হিল ওমেন্স ফেডারেশনের অপহৃতনেত্রী মন্টি ও দয়াসোনা চাকমার বক্তব্য

সংবাদ সম্মেলন
দীর্ঘ ৩৩দিন অপহৃত অবস্থার বিবরণ
২৯ এপ্রিল ২০১৮
সাগর-রুনি হল, রিপোর্টার্স ইউনিটি হল, সেগুন বাগিচা, ঢাকা

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,

আমাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিন।

৩৩দিন জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হবার পর এই প্রথম আমি সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের মুখোমুখি হয়েছি। গুলিবিদ্ধ আমাদের এক সহযোদ্ধা ধর্মশিং চাকমা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমাদের সাথে আসতে পারে নি, এখনও উনি পুরোপুরি সুস্থ নন।ছাড়া-পাবার পরের দিনই ২৩ এপ্রিল রাঙ্গামাটির স্থানীয় ক’জন সংবাদ কর্মী কাউখালি গিয়েআমার সহযোদ্ধা দয়াসোনা চাকমার কাছ থেকে সাক্ষাতকার নিয়েছিল। যে অবস্থায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে তার কথাবার্তা হয়, তার খ-িতাংশ কিছু কিছু মিডিয়ায় স্থান পায়, যা অস্পষ্টতার জন্ম দেয়। সে বিষয়টি প্রসঙ্গক্রমে আমাদের আলোচনায় আসবে।

এখানে বলে রাখি, আপনাদের মুখোমুখি হবার আগে আমাদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার বন্ধুপ্রতিম সংগঠনসমূহকে ধন্যবাদ দিতে গতকাল ২৭ এপ্রিল তাদের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাত করি এবং তাদের নিকট ঘটনাবলী জানাই। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, আমাদের মুক্তির দাবিতে কোন বাধা মানেন নি। নান্যাচরে সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে সেনা সদস্যদের হাতে তাদেরকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, সেখানে সারাদিন অভুক্ত ছিলেন, কিন্তু দমে যান নি। তারাই আমাদের বন্ধু, ন্যায়ের সংগ্রামে সহযোদ্ধা। আজকের সংবাদ সম্মেলনে তারা পাশে থাকায় আমরা আপনাদের মুখোমুখি হতে সাহস পাচ্ছি। আপনাদের মধ্যে যারা লেখালেখি করে আমাদের মুক্তি লাভে ভূমিকা রেখেছেন, তাদেরও আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

আপনারা জেনেছেন, যারা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দীর্ঘ একমাসের বেশী জিম্মি করে ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল, তারা আমাদের স্বজাতির ভ্রষ্ট কিছু লোক। আমাদের অনেকেরদূর সম্পর্কের আত্মীয়ও হবে কেউ কেউ, কিন্তু তারা হচ্ছে ন্যায়-নীতির বিরোধীপক্ষ, তথা জনগণের শত্রু। সরকার-সেনাবাহিনীর গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশীয় পরিস্থিতি অশান্ত ও উত্তপ্ত করার এটি পূর্ব মহড়া বলে আমাদের আশঙ্কা হয়।

সত্যি বলতে কী, দুর্বৃত্তদের হাত থেকে ছাড়া পেলেও আমাদের পরিবারের সদস্যরা নতুনভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এখানে এসে খবর পেয়েছি দুর্বৃত্তদের পক্ষ থেকে গুলি করে মারার হুমকিও দেয়া হচ্ছে, সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে আমাদের পরিবারদের বসতভিটা ছেড়ে যেতে। আমাদের মুক্ত করতে যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জামিনদার হয়েছিলেন, তারা কেন এখানে থাকতে পারেন নি–তা এ ঘটনা থেকে বুঝতে সহজ হবে।

