
প্রথম ছবিটি রানা প্লাজা ধসের ৫ম বার্ষিকীতে আয়োজিত স্মৃতি-কাঁথার অংশ হিসেবে বানানো কাঁথার সাথে শ্রমিকপরিবারের একজন; আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার। দ্বিতীয় ছবিটি করোনা মহামারীর কালে শ্রমিকদের ছাটাই, লে-অফ-এর প্রতিবাদে অনলাইন মানবন্ধনের; আলোকচিত্রী বাবুল হোসেন।
তাসলিমা আখতার
‘চব্বিশ এপ্রিল’ রানা প্লাজা ধস ও হাজারো প্রাণ হারানোর আরেক নাম। ২০১৩ থেকে ২০২০ দেখতে দেখতে ৭ বছর। প্রতিবছরের মতো এবারও কথা ছিলো রানা প্লাজা কিংবা জুরাইন কবরস্থানে প্রাণ হারানো মানুষের স্মরণে ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাবার। কথা ছিলো রানা প্লাজার প্রাঙ্গনে মিছিলে স্লোগনে সরব হবার। কথা ছিলো শ্রমিকদের অতীত এবং বর্তমান জীবন সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করার। কিন্তু এ বছর লকডাউন চারপাশ। চারপাশে অনেক নিষেধাজ্ঞা। অনেক নিয়ম কানুন। এবারে ফুল হাতে লোক সমাগম করে কোথাও যাবার তাড়া বা সুযোগও নেই। ২০১৩ সালের রানা প্লাজা যেমন ছিলো পোশাক শ্রমিকদের জীবনে বিরাট ধাক্কা। তেমনি ২০২০ এর ২৪ এপ্রিলের এই সময় পোশাক শ্রমিকসহ বিশ^বাসী আরেক নতুন ধাক্কা মোকাবিলা করছে। কভিড-১৯। এটা ঠিকই কভিডে-১৯ জাত-পাত-শ্রেণী বিচার ছাড়াই প্রবেশ করেছে। একে সামাল দিতে বিশে^র পশ্চিম থেকে পূর্ব টালমাটাল হিমশিম অবস্থায়। কিন্তু সন্দেহ নেই এর প্রভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবি নি¤œআয়ের মানুষ, পোশাক শ্রমিকরা যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রানা প্লাজা দিবস থেকে শুরু করে আজকে করোনাকালে আমাদের পোশাক শ্রমিকরা কোথায় কেমন আছেন, করোনার ধাক্কা কিভাবে সামাল দিচ্ছেন তার আলাপই করবো। তার আগে স্বশ্রদ্ধ চিত্তে স্বরণ করি রানা প্লাজার হাজারো প্রাণকে। স্মরণ করি যারা ২৪ এপ্রিল প্রাণ এবং স্বপ্ন হারিয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে এবং যারা সেই দু:সহ স্মতি বয়ে বেড়াচ্ছে তাদের সবাইকে।
সবার স্মরণে আছে রানা প্লাজা ধসের পর দেশে এবং বিশে^ কিভাবে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা খবরের শিরোনাম হয়েছিলো। ঐ শিরোনাম হতে প্রাণ দিতে হয়েছিলো ১১শ’র বেশী শ্রমিককে। দুর্ঘটনার মোড়কে ঢাকা ‘কাঠামোগত হত্যাকান্ডে’ প্রাণ হারিয়েছিলো তাঁরা। এশিয়ার এক কোনে পড়ে থাকা দুনিয়ার সস্তা মজুরদেরই প্রতিনিধি তাঁরা। তখন ৩০০০ টাকা ছিলো ন্যুনতম মোট মজুরি। সেদিন হাজিরা বোনাস কাটা পড়া আর সময় মতো বেতন না পাবার ভয়ে বাধ্য হয়ে গিয়েছিলো শ্রমিকরা কারখানায়। তারপর একটা ফাটল আর মালিক-সরকারের সবার সম্মিলিত অবহেলায় প্রাণ হারায় হাজারো শ্রমিক। এই অবহেলার দায় থেকে বিদেশী বায়াররাও মুক্ত নয়। এরপর থেকেই শ্রমিকদের জীবনের নিষ্ঠুর গল্পগুলো পর্দার আড়াল থেকে দগদগে শরীর নিয়ে সবার সামনে আসতে শুরু করে।
রানা প্লাজার সেই ভয়াবহ উদ্ধার কাজ, আটকা পড়া শ্রমিকদের বাঁচার আকুতি, স্বজনদের আহাজারি, মৃত মানুষের লাশের স্তুপের দৃশ সবাইকে বিচলিত করে। গা বাঁচিয়ে চলা দেশের ভদ্রলোক সমাজ থেকে পুরো দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক ভোক্তারাও শিউরে উঠে এ ঘটনায়। শ্রমিকের ‘মানবিক’ অধিকার নিয়ে আলাপ তৈরি হয়। শ্রমিক-মালিক-সরকার-বায়ার পুরো সাপ্লাই চেইন জুড়ে একইসঙ্গে ‘নিরাপত্তার’ প্রসঙ্গ পায় বিশেষ গুরুত্ব। উঠে আসে শ্রমিকের মজুরি, ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়ও। বাংলাদেশের পোশাক মালিকরা ঐ সময়কে আখ্যা দেয় ‘ইমেজ’ বা ‘ভাবমুর্তি’ হারানোর সময় হিসাবে। ‘ভাবমুর্তি’ ফিরিয়ে আনা এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের শিল্প বিস্তারের অঙ্গীকার নিয়ে এগুবার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা আসে ২০১৪-এর ঢাকা অ্যাপারেল সামিটে। ২০২০-এ সেই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌছেও যান তারা। প্রায় ৪ দশক ধরে গড়ে উঠা এই শিল্প বর্তমানে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইল ফলকে উত্তীর্ণ হয়েছে।
