[এই লেখাতে মালিক ও সরকারের নৃশংসতার ভিডিও এবং আলোকচিত্র আছে ]
বাংলাদেশে শিল্প কারখানায় মালিক-সরকারের নিয়মতান্ত্রিক অব্যস্থাপনা ও শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বভাবজাত অবহেলার কারনে শ্রমিক হত্যার যে দীর্ঘ ইতিহাস তার সাম্প্রতিকতম অধ্যায় হল — কালার ম্যাক্স ফ্যাক্টরি অগ্নিকাণ্ড। আশুলিয়ার জিরাবতে অবস্থিত কালার ম্যাক্স ফ্যাক্টরিতে সিগারেট লাইটার উৎপাদিত হত। কারখানাটি বে-আইনি। উৎপাদন কাজ চালানোর জন্য কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ অন্য সরকারি সংস্থার যে অনুমোদন প্রয়োজন তার কোনটি-ই এই কারখানাতে ছিল না। কর্মরত ১৫০জন শ্রমিকের প্রায় সকলেই শিশু শ্রমিক। তারা কোনো রকম প্রতিরক্ষা জ্যাকেট বা মাস্ক ছাড়াই সকাল ৮টা থেকে রাট ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের দাহ্য পদার্থেভরা এই কারখানাটিতে কাজ করতো। নুন্যতম মজুরি কাঠামো তোয়াক্কা না করে শ্রমিকদের ঘণ্টা বা পিস রেটে বেতন দিত। একজন আহত শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, কারখানায় গিয়ে তাদের ম্যানেজারের কাছে হাজিরা দিতে হত, ছিল না কোন নিয়োগ পত্র বা আইডি কার্ড। গত ২২শে নভেম্বর যখন এই অবৈধ কারখানাটিতে যখন আগুন লাগে, তখন সেখানে কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসকে জানাতেও অনেক দেরি করে। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, মালিক পক্ষ কাগজপত্র ঠিক না থাকায়, ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করেছে।
কারখানার নামের এই মৃত্যুফাঁদে আখি, রকি, মাহমুদা, ও সাকিনা মারা গিয়েছে। আরও ২১জন আগুনে পোড়া শ্রমিক জীবনের সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এ ধরণের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকতা ও লোকদেখানো নিরপেক্ষতার স্বার্থে সাধারণত সংশ্লিষ্ট থানা নিজে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি ট্যাম্পাকো অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে আমরা তাই দেখেছি, যদিও মালিক এখন জামিনে। কিন্তু কালার ম্যাক্স ফ্যাক্টরি অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে আশুলিয়া থানার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। শিশু শ্রম নিয়োগ ও আগুন লাগার পরে ফায়ার সার্ভিসকে ডাকতে বিলম্ব করার কারণে শ্রম আদালতে দুটো মামলা দায়ের করা হলেও ফৌজদারি আইনে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়া হয়নি। বরং সংসদ সদস্য ড. এনামুর রহমান এবং ঢাকা ৭ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ হাজী সেলিমকে দেখা যাচ্ছে মালিক পক্ষের শাস্তিযোগ্য অবহেলাজনিত হত্যার অপরাধকে জায়েয করবার অপারেশন নামতে।
ঠোটকাটার পক্ষ থেকে সংগৃহিত এই ভিডিও-টি তার প্রমান পাবেন। সেলফোন পেপারে মোড়ানো চকমকে প্যাকেট ভর্তি ফল কিনে ICU-তে গিয়ে মালিকের স্ত্রী-রা দগ্ধ শ্রমিকদের বলছেন, “সাংবাদিকরা আসলে বলবেন, যে মালিকপক্ষ অনেক খোঁজ নিচ্ছে” –
অগ্নিকাণ্ডের এক সপ্তাহে পরে যমের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে যখন ভূমিহীন দিন মজুর সকিনা যখন মারা গেলো, তখন সরকারকেও আমরা একই ভূমিকায় পেলাম, সকিনার বাবা খালি পায়ে DMCH-এর জরুরী মর্গ থেকে কলেজ মর্গে দৌড়াচ্ছে, তার মাঝে জোর করে তাকে টেনে নেয়া হলো বার্নIUNIT-এর এক কর্মকর্তার অফিস-এ শোকতার বাবার পাশে দাঁড়িয়ে হলো দুর্যোগ ও ত্রান অধিদপ্তরের আমলাদের হাসিমুখে ফটোসেশন. নিচের ভিডিওটিতে দেখুন কিভাবে সরকারি ত্রান বিষয়ক কর্মকর্তা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সকিনার দাফনের জন্য দেয়া অনুদানের টাকা গুনছে–
কারখানাতে আগুনে পুড়িয়ে শ্রমিক হত্যার প্রেক্ষাপটে মালিক শ্রেণী ও সরকারের দান করার আয়োজন খেয়াল করে দেখলে, এই রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় ত্রাণ ও দানের রাজনীতি স্পষ্ট হয়, অর্থাৎ –
হত্যাকাণ্ডের অপরাধ = মালিকের মহানুভবতার সুযোগ
Categories: আন্দোলন বার্তা
Leave a Reply