প্রিয় বন্ধুরা,
ইতিমধ্যে আপনারা আমাদের মুক্তিলাভের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য পেয়ে থাকবেন। এমন আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য আছে, যেগুলো জনগণের সামগ্রিক স্বার্থে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা অকথ্য মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি, প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবো কিনা নিশ্চিত ছিলাম না। অপহরণ ছিল পরিকল্পিত, সেনা-নব্য মুখোশবাহিনী ও এমএন লারমা দলের একটি গোষ্ঠী মিলিতভাবে এ ধরনের ঘৃণ্য ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে। আন্দোলনের চাপেই তারা আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। ছেড়ে দেয়ার আগে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে তারা হাস্যকর নাটক করে, আমাদের দিয়ে ভিডিও রেকর্ডিং করিয়ে তাদের সপক্ষে কথা বলতে বাধ্য করায়। আমাদের সাথে ছবিও তুলেছে। কাছে থেকে আমরা তাদের কান্ড কারখানা দেখে এসেছি, তাদের হাঁড়ির খবর জেনেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের যে সন্দেহ ছিল, অপহৃত হয়ে আমরা তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়েছি। আমরা নাটের গুরু আর খেলারামদের চিনে ফেলেছি, যা পর্যায়ক্রমে উত্থাপিত হবে।

১৮ মার্চ সকাল ৯:৩০টার দিকে আমরা কুদুকছড়ি ছাত্রদের মেস থেকে অপহৃত হই। ১৯ এপ্রিল রাত ৮টার খাগড়াছড়ি সদরের এপিবিএন গেইটের সম্মুখে আমাদের অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেয়া হয়।যখন এ আয়োজন সংঘটিত হচ্ছিল, তার অল্প কিছু দূরে (আনুমানিক ৫০ গজ) নিরাপত্তা চৌকি থেকে আমর্ড পুলিশের জওয়ান নির্বাক দৃষ্টিতে শুধু দৃশ্য অবলোকন করেছিল।

মূলত তিনটি শর্ত দিয়ে অভিভাবক ও জামিনদারের হাতে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। কোন কোন মিডিয়ায় মুক্তিপণদেয়ার কথা বলা হলেও, তা সত্য নয়। শর্তসমূহ এই, (১) রাজনীতি করা যাবে না। (২) নব্য মুখোশবাহিনীর সর্দার বর্মার অনুমতি ছাড়া গ্রামের বাইরে যেতে পারব না। (৩) অপহরণের বিষয়ে কারোর কাছে মুখ খোলা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ হলে আমাদের ও অভিভাবকদের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

ছেড়ে দেয়ার দু’দিন আগে ১৭ এপ্রিল তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা আমাদের সাথে কথা বলেছেড়ে দেয়ার ইঙ্গিত দেয়। মুক্তির পর আমরা সংগঠনে যুক্ত থাকতে পারবো না, অন্তত জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সাংগঠনিক কাজ কর্ম থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলেছিল। সে আমাকে চাকুরী জুটিয়ে দেবে বলেও প্রলোভন দেখায়। এমনও বলে ‘নারী আর কী করবে, বিয়ে করে সংসার করতে হবে’ বলে মন্তব্য করে। তার অনেক কথাবার্তা অসংলগ্ন।

১৮ এপ্রিল সে আবার আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। এবার আসে সেজেগুজে নতুন পোশাক পরে, হাতে ছিল একটা সাদা এনড্রয়েড ফোন।আমাদেরকে তার পাশে বসিয়ে অনেকগুলো ছবি তোলে।

পরদিন ১৯ এপ্রিল রাতে আমাদেরকে অভিভাবকের কাছে হাতে তুলে দেয়। দিনের বেলায়আমাদের অভিভাবকদের সাথে অন্য একটা জায়গায় তারা আলাদাভাবে কথা বলে, যা আমরা জানতাম না। ছাড়া পাওয়ার পর আমরা তাদের “শর্তের” কথা জানতে পারি।

১৯ এপ্রিল অপহরণকারীরা এমনভাবে সময় মিলিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়, যাতে দিনের বেলা আমরা আমাদের সংগঠনের কারোর সাথে যোগাযোগ করতে না পারি। অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিরা আমাদের নিয়ে যার যার গন্তব্যে রওনা দেন। এলাকায় পৌঁছতে আমাদের রাত হয়ে যায়।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
অপহরণের দিন থেকে মুক্তি লাভ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, আমাদের চোখে পড়েছে, তা আপনাদের সম্মুখে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