কিন্তু শ্রমিকরা কি পেলো রানা প্লাজায় ১১ শ প্রাণ, স্বপ্ন এবং কর্মক্ষম সদস্য হারিয়ে? ঐসময় অর্থনৈতিক চাপ সেভাবে ছিলো না। তাই ‘ইমেজ’ রক্ষার কথা বলে অনেক দেশী-বিদেশী ‘দান-অনুদান’ আসে ‘মানবিকতা’র স্লোগানে। কিন্তু মুলত ‘মানবিকতা’ আর ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষার কথাতেই শ্রমিকদের প্রকৃত অবস্থা ও আইনী অধিকারের অনেক প্রশ্ন ধামাচাপা পড়ে। ফলে কারখানার নিরাপত্তার কিছু অগ্রগতি হলেও শাস্তি হয়নি ভবন মালিক সোহেল রানার। শাস্তি হয়নি ঐ ঘটনায় যুক্ত সরকারী কর্মকর্তা ও আর সব কারখানার মালিকদের। তৈরি হয়নি কারখানার শ্রম পরিবেশ তদারকির শক্তিশালী দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর। বড় কোন রদবদল হয়নি ক্ষতিপুরণ আইনের, শ্রমিকদের আইনী অধিকারের।
৪০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পখাতে পৌছাতেই কভিডের ধাক্কা। সারা বিশে^ ইতিমধ্যে কভিড-১৯ এ প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশে ৩৩৮২ জন আক্রান্ত। মৃত ১০০। যদিও করোনার লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এর প্রায় দ্বিগুণ। এই আক্রান্ত ও মৃতের মাঝে পোশাক শ্রমিকরাও আছেন। অদৃশ্য করোনা ভাইরাস আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এই আতংকে সবাই অস্থির। চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো তৈরী করেনি প্রতিষেধক। প্রচন্ড ছোঁয়াচে এই রোগ আক্রান্ত হতে পারে যে কাউকে। তাই সামাজিক বিচ্ছেদ এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার নির্দেশ চারদিকে। কিন্তু এই নির্দেশ মধ্যবিত্তর মতো মানতে পারছে না শ্রমজীবি মেহনতি মানুষ কিংবা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
একদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে বিশ^ জুড়ে অর্থনীতিতে করোনার ফলে মন্দ প্রভাব। আমাদের দেশও এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় শ্রমজীবী ও পোশাক শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি কতটুকু? বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেহেতু অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, রানা প্লাজার ঘটনার মতো এখন আর মালিকদের ‘মানবতা’ ও ‘ইমেজ’ রক্ষার আওয়াজ দেখা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির প্রাথমিক ধাক্কায় তাদের খোলস বেরিয়ে পড়েছে। উন্মোচিত হয়েছে যে সংকটে পড়লে যাদের শ্রমের ওপরে তাদের এতোদিনের ব্যবসা চলেছে তাদের রক্ষার জন্য মালিকদের কোন সামন্যতম ব্যবস্থাও নেই। শ্রমিকদের জন্য আপদকালের কোন জরুরী নিরাপত্তা তহবিল নাই। তাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন বীমা নেই। এমনকি ২-৩ মাসের বেতন দেবার মতো সামর্থ্যও যেন নেই তাদের। সেই প্রকাশই তারা ঘটাচ্ছে।
দেশে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ২৫ মার্চ পর্যন্ত পুরোপুরি কাজে ছিলো। অথচ সেই বেতনও মালিকরা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে অধিকাংশ কারখানাই তাদেরকে বেতন না দিয়ে রাস্তায় রেখেছে। এখনো পর্যন্ত আট’শ এর উপরে কারখানার শ্রমিকরা বেতন পায়নি। বাসা ভাড়া, দোকানে বাকী, পরিবার পরিজন নিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে শ্রমিকদের। মার্চ মাসের প্রায় পুরোটা কাজ করলেও সেই বেতন দিতেই মালিকপক্ষ ক্রয়াদেশ বাতিলের অযুহাত দিচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার চেয়ে রুটি রুজির দু:শ্চিন্তায় তীব্র হয়েছে। এখন তাদের একটাই ভাবনা মাসের শেষ হলে কিভাবে চলবে। এই অবস্থা আবারো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো ৪০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা যাদের শ্রমে চলে এই রাষ্ট্রে তাদের কোন প্রকৃত অধিকার নেই। মালিক পক্ষ ও সরকারের কারোই কোন পরিকল্পনা নেই।
২৬ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পোশাক শ্রমিকদের স্বস্তিতে একদন্ড বসার সময় হয়নি। একটার পর একটা দুর্যোগ যেন ঝড়ের মতো বার বার তাদের মাথার ওপরের চালটা সরিয়ে নিচ্ছে। মনে পড়ছিলো রানা প্লাজার ২৪ এপ্রিলের দিনগুলো। কিভাবে রানা প্লাজার আহত শ্রমিক এবং স্বজনরা আপনজন হারানোর বেদনাটুকুও উদযাপন করতে পারেনি। সেই দিনগুলোতে তারাও কেবল ছুটেছে এখান থেকে সেখানে। কখনো স্বজনের খোঁজে, কখনো ক্ষতিপুরণের খোঁজে, কখনো বিচারের দাবিতে। আজকে যখন করোনার ধাক্কায় বেসামাল অবস্থায় শ্রমিকরা তখনও যেন সেই একই দৌড়ে ব্যস্ত। একবার বাড়ী যাওয়া। আবার পায়ে হেঁটে, ট্রাকে, ভ্যানে কাজের অঞ্চলে আসা। আবার বেতন না পেয়ে রাস্তায় হাজারে হাজারে জড়ো হওয়া। এরপর আবার অস্থায়ী শ্রমিকদের কাজ হারানো। ছাঁটাই। সবশেষে লেঅফ। এসব কিছুতে শ্রমিকরা দিকবিদিক শূণ্য। লেঅফে শ্রমিকরা কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে তার অঙ্কটাও তাদের কাছে প্রাথমিকভাবে পরিস্কার ছিলো না। পরে টের পেল শ্রম আইনের ১২ ও ১৬ ধারা লেঅফে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত দরজায়। জীবন আর পেট চলার দু:শ্চিন্তা গ্রাস করছে পোশাক শ্রমিকদের।
লেঅফে শ্রম আইনের ১৬ ধারার (২) (৫) ও (৬) উপধারা অনুযায়ী সকল শ্রমিক বেসিকের অর্ধেক এবং বাসা ভাড়া পাবেন। লেঅফ ৪৫ দিনের অধিক হলে বেতন আরো কমে দাঁড়াবে বাসা ভাড়াসহ বেসিকের ২৫% এ। তার মানে একজন শ্রমিক যে ন্যূনতম ৮০০০ টাকা পেতো (৪১০০ মুল বেতন, বাড়ীভাড়া ২০৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা যাতায়াত ৩৫০ টাকা খাদ্যভাতা ৯০০=৮০০০) তিনি এখন বেসিকের অর্ধেক অর্থাৎ কেবল ২০৫০ টাকা ও বাসা ভাড়া ২০৫০ টাকাসহ মোট ৪১০০ টাকা পাবেন। যেটি ২০১৩-২০১৮ এর মোট বেতনেরও অনেক কম। শ্রমিক কোন রকম চিকিৎসাভাতা, দুপুরে খাদ্য ভাতা, যাতায়াত টাকা পাবেন না। লেঅফ যদি ৪৫ দিনের বেশী হয় তাহলে শ্রমিকরা পাবেন বেসিকের ২৫% অর্থাৎ ১০২৫ আর বাসা ভাড়া ২০৫০ মিলে মোট ৩০৭৫ টাকা। যাদের চাকরীর বয়স ১ বছরের কম তারা লেঅফে কোন সুবিধাই পাবেন না। যে শ্রমিকরা ্ওভার টাইম এবং পরিবারের আর সবার আয় একসাথ করে কোন মতে বেঁচে ছিলো আজ করোনার দুর্ভোগের আগে জীবিকার দুর্ভোগই যেন তাঁদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে।
এই হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির প্রধান শক্তি রপ্তানীর ৮৪% আয় এনে দেয়া শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা। ৪ দশক থেকে এইখাতে ব্যবসা করে ৪০ বিলিয়ন ডলারের খাত বিকশিত হয়েছে। কিন্তু সংকটে পড়লে মালিক কিংবা বিদেশী বায়াররা কোন দায়িত্ব নিতে সমর্থ্য না এই শ্রমিকদের। মালিক সরকারকে আর সরকার মালিককে, একবার একাধ আরেকবার ওকাধে দায়িত্ব ঠেলছে। কে নেবে এই করোনার সময় শ্রমিকদের দায়িত্ব। শ্রমমন্ত্রী বললেন যারা ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বেতন দেবে না তাদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু ঠিকই তারপরেও শ্রমিকরা বেতন পায়নি। সরকার একবার বলছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে, অন্যদিকে মালিকপক্ষ অনুরোধ করছে ছুটি দেবার। মালিকপক্ষ একবার পরিবহন ফেডারেশনকে চিঠি দিচ্ছে পরিবহন চালাবার, আরেকবার বলছে লকডাউন পর্যন্ত কারখানা চলবে না। লেঅফের জন্য মালিকপক্ষ কারখানা অধিদফতরের ঘোষণা চেয়ে অনুরোধ করছে। অন্যদিকে সরকার বলছে যারা লেঅফ করবে তাদের ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়া হবে না। এভাবে দায়িত্ব একাঁধ ওকাঁধ করার মধ্য দিয়ে সরকার ও মালিক পক্ষ সময়ক্ষেপনের কৌশল নিয়েছে। যেটা আসলে শ্রমিকদের বোকা বানাবার নিষ্ঠুর খেলা। এর মধ্যে দিয়ে কেবল শ্রমিকদেরই সয়, পুরো দেশবাসীকেই তারা বিরাট স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
রানা প্লাজার সময় আমরা দেখেছি সামনে আনা হয়েছিলো মালিকদের ‘ইমেজে’র প্রশ্ন। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য সেটা ছিল তাদের প্রাণ কাড়ার ঘটনা। আজকেও আমরা দেখছি তেমনি প্রবণতা। অর্থনৈতিক স্বার্থকে যতটা প্রধান করে তোলা হচ্ছে তার মধ্যে শ্রমিকদের প্রাণ বাঁচানো, স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব নিয়ে হাজির নেই। রানা প্লাজার ঘটনায় নিহত-আহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ না দিয়ে যেভাবে ভিক্ষুকের মতো দাড়ে দাড়ে ঘুরানো হয়েছিলো, এবারও কি সেই ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছে? এমনকি মানবিকতার আওয়াজও এখন আর তেমন শোনা যাচ্ছে না। পুঁজির স্বার্থ আর শ্রেণী ও ক্ষমতা সম্পর্কের বাইরে মানবতার আওয়াজ যে কেবল ফানুষ মাত্র সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু শ্রমিকরা তো কোনো দয়া কিংবা করুণার প্রার্থী নয়! শ্রমিকদের শ্রমঘামে অর্থনীতি দাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশই তো শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষা। বেতন এবং জীবনের নিরাপত্তা তাদের পূর্ণ অধিকার। লকডাউনের দায় তো শ্রমিকের নয়। তাহলে কেন তাদের দায়িত্ব নিতে সরকার, মালিকপক্ষ এবং বায়াররা অপারগ? এই প্রশ্নের উত্তর সরকার, মালিক এবং বায়ার ৩ পক্ষকেই দিতে হবে।
করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগে চারপাশ লক ডাউন করার পাশাপাশি শ্রমিকের পেট লক ডাউন করার যে নিষ্ঠ’র আয়োজন তারজন্য ইতিহাস মনে রাখবে সবাইকে। আর এই ইতিহাসে এখন যে শ্রমিকরা খাদ্যের অভাবে রাগে ক্ষোভে পথে নামছে বা নামতে পারছে না তারা আবারও জেগে উঠবে। করোনার এই ভয়াবহ সময়ে শ্রমিকরা আশা করেছিলো রাষ্ট্র্রের আর সব নাগরিকের মতো তারাও মর্যাদা আর সম্মান পাবে। তাদের দায়িত্বও সরকার নেবে। ভিক্ষা হিসাবে নয়, পাওনা অধিকার হিসাবেই সরকার মালিক এবং বায়ারের এখন শ্রমিকদের দায়িত্ব নেবার সময়। আর তা না নিলে হাড্ডিসার, চুল উস্কুখুস্কু, পেটের খীদায় গজগজ করা শ্রমিকরা তাদের পাওনা মিটাতে মুখোমুখি হবে সবার। এক দেশে দুই নীতি রুখে দাঁড়াবে তারা। রানা প্লাজার ঘটনা পোশাক কারখানার ইতিহাসে যেমন একটা দু:সময়ের নাম। তেমনি করোনার এই সময়ও পোশাক খাতের অধ্যায়ে আরেক দু:সময় হিসাবে যোগ হবে।
লেখক: তাসলিমা আখতার, সভাপ্রধান গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি ও আলোকচিত্রী।
Categories: আন্দোলন বার্তা, বাংলাদেশে নারীবাদ
Leave a Reply