যারা ঢাকা শহরে বাসে যাতায়াত করেন তাদের বিনোদনের শেষ নাই। জ্যাম যানযটের শহরও মধুময় (তিক্ত অর্থেও বটে) হতে পারে যদি বাসে যাত্রী হওয়া যায়। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দাড়িয়ে ছিলাম। কোনরকম ব্যবস্থা না করতে পেরে সামনে এসে দাড়ানো ‘সিটিঙ সার্ভিস’ এ উঠে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বিশ্বাস করুন পাঠক বন্ধুরা আমি যথেস্ট ‘শালীন’ পোশাক পরেছিলাম। (জিনস-লম্বা ফতুয়া- ওড়না সবই ঠিকঠাক ছিলো) বাসে ওঠার পরই যেটা হলো, এই বয়সী ‘মোটা মহিলা’ বাসে উঠেছে প্যান্টশার্ট পইড়া এ নিয়ে উসখুশনি ভাব। এক ভাইজানের পাশে বসে পড়তেই তিনি আরেকটু চেপে বসলেন। একবার আড়চোখে দেখে নিলেন পাশের মানুষটাকে। মজার বিষয় শুরু হলো এরপরে। এদিক থেকে কেউ একজন বলল- দোস্ত কি দিন কাল আইল, জিনস পরা মা। কেউ জোরে কেউ খুক খুক করে হেসে উঠলো। আমি ততোক্ষণে মুখ শক্ত করে ফেললাম। কিন্তু নারীর পোশাক নিয়ে হাসাহাসিরত মানুষগুলোকে কি উপায়ে থাপপড় মারলে লাগবে সেটা ভাবছি। এরপরই মাথায় এলো বদবুদ্ধি। সেটাই শেয়ার করতে চাই

হেলপার এলেন বাসভাড়া নিতে। আমি একশ টাকার নোট দিলাম। সে জিজ্ঞেস করলো কোখায় যাবেন। আমি বেশ অদ্ভুত ভঙ্গিতে বললাম ‘দ্যানমন্ডি’। তারপরে সে ভাঙতি নাই বইলা টাকা নিয়া পিছনের দিকে গেলো ভাড়া কাটতে। সব ভাড়া নিয়ে সে আবার যখন সামনে আমার কাছে পৌছালো তারপরের কথপোকথন শোনেন

আমি- হেই গিভ মি মাই মানি ব্যাক
হেলপার- থ (আমি তাকে খাটো করতে চাইনি ভাষাগত ঢঙ কইরা। পরেরগুলা পড়েন প্লিজ, আগেই গালায়েন না আমারে)
আমি- হাত গুটায়ে আবারও একই কথা বললাম
হেলপার- মানিব্যাগ হারাইসেন?
আমি- থ (কারণ আমি বাংলা বুঝি না)

হেলাপার একটা চিল্লাচিলিল লাগায়ে দিলো। এই বেটির মানিব্যাগ হারাইসে কয়। এদিকে ওদিকে খোজে। দেখলাম যারা হাসতেসিলো তারাও এদিক ওদিক পড়সে কিনা খুজতে শুরু করসে। যা তা অবস্থা।

পিছন দিক থেকে একজন ছেলে এসে পাশে দাড়িয়ে জানতে চাইলো- ইউ ফ্রম? (একটু আগে হাফ টিকিটিএর টাকা দিসে স্টুডেন্ট ভাড়া)
আমি- শ্রীল্যঙখা।
স্টুডেন্ট- লুজ ইওর মানিব্যাগ?
আমি- নো? হোয়াই?
স্টুডেন্ট- এভরিবডি সার্চিঙ ইওর মানিব্যাগ
আমি- হোয়াই? এই বলে আমি মানিব্যাগটা ব্যাগের ভিতর থেকে বের করে দেখালাম।

এবার ছেলেটা হেলপারকে ডেকে বলল- ওই ব্যাটা হের মানিব্যাগতো হেরলগেই আছে। বলদ। এই বইলা ছেলেটা আবার তার জায়গায় ফিরে যাচ্ছিলো। আর এমন সময় আমি আবার বললাম- হেই গিভ মি মাই মানি ব্যাক। এবার ছেলেটা হেলপারকে বলল- উনার টাকা ফেরত দাও। উনি বাকি টাকা চাইতেসেন। এবার পিছন থেকে বলে উঠলো একজন- তাও ভালো- বিদেশী। পাশের ভদ্রলোক যিনি আমি বসার পর একটু চেপে বসেছিলেন, ছেলের সিটে তার পাশে আমি বসায় একটু বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি এবার একটু স্বস্তি নিয়ে বসলেন। আমি ততোক্ষণে প্রায় গন্তব্যে পৌছে গেছি। নামার প্রস্তুতি নিতে যাব এমন সময় হেলপার পিছনে ফিরে বলল- ধানমিন্ড… না না দানমন্ডি। বইলা টিচ কইরা এমন ফ্যাক করে দিলো হাসি।

গেট পযন্ত যাইতে গিয়া শুনলাম বাংলায় তুমুল আলাপ চালনা শুরু করসেন কয়জনাতে- ওই এলাকায়তো এই পোশাকে কেউ থাকেনা। শ্রীলঙ্কা ভারতের মেয়েদের বিদেশী বলে বুঝা মুশকিল, গুলশানে গেলে দেখা যায় মেয়েদের কি হাল। হেফাজতের দিন এরা ভালো শায়েস্তা হইসে, রাস্তায় বের হয় নাই, আরও কত কি। বাস থামলো। নামার আগে গেটে দাড়ায়ে কইলাম-চুলকানি এতো বেশি হইলে কাপড় নস্ট হবেতো। চোখে পর্দা দেন।

copyright Keirvi

2 responses to “জার্নি বাই বাস: নারীকে বিনির্মানের শতচেষ্টা”

  1. Nitra apni paren o – er pore ei sob lokder chobi tuben mobile phone diye tarpor upload kore diben

  2. Great piece on daily life resistance !

Leave a reply to salmashirin Cancel reply

Trending