সেদিন ছিল ১৮ মার্চ রবিবার, কুদুকছড়ি বাজারের সপ্তাহের হাটের দিন। আমি অন্যদিনের মতো সেদিনও ছাত্রদের মেসে ছিলাম। আমি ও সহযোদ্ধা দয়াসোনা চাকমা বাদে ডিওয়াইএফ-এর ধর্মসিং চাকমা, পিসিপি’র কুনেন্টু চাকমাও ছিল। বাকী তিন জন ছাত্রী জনা চাকমা (নবম শ্রেণী), মেকি চাকমা (অস্টম শ্রেণী) ও পারমিতা চাকমা (অস্টম শ্রেণী) ঘটনার আগে আগে স্কুলে যায়। তারা সবাই কুতুকছড়ি বড় মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয়ে পাড়াশোনা করে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে আমি হঠাৎ ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে ঘটনাটি বুঝে উঠতে পারিনি। পরে দেখি সহযোদ্ধারা যে যেদিকে পারে দৌঁড়ে পালাচ্ছে। আমিও মেস থেকে দৌঁড়ে পাশের একটি ঘরের শৌচাগারে লুকিয়ে পড়ি। আর সহযোদ্ধা দয়াসোনা চাকমাও পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু দুর্বৃত্তরা আমাদের দেখে ফেলে। আমি যেখানে লুকিয়ে ছিলাম সন্ত্রাসীরা সেখানে যায় এবং আমাকে বের হতে বলে। আমি বের হলে,তারা তাদের সাথে যাবার নির্দেশ দেয়। আমি যেতে চাইনি, যেখানে ছিলাম সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর আমাকে গুলি করে মারার ভয় দেখায় এবং পায়ের খুব কাছে মাটিতে পরপর ১ রাউন্ড গুলি চালায়। সেখানে আরো একজন এসে আমাকে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। এরপর মরধর করে।

পিছমোড়া করে বেঁধে মেস-এর উঠোনে নিয়ে দুর্বৃত্তরা আমাকে একটা গাছের সাথে বেঁধে রাখে। সেখানে সহযোদ্ধা দয়াসোনা চাকমাকে নিয়ে আসে।তাকে তখনও বাঁধা হয়নি। এরপর আমাদের সামনে মেস-এ আগুন দেয়া হয়। সহযোদ্ধা ধর্মসিং চাকমাকে তখন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটা ঢালু জায়গায় পড়ে থাকতে দেখি। সেখানে ধর্মশিং চাকমার বোন ভাগ্যশোভা চাকমা তাকে জড়িয়ে ধরে, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। একজন সন্ত্রাসী তাকে টেনে হেঁচড়ে সরিয়ে ধর্শসিংকে গুলি মারতে চেয়েছিল। কিন্তু সরাতে পারেনি। ফলে সহযোদ্ধা ধর্শসিং চাকমা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যায়। যখন মেস ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল, তখন ভেতর থেকে বই খাতা নিয়ে এসে সেগুলো ছিঁড়ে তাতে আগুন ধরিয়ে বাঁশের বেড়া ঘরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার ছোট বোনদের বই, খাতা, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, এ্যাডমিড কার্ড, কাপড়-চোপড়, রান্নার সরঞ্জাম সবকিছু পুড়ে যায়। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল ছাত্রীরা, পরনের পোশাক ছাড়া তাদের কিছু অবশিষ্ট নেই। বই-পুস্তকসহ সমস্তকিছু পুড়ে ছাই হয়।

সাংবাদিক ভাইয়েরা
মেসঘরটি পুড়িয়ে দেয়ার পর আমাদের দু’জনকে অস্ত্রের মুখে গ্রামবাসীদের সামনে দিয়ে নিয়ে যায়। তখন একজন আমার ঘাড়ের ওপর ধারালো দা দিয়ে কোপানোর ভয় দেখাতে থাকে। এভাবে আমাদেরকে প্রায় ৫ মাইলের মতো রাস্তা হেঁটে যেতে বাধ্য করে। যাওয়ার সময় নব্য মুখোশবাহিনীর সর্দার তপন জ্যোতি চাকমা ও প্রত্যয় চাকমা (দাজ্জে) বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে। কাপ্তাই লেকের পারে পেরাছড়া নামক একটা গ্রামে গিয়ে একজনের বাড়িতে বিশ্রাম নেয়। সেখান থেকে দাজ্জে সংস্কারের স্থানীয় নেতা প্রগতি চাকমাকে ফোনে বলতে শুনি ‘তোমার শশুরের গ্রাম থেকে মন্টি চাকমা নামে একজনকে ধরে নিয়ে এসেছি’। এবং যাওয়ার সময় আমরা বর্মাকে বেশ কয়েকজন সংস্কারের নেতার সাথে কথা বলতে শুনেছি। এছাড়াও মাঝে মাঝে বাংলায় অস্পষ্টভাবে কথা বলতেও আমরা শুনেছিলাম।তা তাদের উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তার নিকট রিপোর্ট করার মতো মনে হয়েছে।

পেরাছড়া থেকে একটা ইঞ্জিন চালিত বোটে করে অস্ত্রসহ প্রকাশ্যে রাঙামাটি নানিয়ারচর প্রধান নৌ-পথ দিয়ে আমাদেরকে মংহ্লা নামক গ্রামে নিয়েযায়। সেখানে গিয়ে আমাদেরকে সংগঠন ছেড়ে দিতে আর আন্দোলনে যুক্ত না হতে বলে। আমি তখন কানে প্রচ- ব্যাথায় ভূগছিলাম। যাবার সময় কান বরাবর জোরে একটা চড় মেরেছিল কৈলাশ মনি চাকমা। বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে গোপনে চেয়ে নিয়ে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিই। রাতের খাবার সেখানে খেতে দেয় (এখানে বলে রাখা দরকার গ্রামাঞ্চলে বেলা থাকতেই রাতের খাবার সেরে ফেলে)। সন্ধ্যা হয়ে আসলে তারা দিনের ঘটনাবলি নিয়ে আলাপে বসে। আমরা তাদের কথাবার্তা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা বলাবলি করছিল- ‘এত কষ্ট করলাম একজনকেও মেরে ফেলতে পারলাম না।’ ডিওয়াইএফ-এর ধর্মশিংকে মারতে না পেরে নব্য মুখোশদের অন্যতম চেলা রণয় চাকমা বর্মাকে দোষারোপ করছিল। অনেকে সারাদিন পরিশ্রমের ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথাও জানায়। ঠিক সে সময় কৈলাস মনি চাকমা নামে একজন আনুমানিক ৪৫ বছরের বয়স্ক লোক গলা উচিয়ে বলেছিলেন ‘আপনারা ক্লান্ত হবেন না কেন? দুই তিনবার গাড়িতে চড়লে কি আর শক্তি থাকে? পরিশ্রমতো বেশী হয়েছে।’এরপর বর্মা তাকে ডেকে নিয়ে এক পাশে বসিয়ে রাখে। পরে সে আর কিছুই বলেনি। তখন আমরা জানতাম না কিভাবে তারা সেখানে গেছে। ছাড়া পাওয়ার যখন শুনেছি সেনাবাহিনীই তাদের গাড়িতে করে মেস ঘরের পাশে নামিয়ে দিয়ে এসেছিল। তখন আমি তার সেই কথার মর্মার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হই।

সেদিন রাতের খাবার খাইয়ে আমাদের আবার ইঞ্জিন চালিত বোটে ওঠায়। নান্যাচর ডাকবাংলা নামক স্থানটির পাশ দিয়ে আমাদের নিয়ে যায়। সেখানে চেঙ্গীনদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলার কারণে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছিল। আলোতে আমাদেরকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল। এরপর আমাদেরকে ইসলামপুর নামক এলাকার গুল্যাছড়ি গ্রামে একটি জৈনক পাহাড়ি বাড়িতে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে ইসলামপুর আর্মি ক্যাম্পের দূরত্ব খুব বেশী হলে ১৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ। অথচ সেনাবাহিনী ছিল একেবারে নিশ্চুপ। সেখানে আমাদেরকে সার্বক্ষণিক ৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী পাহারায় রাখে। বাকীরা অন্যদিকে চলে যায়। বর্মাও ছিল না। পরদিন সকালে সে সেখানে চলে আসে। আসার পর থেকে সে আমাদের সাথে গালিগালাজসহ অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে। সে একথাও বলে ‘তোমাকে আমি আগে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিলাম। এখন তা বাস্তবায়ন করবো!’ তার কথাবার্তা শুনে ও ব্যবহার দেখে ভীষণ মর্মাহত হই, খুব ভয় পেয়ে যাই। তখন আমাদের শরীর হিম হয়ে আসে। এভাবে সে দুইদিন খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে। ডাকবাংলার সে দু’দিন কেটেছে চরম আতংকের মধ্যে। আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরকে নান্যাচর জোনে নিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেবে। ইতিমধ্যে হাতে কাছে আমরা একটা ধারালো নতুন ব্লেড পেয়ে যাই। কোন অঘটন ঘটলে আত্মহত্যা করার জন্য মনস্থির করি। ব্লেডটি লুকিয়ে সযত্নে রেখেছিলাম।

২০ মার্চ সন্ধ্যায় আমাদেরকে আবার ইঞ্জিন চালিত বোটে ওঠায়। সেসময় বর্মা, উত্তরণ, রিটন ও জিমত নামে তিনজনকে আমি চিনতে পারি। বাকীদেরকে চিনতে পারিনি। এরপর সশস্ত্র প্রহরায় সোজা মহালছড়ির দিকে রওনা দেয়। আমাদের সাথে বর্মা যায়নি। সে অন্যভাবে যায়। রাত আনুমানিক সোয়া ৯টার দিকে মনাটেক নামক জায়গায় আমরা পৌঁছি। সেখানে আগে থেকে ৭-৮জন লোক আামদের অপেক্ষায় ছিল। বোট থেকে নেমে কিছুদূর হেঁটে এরপর একটা অটোরিক্সাতে তোলে। আমাদেরকে মাঝখানে বসিয়ে দু’পাশে দু’জন অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী ওঠে। জেএসএস এমএন লারমা সংস্কারপন্থীদের ঘাঁটি এলাকা হিসেবে পরিচিত মুভাছড়ি নামক এলাকার ধনপুদিবাজারে (স্থানীয় হাটবাজার) নেয়া হয়। ধনপুদিবাজারে অনেক লোক বসা ছিল। আমাদের ধারণা ওরা আমাদের অপেক্ষায় ছিল। অটোরিক্সা থেকে আমরা নামলে দেখতে পাই, বর্মা ও তরু দু’টি মোটর সাইকেল নিয়ে সেখানে উপস্থিত। এরপর আমাদের থেকে কিছু দূরত্বে দাঁড়িয়ে এমএন লারমা অর্থাৎ সংস্কারপন্থীদের সাথে তারা কি যেন ফিস ফিস করে কথা বললো, এরপর আমাদের হাঁটতে বলা হলো। হাঁটতে হাঁটতে রাত আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১২টায়কলাবন্যা এলাকায় লবা পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কাছাকাছি (গ্রামটির নাম সঠিক জানি না) একটি বাড়িতে রাত যাপন করি। ভোররাতে আমাদের ঘুম থেকে উঠানো হয়। হাত মুখ ধোয়ারও সুযোগ হয়নি। ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাঁটতে হয়েছিল। আমাদেরকে প্রায় দু’দিন দু’রাত হেঁটে যেতে হয়েছে। দিনের বেলায় মানুষের আনাগোনা বেশী হওয়ায়, রাতেই বেশী হাঁটতে হতো। দ্’ুদিন পর ছোট মেরুং নামক স্থানে প্রমেশ্বর চাকমা নামে একজনের বাড়িতে গিয়ে উঠি। সেখানে নব্য মুখোশবাহিনীর অন্যতম চেলা মিটন চাকমা ও একজন অস্বাভাবিক লোক আমরা দেখাতে পাই (তাকে খুনি বলে জানতে পারি)। তাকে দেখে আমরা ভেতরে ভেতরে ভয়ে চমকে উঠি। আমাদের মেরে ফেলতে নিয়ে আসা হলো কিনা, এমন শত প্রশ্ন মনে উদয় হচ্ছিলো। সেখানে সংস্কারপন্থীদের কিছু লোক আমাদের দেখতে গেছে। তাদের সাথে তরু, মিটন ও অন্যান্য মুখোশবাহিনীর সদস্যরা আমাদের অপহরণের ব্যাপারে আড্ডা জমায়। সংস্কারদের একজন কর্মী আমাদের উদ্দেশ্য করেঅশোভন মন্তব্য করলে, আমরা তার দিকে তাকাইও নি। সেখানে একরাত রাখার পর আবার স্থানান্তর করা হয়। ২৫ মার্চ মেরুং-এর বাজেছড়া নামক গ্রামে নেয়া হয়। দু’জন মুখোশবাহিনীর সশস্ত্র সদস্য আমাদেরকে চৌধুরীপাড়া হয়ে চোঙড়াছড়িসেনা ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বাজেছড়ানামক স্থানে নিয়ে যায়। বাজেছড়া গ্রামে অনেকদিন থাকতে হয়। গ্রামটি চোঙড়াছড়ি আর্মি ক্যাম্পের কাছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাজেছড়াতে আমাদেরকে একটি বাড়িতে আটকিয়ে রাখা হয়। দিনের বেলায় বাইরে কোথাও যেতে দিতো না। ঠিকমত গোসল করতে পারতাম না। মাঝে মাঝে রাতের সময় সশস্ত্র পাহারায় আমাদেরকে গোসলের জন্য নেয়া হতো। এমনকি টয়লেটে গেলেও অস্ত্রধারীরা প্রহরায় থাকতো। সে এক বর্ণনাতীত দুঃসহ মানসিক পীড়নের মধ্যে ছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এভাবে যখন দিন শেষে আরেকটি নতুন দিনের আগমন ঘটতো আমাদের অনিশ্চয়তার যন্ত্রনাগুলো আরো তীব্রতর হতো। আমাদের কাছে একেকটা দিন একেকটা বছরের মতো মনে হতো। এই অবস্থায় একদিন আমাদের ডেকে বলা হলো একটা ভিডিও রেকর্ড দিতে হবে। আর সেটা করতে আমাকে। কিন্তু কথাগুলো আমার হবে না। কেবল একটা লিখিত নোট তোতা পাখির মতো মোবাইল ক্যামেরার সামনে বসে আউরাতে হবে। আমি প্রথমে রাজি হইনি। পরে তারা ভয় দেখাতে লাগলো। জিম্মি অবস্থায় বেশী বাড়াবাড়ি করলে বড় ধরণের অঘটন ঘটে যাবে, সে ভাবনা থেকে শেষে আমি রাজি হই। সেখানে তারা আমাদেরকে অপহরণের বিষয়ে নব্য মুখোশবাহিনী ও সংস্কারপন্থী জেএসএস কোনভাবে জড়িত নয় দাবি করে বলা হয়, এই অপহরণ সম্পূর্ণ ইউপিডিএফ-এর অন্তঃকোন্দলের ফসল। এর জন্য প্রসিত খীসা দায়ি। তাদের এসব কাপুরুষতার আয়োজন দেখে তাদের প্রতি আমার ভীষণ ঘৃণা জাগে, ইচ্ছে হয়েছিল তাদের গালে কষে চড় মারতে। পরে আমরা জানতে চেয়েছিলাম আমাদেরকে কবে মুক্তি দেয়া হবে? উত্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জানিয়েছিল তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা চট্টগ্রামে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে গেছে, সেখান থেকে ফিরলে ছেড়ে দেয়া হবে। তাদের নিজেদের অনেক আলোচনার কথাও আমরা শুনে থাকি। মাঝে মাঝে তাদের হতাশার আলাপ শুনতে পাই। অধিকাংশ মাদকসেবী ও চাঁদা তুলে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতসহ সন্ত্রাসী চক্রের মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা বড় ধরণের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে বলে বলাবলি করতে শুনেছি।

উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
দুঃসহ রজনীগুলো অবসানের কোন লক্ষণ না দেখে, আমরা মাঝে মাঝে দু’জনে আলাপ করি।আন্দোলনের দিনগুলোর কথা স্মরণ করি। আমরা কবে মুক্তি পাবো তা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি। এর উত্তরে তারা বলেন “ অপহরণকারীরা‘একটা অস্ত্র চালান এসেছে, বর্মাসহ আমাদের নেতারা সেটা রিসিভ করতে গিয়েছে। সেখান থেকে ফিরতে দুই দিন লাগতে পারে। তারা ফিরে এলে তোমাদের মুক্তির ব্যাপারটি চুড়ান্ত হবে।”

ছাড়া পেয়ে বুঝতে পারছি, তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ৭ এপ্রিল থেকে। বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করে অপহরণকারীরা এ সময় আমাদের মেরুং রেখেছিল। ৭ এপ্রিল আমাদের জন্য তারা প্যান্ট ও টি-শার্ট এনে দেয়, সাথে একটা করে ক্যাপও ছিল। আমরা প্যান্ট ও টি-শার্ট পরে নিই। কোথায় নেয়া হবে, কিছু জানায়নি। যারা আমাদের প্রহরায় নিয়োজিত ছিল, তাদের দু’তিন জনের মাধ্যমে আমরা বাইরের খবরা-খবর পেতে থাকি। ে আমাদের মুুক্তির দাবিতে ঢাকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভের খবর জানতে পেরে আমরা মনে কিছুটা জোর পাই। পোশাকের ধরন পাল্টাতে দেখে মনের মধ্যে যখন নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো, ঠিক তখনআমাদের নেয়ার জন্য একটি মোটর সাইকেল আসে। সাথে একটা অটোরিক্সাও ছিল। মোটর সাইকেল ছেড়ে দিলে, অটোরিক্সাতে করে অস্ত্রধারী অপহরণকারীরা আমাদের পিছু পিছু অনুসরণ করতে থাকে।

আগের মতো আবার চঙড়াছড়ি আর্মি ক্যাম্পের সামনে দিয়ে গাড়ি ছুটলো অজানা গন্তব্যে। শেষে মোটর সাইকেল একটা গ্রামে এসে থামে, এটি দীঘিনালার বড়াদাম। দেখি সেখানে আমাদের থাকার আয়োজন চলছে। আমরা আরো হতাশ হলাম। যদিও গালিগালাজ, খারাপ ভাষার কথাবার্তা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে, কিন্তু প্রাণে বাঁিচয়ে রাখবে কিনা, তা নিয়ে দুঃচিন্তা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো। বড়াদাম গ্রামের সুভেন্টু চাকমা নামে একজনের বাড়িতে রাখা হলো আমাদের। আমরা মেরুং থেকে যেদিন বড়াদাম পৌঁছলাম, সেদিন থেকে সেনাবাহিনী হাঁড়িপাতিল নিয়ে বড়াদম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিল। তার নিকটেই অপহরণকারীরা আমাদেরকে সশস্ত্র প্রহরায় জিম্মি রাখে।

এরমধ্যে ১২ এপ্রিল রাতে আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ‘বিশেষ একটি কাজে তারা বাইরে যেতে হচ্ছে’ বলে জানায়। বাড়ির মালিকসহ একজন পাহারাদার রেখে তারা চলে যায়। তারা আবার রাত ১২টার দিকে ফিরে এসে আমাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে, অন্য একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। বিষয়টা আমরা বুঝতে পারিনি। ছাড়া পেয়ে ধারণা করছি, ফেইসবুকে তখন আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিতে শুভাকাক্সক্ষীরা তৎপর ছিল। সে কারণে অপহরণকারীরা আমাদের নিয়ে বারে বারে জায়গা পাল্টিয়েছিল।

১৩ এপ্রিল মূল বিজুর দিনে আমাদেরকে তুজিম নামে এক মুখোশবাহিনী সন্ত্রাসী তার সাথে ডেকে নিয়ে যায়। কিছুদূর হাঁটার পর একটা সড়কে উঠলাম। সেই মুহুর্তে একটি মাইক্রোবাস এসে আমাদের সামনে থামে। সেখানে আমাদেরকে উঠতে বলা হলো। আমরা উঠলাম এবং সাথে তুজিমও অস্ত্রসহ উঠলো। মেরুং থেকে দিঘীনালা হয়ে খাগড়াছড়ি আমাদেরকে আনা হলো। আসার সময় পথিমধ্যে অনেক আর্মি ক্যাম্প ও চেকপোস্ট দেখেছিলাম। অথচ কোথাও আামদের থামানো হয়নি। শহরের ডিসি অফিস ও আদালত সড়ক হয়ে হাসপাতালের রাস্তা ধরে গাড়িটি মধুপুরের ভেতর দিয়ে তেঁতুলতলা চলে যায়। এরপর এপি ব্যাটালিয়ান গেইট দিয়ে প্রবেশ করার পর থামায়। গেইটে একজন সেন্ট্রি গার্ড ডিউটিতে ছিল। সে আমাদের গাড়ির দিকে ফিরেও তাকায় নি। এরপর আমরা নেমে পড়ি। তুজিমও অস্ত্রসহ নেমে যায়। সেখানে একটি বাড়িতে আমাদেরকে বসিয়ে রাখা হয়।

একটু রাত বাড়লে সেখান থেকে স্কুলের দিকে নিয়ে গিয়ে কিছুদূর হেঁটে একটা বাড়িতে নেয়া হয়। ৫দিন সেই বাড়িতে একটা কক্ষে আটকিয়ে রাখা হয়। দরজা জানালা সব সময় বন্ধ রাখা হতো। রাত দিনের খবর পেতাম না। জেনেছি বাড়িটির মালিক পানছড়ি থেকে আয়তন চাকমা। সে একজন এমএনলারমা সংস্কারপন্থী জেএসএস এর সদস্য। ছাড়া পাওয়ার আগ পর্যন্ত যেখানে আমাদেরকে একপ্রকার বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আমরা যে খাটেঘুমাতাম, তার বাইরে একটা খাটে মুখোশ বাহিনীর দ্বিতীয় সর্দার জোলেয়্যে চাকমা তরু থাকতো। সে তার সাথে সবসময় একটা ওয়াকিটকি রাখে। প্রায় সময় ঐ সেট দিয়ে কথা বলতে শুনতাম, বাংলায়। এমনকি রাত ১১টাও ঐ সেট-এ কল আসতো। মাঝে মাঝে বাইরে গিয়ে কথা বলতো। সে বাড়িতে প্রায় সময় সংস্কাররা আসা যাওয়া করতো। তরুসহ আড্ডা দিতো। একদিন দরজা খোলা পেয়ে এক সংস্কারপন্থী জেএসএস সদস্য আমাদের রুমে ঢুকে আমাদের পরিচয় জানতে চেয়েছিল। সেটা আমি তরুকে জানিয়েছিলাম। সে পরে আমাকে বলেছে ‘অসুবিধা হবে না। সে আমাদের পক্ষের লোক’।

আমি সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে আক্ষরিক অর্থে মুক্তি পেলেও বাড়িতে এসে নতুন একটা বন্দিত্বের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখিন হই। রাতে ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারি না। সবসময় বর্মা ও দাজ্জেসহ অন্যান্য দুর্বৃত্তরা মা’কে ফোন করে আমার খবরাখবর নেয়। সেই সাথে আর্মি ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও আমি বাড়িতে রয়েছি কিনা খবর নিতে মাকে প্রতিনিয়ত ফোন করে। সন্ত্রাসীরা আমার হাতে ফোন দিতে নিষেধ করে। এজন্য বাড়ির লোকজন আমাকে পরিচিত লোকজনের বাইরে কারোর সাথে যোগাযোগ এমনকি কথা বলতেও দিতো না। এরকম একটা হুমকির মুখে গত ২৪ এপ্রিল আমি আমার সহযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করতে সমর্থ হই। পরে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে আসি এবং সহযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হই।

আমি চলে আসায় সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাবা ও বড় ভাইকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে এবং পুরো পরিবারকে এলাকা থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখাচ্ছে। গতকাল নব্য মুখোশবাহিনীর সর্দার বর্মা মা’কে ফোন করে দুপুর ১২টার মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। আমাকেও যেখানে পাবে সেখানে গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছে। এমনকি ঢাকায় থাকলেও। ঢাকাতেও নাকি তার খুনি বাহিনী রয়েছে বলে জানায়। আমি দেশবাসীর নিকট সত্য ঘটনা তুলে ধরায় আমার পরিবারের উপর সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়েছে। সহযোদ্ধা দয়াসোনার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে। তার বাবা একবার মূর্ছা যান।

বেচারি দয়াসোনার এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া হলো না। আমাদের বহু ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কুদুকছড়িতে ছাত্রদের মেস পুড়ে যাওয়ায় বইপত্রসহ অনেক জিনিস নষ্ট হয়।

দীর্ঘক্ষণ আমাদের কথা শোনার জন্য ধন্যবাদ।

আশা করি, আমাদের দেয়া তথ্য আপনারা অনুসন্ধান চালিয়ে সত্য উদঘাটনে তৎপর ও সফল হবেন এবং আপনাদের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র দেশবাসী জানতে পারবে। অপরাধীদের শায়েস্তা করে দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আপনারা প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করবেন।
আবারও আপনাদের ধন্যবাদ।

মন্টি চাকমা
সাধারণ সম্পাদক
হিল উইমেন্স ফেডারেশন
কেন্দ্রীয় কমিটি

দয়াসোনা চাকমা
সাধারণ সম্পাদক
হিল উইমেন্স ফেডারেশন
রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি

২৯ এপ্রিল ২০১৮, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সেগুন বাগিচা, ঢাকা।



Categories: আন্দোলন বার্তা, প্রান্তিক জাতি প্রশ্নে

Tags:

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: