নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘নাগরিকদের পক্ষে আমরা’র বিবৃতি
হামলা-হুমকি বন্ধ করুন। নির্ভয়ে নিরাপদে সকলের ভোট দেবার অধিকার নিশ্চিত করুন।
দলীয় সরকারের অধীনেও যাতে প্রতিশ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার স্বার্থে গত ২২ ডিসেম্বর নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের কাছে ৫ দফা দাবী উত্থাপন করেছিলাম। সে দাবীসমূহে আমরা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা এবং নিরপেক্ষভাবে প্রশাসনের দায়িত্ব পালন; স্বাধীনভাবে সকল পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ভূমিকা পালন করতে দেয়া; বিরোধীদের উপর বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ ও সহিংসতা বন্ধ করা এবং এসবের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবিলম্বে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়া; সকল প্রকার যোগাযোগে বাধাদান বন্ধ করা; এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছিলাম আমরা।
আমরা দু:খের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের নূন্যতম পরিবেশ নিশ্চিত করতে উপরোক্ত দাবিগুলোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য হলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখনও এর বিপরীত দিকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকা দেখে মনে হয় তাঁরা আদিষ্ট হয়ে একতরফা নির্বাচন নিশ্চিত করতেই এখনও তৎপর রয়েছেন। আমরা এই ভূমিকার নিন্দা জানাই এবং তার আশু পরিবর্তন দাবি করি।
সারা দেশ আজ গভীর উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ করছে যে, ক্ষমতাসীন দলীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান স্বেচ্ছাচারিতা, নির্বাচন কমিশনের নিন্দনীয় পক্ষপাতমূলক অবস্থান এবং গণমাধ্যম ও শিল্পী ও পেশাগত গোষ্ঠীসমূহের উপর বলপ্রয়োগ করে আনুগত্য আদায়ের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সমগ্র দেশের উপর একচেটিয়া ক্ষমতার সর্বগ্রাসী ও সর্বাত্মক পরিবেশ রচিত হয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের উপর অবিরাম হামলা, মামলা, হুমকি বন্ধ না হয়ে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অসহনীয় নজিরবিহীন মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। এর কারণে নির্বাচন ঘিরে উৎসবের বদলে চারিদিকে ভয়ের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতোদিন ধরে শুধু প্রার্থীদের প্রচারই বাধাগ্রস্ত হয়নি, নিরাপদে নির্ভয়ে নাগরিকদের ভোট প্রদানের বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা অবিলম্বে এই পরিস্থিতির অবসান দাবী করছি।
আমরা উপরোক্ত ৫ দফা দাবি মেনে নিয়ে প্রার্থীদের নিরাপত্তাসহ সকল ভোটার যাতে নিরাপদে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন এবং সেই ভোট গণনা যাতে স্বচ্ছতার সাথে যথাযথভাবে হয় তা নিশ্চিত করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবারও আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়া গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের স্বাধীন ভূমিকা পালন নিশ্চিত করতে তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবি জানাই। আমরা এখনও আশা করতে চাই যে, একতরফা নির্বাচন নয়, ভয়ভীতি-সন্ত্রাস-সহিংসতা-গুজব-সাম্প্রদায়িকতা-চোরাইটাকা মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন এখন থেকে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
দেশের মালিক দেশের মানুষ, অবাধে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা তাঁদের অধিকার, একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান রক্ষা করে দেশকে সত্যিকার সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া সকল নাগরিকের দায়িত্ব। তাই যতো বাধা আসুক সকল নাগরিক ভয়ভীতি অতিক্রম করে নিজেদের ভোট নিজেরা দেবেন এবং নিজেদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
নাগরিকদের পক্ষে আমরা
১. অধ্যাপক আহমেদ কামাল ইতিহাসবিদ
২. অধ্যাপক আকমাল হোসেন আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩. অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪. শহিদুল আলম আলোকচিত্রী
৫. শিরীন হক নারী অধিকার কর্মী
৬. অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৭. হাসিবউর রহমান চৌধুরী শিক্ষক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
৮. ব্যারিস্টার সারা হোসেন অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট
৯. ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট
১০. অমল আকাশ শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক
১১. জাকির হোসেন মানবাধিকার কর্মী
১২. অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. তাসলিমা আক্তার আলোকচিত্রী
১৪. পারসা সানজানা সাজিদ লেখক, সম্পাদক
১৫. শহিদুল ইসলাম সবুজ শ্রমিক নেতা, অ্যাক্টিভিস্ট
১৬. কামরুল হাসান অ্যাক্টিভিস্ট
১৭. নাসরিন সিরাজ অ্যানি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক
১৮. বীথি ঘোষ শিক্ষক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী
১৯. ড. রুশাদ ফরিদী অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০. মেহজাবীন রহমান নাভা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিস্ট
২১. ড. সামিনা লুৎফা সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২২. ড. মোঃ তাঞ্জীমউদ্দিন খান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৩. অরূপ রাহী লেখক, শিল্পী
২৪. পারভীন জলি ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৫. বাকী বিল্লাহ রাজনৈতিক কর্মী, সাবেক ছাত্রনেতা
২৬. সাদাফ নূর ইসলাম শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৭. সায়েমা খাতুন শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. নাসরিন খন্দকার শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৯. আব্দুল্লাহ আল মামুন শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৩০. সৌভিক রেজা শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৩১. ওমর তারেক চৌধুরী লেখক ও অনুবাদক
৩২. মাহতাব উদ্দিন আহমেদ লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট
৩৩. সায়দিয়া গুলরুখ লেখক, গবেষক
৩৪. রেহনুমা আহমেদ লেখক
Categories: আন্দোলন বার্তা
Leave a Reply