দেয়া শর্ত থেকে এক মুহূর্তের জন্যও সরে যাননি। এই দম্পতির দুই সন্তানের ভরণ-পোষণও তিনি চালিয়ে গেছেন।”(৯) এখানে উল্লেখ্য যে স্ত্রী নাসিমা সুলতানা কিছুসময় ছাত্র ইউনিওন করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এটা কেবল একজনের উদাহরন নয়, সংগঠনে এরকম পুরুষ রাজনৈতিক নেতার সংখ্যাই বেশি। একই সাথে সংগঠন করা নারী পুরুষের মধ্যে বিয়ে হলে নারীকেই চাকরীতে গিয়ে পুরুষকে সাপোর্ট করবে আশা করা হয়। আমার প্রশ্ন, এই নারীরা তো একসময়কার রাজনৈতিক কর্মী, সংগঠনের রাজনৈতিক শিক্ষা তাঁদের আছে। তারা নারী বিষয়ে বা নারী সংগঠনের কলাকৌশল নির্ধারণে কি কোন ভূমিকা রাখতে পারেন? ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি পারেননা। আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি যখন চরম মুহূর্তে কোন জরুরী সিদ্ধান্ত নেবার সময় আসে তখন পৃথক নারী সংগঠনের মিটিংএ অবিসংবাদিত পুরুষ নেতা হাজির থাকেন। নারী নেতারাও কোন দ্বিধা দন্দ, আলোচনা ছাড়াই তাঁর সিদ্ধান্তই মেনে নেন। পাঠক নিশ্চই মানবেন পরামর্শ করা আর সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্যে গুরুতর পার্থক্য আছে? একটা বাম ঘরানার নারী সংগঠন কি রাজনৈতিক কর্মসূচী হাতে নেবে আর কোন প্রেক্ষাপটে কি বক্তব্য জনগণের সামনে হাজির করবে সেটা নারী নেতা না, অবিসংবাদিত পুরুষ নেতাই নির্ধারণ করে দিলে সেই সংগঠনকে কতটুকু নারীবাদী সংগঠন বলা উচিৎ হবে? এর সাথে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই নারী সংগঠনের নারী নেতার কি “পেরেন্ট সংগঠনের” (আমার মতে পিতা সংগঠনের) “রণকৌশল” নির্ধারণের অধিকার থাকে একইরকমভাবে?

(ঘ)

মার্ক্সবাদী নারীবাদী (নাকি মার্ক্সবাদী নারী বলবো?!), সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী (নাকি সমাজতান্ত্রিক নারী বলবো?!) সমালচোনায় র‍্যাডিক্যাল নারীবাদীদের অভিযোগ আমার সম্পূর্ণ সত্য মনে হয়। তারা ভীষণরকম প্যাটারনাল এবং রয়েছে সৃষ্টিশীলতার অভাব। এই নারীবাদী সংগঠনগুলো অটোনোমাস না, বরং সকল অর্থেই প্যারেন্ট (আমি বরং পিতা সংগঠন বলবো) সংগঠনের অনুগামী। মতাদর্শিকভাবে তারা অবিসংবাদিত পুরুষ নেতার নারী বিষয়ে তত্ত্বায়নের উপর নির্ভরশীল, “রণকৌশল” নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই কথাটা ঠিক একইভাবে সত্য। মিশু আপু বলেছেন “কেন সিপিবিকে দেখো না, হেনা দাস সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য হলেন ৮০ বছর বয়সে। বা কৃষ্ণা দি’কেই দেখো না, এই ক’দিন আগে উনি সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য হলেন,তাঁর বয়স ৬০ এর বেশি। পুরুষরা? ওহ তাঁরা তো আরো অনেক অল্প বয়সে, হয়তো আমারই বয়সে- আমার বয়স এখন ৪৫- বা আরো অল্প, ধরো তিরিশ পেরিয়ে চল্লিশে পা দেবার আগেই…”(১০) আমি মনে করি কেবল বয়সে প্রবীণ হওয়া না, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী পুরুষ নেতার প্রতিধ্বনি করতে পারলেই তবে তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যেতে পারেন। একবার প্রেসক্লাবের এক সমাবেশে থাকা অবস্থায় পুলিশ আমাকে হয়রানী করে, যৌন হয়রানীই বলে তাকে। আমি বসা অবস্থা থেকে উঠে তার প্রতিবাদ করতে যেতে উদ্যত হই, এমন সময় সংগঠনের নারীনেতা সাথে আরেকজন পুরুষ কমরেডকে নিয়ে হাজির হন আমাকে থামাতে। এবং দুইজন মিলে আমাকে বাঁধা দেন প্রতিবাদ করতে। আমি প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে নিরস্ত হই এবং সমাবেশ শেষ হলে সেই নারী নেতার কাছে জানতে চাই কোন যুক্তিতে তিনি আমাকে বাঁধা দিলেন। বাকযুদ্ধের একপর্যায়ে তিনি বললেন “বাংলাদেশের হাজার হাজার মেয়ে প্রতিদিন হয়রানীর শিকার হচ্ছে তোমাকে কি এমন হয়রানী করসে?”!!! এই কথা একটা পুরুষ নেতা বা কর্মী বল্লেও আমার পক্ষে মানতে এত কষ্ট হতোনা। আমার প্রশ্ন, এমন নারী নেতার কি ফায়দা যে নিজে নারীর নিপীড়নের অভিজ্ঞতা খারিজ করে নারীর “ধনী” হবার দোষে, অথবা “প্রিভিলেজড শ্রেণী বা সংস্কৃতি” থেকে আসবার দোষে?!! যদি নারী নিপীড়নের অভিজ্ঞতা এরা নানা “যৌক্তিক” ছুতোয় খারিজই করেন তাহলে সেই নারী নেতৃত্বের অবস্থানে গেলে কোন নারীর বিশেষ ক্ষতি বৃদ্ধি হয়? নাকি সংগঠনকে নারীবাদী, মানবিক, ন্যায়পরায়ণ চেহারা দিতে এই নারী নেতৃত্ব ব্যাবহারের কৌশল? এখানে বলে রাখা ভালো, আমি বিশ্বাস করি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে, রাজনীতি বিষয়ে পুরুষ নেতার তত্ত্বায়ন, এবং “রণকৌশল” নির্ধারণে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী পুরুষ নেতার তত্ত্বায়নের বাইরে নারীর ভিন্য ভাবনা থাকাটা তার নেতা হবার পথের কাঁটা হবার সম্ভাবনাই বেশি। এটা আমি একাধিকবার প্রমান পেয়েছি। আমার নারীবাদী অবস্থানের কারণে সংগঠনের এক ছাত্র নেতা কাউন্সিলের সময় আমাকে “একদেশদর্শী”!!! আখ্যা দিয়ে আমার কোন একটা পদ পাবার বৈধতা নাকচ করেছেন বলে আমি পরে জানতে পেরেছি।

(ঙ)

বাম সংগঠনগুলো দাবি করে তারা ব্যক্তি পূজার চর্চা করেনা, বা কোন পারসোনালিটি কাল্ট নেই তাদের। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে, নীতি নির্ধারণে, সংগঠনের সার্বিক সাংস্কৃতিক চর্চায় এই ব্যক্তি পূজার নজির অহরহই পাওয়া যায়। একবার এক অবিসংবাদিত পুরুষ নেতার কাছে এক নারী নেতাকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সকলের সামনে রক্তচক্ষু প্রদর্শন আর যাচ্ছেতাইভাবে তিরস্কৃত হতে দেখেছি। তাকে প্রশ্ন করলে উত্তর পেয়েছি তিনি নারী বা জীবন সঙ্গী হিসেবে না, সকলের সামনে তিরস্কৃত হয়েছেন কর্মী হিসেবে! উত্তর শুনে মনে হয়েছে এটা প্রস্তুত উত্তর ছিল, অনেককেই তিনি একই উত্তর দিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি এমনটা আগেও ঘটেছে। আমার জানতে ইচ্ছা করেছে নারী নেতা হিসেবে পুরুষ নেতাকে এভাবে সবার সামনে রক্তচক্ষু প্রদর্শনের, দুর্ব্যবহারের অধিকার কি তার আছে? কর্মী হিসেবেও এমন ব্যবহার পাওয়া আমার ন্যাজ্য মনে হয়নি। ব্যক্তিপূজার চর্চা সংগঠনে এতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত যে তুচ্ছ কারণে অবিসংবাদিত নেতার তর্জনগর্জন এবং দুর্ব্যবহারও কর্মীরা প্রেমের দৃষ্টিতে দেখতে শেখে যেন এটাই নেতাকে মান্য করার লক্ষণ!

যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন তোলার পর নতুন আসা বা যে কোন প্রশ্নকারীর জন্য একটা তৈরি উত্তর থাকে “আমাদের ভুল আছে, আমরা শিখছি, আমরা চেষ্টা করছি” কিংবা “তুমি হতাশয় ভুগছ”। নিঃসন্দেহে এটা খুবি বিনয়ী একটা উত্তর। এই উত্তর শুনে ভ্রান্তি জাগে সমালোচনার গ্রহনের সংস্কৃতি আছে হয়তো সংগঠনে। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে বলতে হচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষে হয় এগুলো কেবল কর্মীদের বিভ্রান্ত করার ফর্মুলা নয়তো অতিব্যাবহারে পচা শব্দবন্ধের অপপ্রয়োগ বা সহজ কথায় রেটরিক। বছরের পর বছর যারা বিনা ফলে কেবল চেষ্টাই করে যায় তাদের নিজেদের বিপ্লবী নাকি বনসাই বলা উচিৎ তার উত্তর মুক্তবুদ্ধির মানুষের দিতে পারা উচিৎ। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নেতা ও সাংগঠনিক তাত্ত্বিকদের অনুমোদন ছাড়া ফেসবুকে স্ট্যাটাসটা পর্যন্ত দেবার সাহস করতে পারেনা যেসব তরুন তাদের বলতে ইচ্ছা করে কারো কাছে মাথা বন্ধক রেখে নিজেদের বিপ্লবের ভ্যানগার্ড বলার চর্চা এদেশের বাম ধারায় খুবি পুরোনো। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সেই বক্তব্য আজও তাই শতভাগ সত্য; “মানুষের ক্ষোভ ও ক্রোধের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ চাপা দেওয়াই হল নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মূল লক্ষ্য” (১১)তরুণদের প্রশ্নহীন আনুগত্যের ঘারে পা রেখেই আজও নেতা তৈরি হয়, বামে, ডানে সব দিকেই এই কথা সত্য। সংগঠনের কথিত গণতান্ত্রিকতার চর্চা আসলে কতটুকু গণতান্ত্রিক আর নারীবান্ধব সেদিকটা আরও গভীর বিশ্লেষনের দাবি রাখে। মারিয়া মিজের মতে “র‍্যডিকাল নারীবাদীরা আবিষ্কার করেছে বেশিরভাগ বাম দলগুলো বাকি সবাইকে যা শিক্ষা দেয় তা নিজেরা চর্চা করতে অক্ষমসমস্ত বাম দলগুলো মৌলিক গণতন্ত্র চর্চার অভাবের লক্ষণ দেখায়, তারা ক্ষমতা চক্রান্ত, ব্যক্তি পূজা, পিতৃতান্ত্রিকতা এবং অন্ধবিশ্বাসে জর্জরিত।” (১২)  র‍্যাডিকাল নারীবাদীদের পর্যবেক্ষণের সত্যতা পাওয়া যাবে বহু ক্ষেত্রে। একটা উদাহরন দেই সচলায়তন ব্লগে দস্যি নামে অতিথি লেখক লেখেন “ছাত্র রাজনীতি করতাম, ইডেন এ ছাত্র ফ্রন্টের সহ সভাপতি পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলাম। এজন্যে এটা বল্লাম যে পদে কিছুই যায় আসে না। অনার্স ৪র্থ বর্ষে আমি তখন। আগের এতগুলো বাজে অভিজ্ঞতা আমাকে যখন একলা করে দিয়েছিল, যখন প্রতি রাতে আমি স্বপ্ন দেখতাম কেউ না কেউ আমাকে রেপ করছে তখন এই পার্টির সৎসংগে জীবন বদলে গিয়েছিল আমার। তো ভালো ভাবেই পার্টি করি কয়েক বছর তখন। কিন্তু পার্টির র নানান মতে দ্বিমত পোষণ এবং আরো বহু কারনে পার্টি করব না, ভাবছি। পদত্যাগ এর চিঠি দিয়েছি। পার্টির এক লোক, নেতা নয়, কর্মী ও নয়, কিন্তু সবার শ্রদ্ধেয়। অফিস ফাকা পেয়ে বুকে হাত দিয়ে চাপ দিয়ে বসলেন। যে পার্টি আমার মা বাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আমি ঘর ছেড়ে মেসে উঠে গিয়েছিলাম, সেই পার্টি আমার অভিযোগ উড়িয়ে দিল। সেই মইনউদ্দীন এখনো আছেন পার্টি অফিসে। আমার সাথে ইডেনে রাজনীতি করা মেয়েগুলো এখনো তাঁর সাথে রাজনীতি করে যাচ্ছে। সে এখনো সবার শ্রদ্ধেয়।”(১৩) বাম সংগঠনগুলো দেশের শ্রমিক ও নারী প্রশ্নে সবচাইতে অগ্রসর যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের দাবি করেন। কিন্তু নিজেদের সংগঠনের ভেতরে তারা যে চর্চা জারি রাখেন তাতে হতবিহবল হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা। ওপরে উল্লেখিত ঘটনার মত বহু ঘটনা আছে বলে শুনেছি। যেসব নারী বাম সংগঠন করে এসেছেন তারাও জানেন। নারী ইস্যুতে বা অন্য যে কোন ইস্যুতে আন্দোলন বহু উদ্দেশ্যেই করা যায়। মুখে কি বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, কি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে তা দিয়ে কারো চর্চা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার কোন উপায় থাকেনা। র‍্যাডিকাল নারীবাদীদের বক্তব্য তাই শেষ পর্যন্ত আমাকে সত্য বলতে হচ্ছে। তাই আর দশটা প্রতিষ্ঠানের নারী বিষয়ে অবস্থান বা জেন্ডার পরিস্থিতি জানতে যে টুল বা বিশ্লেষণের পদ্ধতি আমি ব্যাবহার করবো সেটা বাম সংগঠনের ক্ষেত্রেও আমি একইভাবে প্রযোজ্য মনে করি।

(চ)

“…সমাজতান্ত্রিক নারীবাদীরা মার্ক্সবাদী ও র‍্যাডিকাল নারীবাদীদের এই বলে সমালোচনা করেন যে, প্রথম ঘরানা প্রয়োজনাতিরিক্ত অর্থনীতিবাদী, দ্বিতীয় ঘরানা খুব বেশি সাবজেক্টিভ (ব্যাক্তি বিষয়ী) আর সে কারণে, অনৈতিহাসিক।”(১৪) এখানে একটা কথা আমি জোর দিয়ে উল্লেখ করতে চাই। বাম ঘরানার সংগঠনে বহু শব্দবন্ধ চালু আছে শুধুমাত্র সমালোচকদের কোণঠাসা করে রাখতে। এগুলোর ভিতরে কোন সত্যতা নাও থাকতে পারে। র‍্যাডিকাল নারীবাদীদের প্রতি অভিযোগ তারা খুবি সাবজেক্টিভ এবং এই কারণে অনৈতিহাসিক, এই অভিযোগ আমার সেই চলতি সমালোচনাগুলোর একটা মনে হয়েছে। এই বক্তব্যকে ভাংলে যা পাওয়া যায় বলে আমি মনে করি তা হোল ব্যক্তি নারীর নিপীড়নের অভিজ্ঞতা কোন ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। এই বক্তব্যের কোন ভিত্তি আসলে নেই। ইউরোপের হুইচ হান্টিঙকে এই সময়ে এসে সমাজ বিশ্লেষকরা চার্চের প্রভাব খর্ব করা বহু প্রতিভাবান নারীর সংগঠিত হত্যাকাণ্ড বলে চিনতে পেরেছেন। যৌন সহিংসতা, ধর্ষণকে তারা চিনতে পেরেছেন যুদ্ধ ও তথাকথিত শান্তির সময়ে প্রণালীবদ্ধভাবে নারীকে আতঙ্কিত রাখা এবং শাস্তি দেবার অস্ত্র হিসেবে। আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হোল তথাকথিত শান্তির সময়ে নারীর বিরুদ্ধে চলতে থাকা নীরব নিপীড়ন। ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত সংগঠিতভাবে চলতে থাকা, সুচারুভাবে সম্পন্ন হওয়া নারী নিপীড়নের অভিজ্ঞতাকে বিশ্লেষণের কেন্দ্রে রাখে যে সমাজ বিশ্লেষণ তাকে “অনৈতিহাসিক” বললেই তা খারিজ হয়ে যায়না। কোন চৌকস শব্দবন্ধ ব্যবহার করলেই ভিত্তিহীন সমালোচনা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে না। যৌন সহিংসতা বিষয়ক আলোচনায় ব্যক্তি নারীর নিপীড়নের অভিজ্ঞতা আমলে নেবার প্রবনতার কারনে আমার একবার এক নেতার কাছে শুনতে হয়েছিল “তুমি খুবি সাবজেক্টিভ”। ফিমেল সাবজেক্টিভিটি জ্ঞানকাণ্ডে কেন একটি জরুরী এবং বৈধ বিষয়, র‍্যাডিকাল নারীবাদী সমালোচনা খারিজ করতে বলা “খুব বেশি সাব্জেক্টিভ আর অনৈতিহাসিক” এই যুক্তি খণ্ডাতে চাইলে দীর্ঘ ইতিহাস বয়ান করতে হয়। সেই আলোচনায় না ঢুকেও আজকের দিনের নারীবাদী আন্দোলনের ইতিহাস থেকেও এই বক্তব্যের ভিত্তিহীনতা প্রমান করা যায়। আজকের দিনে যৌনহয়রানীকে নারীবাদীরা একটা বৃহৎ পুরুষতান্ত্রিক ব্যাবস্থার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেন যাতেপুরুষ নারীর উপর আধিপত্য করে। যদিও যৌন হয়রানী সহস্র বছরের পুরানো একটি আচরনযৌন হায়রানি শব্দটার আবির্ভাব ঘটে ১৯৭০এ নর্থ আমেরিকায়। পরবর্তীতে ইউনাইটেডকিংডমে ১৯৮০র শুরুর দিকে শব্দবন্ধটা গ্রহন করা হয়। গন মাধ্যমে এর গ্রহণযোগ্যতা শুরুরপ্রমান পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালেনিউ ইয়র্ক টাইমসযখনওমেন বিগিন তো স্পিক আউটএগেইনস্ট সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অ্যাট ওয়ার্কনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

যৌন হয়রানী শব্দটার ব্যাবহার নারীদের প্রতিদিনের জীবনে এমন কিছু অভিজ্ঞতা, আচরনচিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে যে আগে নির্দিষ্ট করা যেত না। এটা পুরুষের এমন একটাআচরণগত সমস্যা এবং একই সাথে নারীর এমন কিছু অভিজ্ঞতা চিহ্নিত করে যার পরিবর্তনপ্রয়োজন। এই শব্দ বন্ধের ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে নারী উপলব্ধি করে যে যৌন হয়রানীর অভিজ্ঞতাকেবল ব্যক্তি নারীর বিষয় না, এবং এভাবেই তারা বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি থেকে মুক্তি পায়।

দ্রুততার সাথে ব্রিটেন এবং নর্থ আমেরিকার পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলো যৌন হয়রানীকে একটাজরুরী সমস্যা হিসেবে দেখতে শুরু করে এবং সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতেশুরু করে। যৌন হয়রানীর এই নারীবাদী আবিষ্কারের প্রায় এক দশকের মধ্যেই ট্রেড ইউনিয়নইস্যু হিসেবে এটা চিহ্নিত হয়, সিভিল লিবার্টির ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়, সমান সুযোগ (ইকুয়ালঅপারচুনিটি)ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং ক্যানাডায় মানবাধিকার (হিউম্যান রাইটস)ইস্যুহিসেবে চিহ্নিত হয়। যৌন হয়রানীর মত আচরণকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবংপেশাগত পরিসরে চিহ্নিত করা শুরু হয়।

নানান ভাবে এই ইতিহাসকে নারীবাদের অর্জন হিসেবে দেখা যেতে পারে। ১৯৭০এর আগে এইতকমার অস্তিত্বও ছিলনা। যৌন হয়রানী ছিল নিত্যদিনের ঘটনা, এমন ঘটনা যার কোন নামনেই। যৌন হয়রানী শব্দবন্ধের এই যে শুরু তা আসলে নারীর অভিজ্ঞতায় বিশ্বকে চেনা এবংতাঁর অভিজ্ঞতার ভাষায় পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করা। এর মধ্য দিয়ে নারী সক্রিয় সত্ত্বা হিসেবে হাজিরহয় উপলব্ধি করে যৌন হায়রানি পুরুষের এমন একটি নিপীড়ন যাকে প্রতিবাদ এবং প্রতিহতকরা যায়”(১৫) এই বয়ান থেকে স্পষ্টভাবেই বলা যায় সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতা মাত্রই তা বিচ্ছিন্ন এবং অনৈতিহাসিক নয়। সাবজেক্টিভ অভিজ্ঞতাকে জ্ঞান কাণ্ডে সংযোজন করার দীর্ঘ দার্শনিক যাত্রা রয়েছে। তাই একবিংশ শতাব্দিতে এসে র‍্যডিকাল নারীবাদীদের সমালোচনা যে তারা সাবজেক্টিভ আর তাই অনৈতিহাসিক; আর তাই বর্জনীয় ইঙ্গিত করাটা দার্শনিক সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করে।

ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের সাথে সংগঠনে চর্চিত পুরুষালী সংস্কৃতি নিয়ে আলাপ করেছি। অনেকে বলেছে বিয়ের বাইরে নেতাস্থানীয় পুরুষদের নতুন আসা “সুন্দরী ও শার্প” কর্মীদের প্রেমের সম্পর্ক থাকে এটা অন্যায় কেন? বিয়ের সম্পর্কে থাকা নারী নেতা, কর্মীরও তেমন সম্পর্ক থাকে বলেই অনেকে মনে করে। সেই অর্থে এ জাতীয় সম্পর্ককে পলিয়ামোরাস সম্পর্ক (যেখানে সম্মতি সহকারে একাধিক ব্যক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকে) ধরলে নারী পুরুষ সমানভাবেই এই সম্পর্কে থাকেন বলে অনুমান করেন অনেকে। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা ভিন্ন। আমি মনে করি একটা অসম অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কনসেন্ট বা সম্মতি বিষয়টা নারীর জন্য জটিল। এর বহু মাত্রা আছে। বিপ্লব মানে যেহেতু কেবলমাত্র উৎপাদন সম্পর্ক নয় মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের নতুন নির্মাণ বাম ঘরানার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের এই সম্পর্কগুলো তাই গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

(চ)

একটা জরুরী বিষয় হোল সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র আন্দোলন শ্রমিক আন্দোলনের চেয়ে গুরুতর বেগ পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঝিমিয়ে পরা, বিশ্বব্যাপী নারী ও নারীবাদী ইস্যুর গুরুত্ব স্ফুলিঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পরাও আমাদের একটা নতুন বাস্তবতায় নিয়ে এসেছে। মার্ক্সবাদী, সমাজতান্ত্রিক সংগঠনগুলো নারী প্রশ্নকে অগুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও এড়াতে না পারার মত চাপ সমাজে তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আজকের দিনে বাংলাদেশে শ্রমিকের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে যেখানে নারী গার্মেন্টস শ্রমিক সেখানে নারী ও নারীবাদ বিষয়ে নুন্যতম বোঝাপড়া থাকাটা এই সংগঠনগুলোর অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে আসা বিভিন্ন নারীবাদী সমালোচনাকে ধারন করাটাও সংগঠনের বিস্তারের জন্য জরুরী। ব্যাপকহারে মধ্যবিত্ত নারীকে নিজেদের স্বার্থে দলে টানাও তাদের উদ্দেশ্য। জীবন যাপনে, সাংগাঠনিক কাঠামোয় তারা যতই পুরুষবাদী চর্চা করুকনা কেন নারী প্রশ্ন নিয়ে বিশ্লেষণে তারা অগ্রসর। এই অবস্থাটা আমাকে অনুরূপ আরেকটা বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দেয়। ঠিক কোন সময়ে উইমেন্স স্টাডিজের প্রাতিষ্ঠানিকীকরন শুরু হয় সুনির্দৃষ্টভাবে বলতে পারবোনা কিন্তু এটা এমন কিছু নারী নিপীড়কের হাতে নারীবাদী বিশ্লেষণের টুল তুলে দিয়েছে যারা নিজেরা যাপিত জীবনে নারী নিপীড়ক। সাথে সাথে নিও লিবারাল ইকনোমিতে বিশ্বব্যাপী এনজিওজাইজেশনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের  এজেন্ডার ব্যপক প্রচারের ফলে এখনকার নিপীড়নকারী পুরুষও নারীবান্ধব ভাষায় কথা বলতে শিখেছে। ব্যক্তিগত চর্চায় তারা নিপীড়নকারী হলেও এই ভাষা তাদের রক্ষাকবচের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কথা, বিশ্লেষণে কেউ নারীবাদী টুল ব্যবহার করলেই নিশ্চিত হবার উপায় নেই চর্চা কি।

(ছ)

আমার একাডেমীক পড়াশোনা ছিল “ওমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ” বিষয়ে। আমি বাম সংগঠনে এসে নারী প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা শুনতে গিয়ে নতুন একটা শব্দের সাথে পরিচিত হই যেটা প্রায়ই নারী ইস্যুর/ বা নারী প্রশ্নের সাথে প্রতিস্থাপিত হতে দেখি। শব্দবন্ধটা হোল “নারী পুরুষ সম্পর্ক”। কোন বিশ্ববরেন্য দার্শনিক নারীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেমন ছিলেন এই শব্দবন্ধ সেই দিকটি আলোচনায় নিয়ে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এটা সকল নারী প্রশ্নকে প্রতিস্থাপন করে না। এই শব্দবন্ধটা প্রমান করে এখনো বাম ঘরানার সংগঠনে বিষমকামি সম্পর্কই মূল আলোচ্য বিষয়। সমকামি, ট্রান্স বা নন বাইনারী মানুষদের বিষয়ে আলোচনাও সঠিকভাবে এখনো বাম ঘরানার সংগঠনগুলো করে উঠতে পারেনি, কর্মসূচী তো বহু দুরের বিষয়। হেটারোসেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের ছাড়া বাকি সকল ধরনের যৌনতার ও জেন্ডার আইডেন্টিটির মানুষরা আমাদের দেশে এনজিও প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য টার্গেট গ্রুপ। আমাকে একবার এক নেতা বলেন নারী সমস্যা সমাধান হলে ভিন্ন যৌন এবং জেন্ডার পরিচয়ের মানুষদের সমস্যা সমাধান হবে। এভাবে এক নিপীড়িত বর্গের মুক্তির সাথে আরেকটা নিপীড়িত গ্রুপের মানুষের মুক্তির শর্ত জুড়ে দেবার প্রবণতা বাম ঘরানার নেতা, কর্মীদের একটা সাধারন প্রবণতা। এই বক্তব্য প্রমাণ করে নারী পরিচয়কে এখানে উচ্চমূল্য দেয়া হচ্ছে বাকি সকল ধরনের যৌনতার ও জেন্ডার আইডেন্টিটির মানুষদের চাইতে। এই প্রবনতা দেখলে মনে হয় সাব ক্যাটাগরি করে, একটা বর্গের মুক্তির প্রশ্ন বৃহত্তর অন্য বর্গের মুক্তির সাথে জুড়ে দিয়ে সামাজিক সমস্যার চট জলদি সমাধান দিয়ে ফেলা যেন মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই বাস্তবতা ভিন্ন। প্রত্যেকটা ছোট, বড় সকল ন্যজ্য দাবি দাওয়ার জন্য এখানে মানুষকে যেমন পথে নামতে হয় তাতে করে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা এই ধারণা কতটুকু ভুল।

তথ্যসুত্রঃ

(১) সিমন দ্য বোভোয়া, মেয়েদের হার মেয়েদের জিত, পৃষ্ঠা ১৪, নভেম্বার ২০০৯, মনফকিরা-র পক্ষে চিত্রভানু চক্রবর্তী

(২) দ্বিতীয় লিঙ্গের পরে, সিমন দ্য বোভোয়ার্ ও অ্যালিস শোয়ার্জার-এর আলাপচারিতা, পৃষ্ঠা ৪৭, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা আলম খোরশেদ, সংবেদ, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

(৩) SEARCH FOR A NEW VISION, Maria Mies, page 174-175, নিজের অনুবাদ, Narigrantha Prabartana , 2005

(৪) Women at work, Page 53 Feminism is for Everybody, Passionate Politics, bell hooks

(৫) Sharon Smith, Black feminism and intersectionality, ISR (International Socialist Review), Issue 91

(৬) ‘অসুখী বিয়ে’ বাম ধারা ও নারীবাদ, রেহনুমা আহমেদ, পৃষ্ঠা ৯, প্রবল ও প্রান্তিক ৩, পাবলিক নৃবিজ্ঞান ঢাকা, ফাল্গুন ১৪২২, ফেব্রুয়ারি ২০১৬

(৭) Marxist Feminism and anticapitalism: Reclaiming our history, Reanimating our politics, Meg Luxton, Page 139 , Studies in Political Economy

(৮) ‘অসুখী বিয়ে’ বাম ধারা ও নারীবাদ, রেহনুমা আহমেদ, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫, প্রবল ও প্রান্তিক ৩, পাবলিক নৃবিজ্ঞান ঢাকা, ফাল্গুন ১৪২২, ফেব্রুয়ারি ২০১৬

(৯) http://www.kalerkantho.com/print-edition/4th-anniversary-special-copy/2014/03/10/60192

(১০) ‘অসুখী বিয়ে’ বাম ধারা ও নারীবাদ, রেহনুমা আহমেদ, পৃষ্ঠা ৩০, প্রবল ও প্রান্তিক ৩, পাবলিক নৃবিজ্ঞান ঢাকা, ফাল্গুন ১৪২২, ফেব্রুয়ারি ২০১৬

(১১) সংস্কৃতির ভাঙা সেতু, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ৬১, মাওলা ব্রাদার্স, ফেব্রুয়ারি ২০১০

(১২) SEARCH FOR A NEW VISION, Maria Mies, page 38-39, নিজের অনুবাদ, Narigrantha Prabartana , 2005

(১৩) http://www.sachalayatan.com/guest_writer/54332

(১৪) ‘অসুখী বিয়ে’ বাম ধারা ও নারীবাদ, রেহনুমা আহমেদ, পৃষ্ঠা ২৭, প্রবল ও প্রান্তিক ৩, পাবলিক নৃবিজ্ঞান ঢাকা, ফাল্গুন ১৪২২, ফেব্রুয়ারি ২০১৬

(১৫) Sexual harassment: reviewing the field, ALISON M. THOMAS and CELIA KITZINGER, Page 2, (নিজের অনুবাদ) SEXUAL HARASSMENT, Contemporary feminist perspective, Edited by ALISON M. THOMAS and CELIA KITZINGER, Open University Press   

লেখাটি হাবিবা নওরোজের ব্লগ থেকে পুনপ্রকাশ করা হলো 



Categories: বাংলাদেশে নারীবাদ

Tags: , , ,

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: