হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
গত ১৮ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টায় সশস্ত্র মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা রাঙামাটির কুদুকছড়ি ইউনিয়নের আবাসিক এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থিত গণসংগঠনের নেতাকর্মীরা যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেখানে পৌঁছে এলোপাতাড়িভাবে ব্রাশফায়ার শুরু করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমা প্রাণরক্ষার্থে একটি নিকটস্থ বাড়িতে আশ্রয় নেন। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি যে, সেখানে ঢুকে মারধর করতে করতে তাদের টেনেহিঁচড়ে বের করে সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করে। ব্রাশফায়ারে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ধর্মসিং চাকমা পায়ে গুলিবিদ্ধ হন; যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা দুর্গম এলাকা থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে এলাকাবাসীদের উদ্যোগে নির্মাণ করা ছাত্রমেসে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এত দিন হয়ে গেল কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কার্যকর উদ্ধার তৎপরতা চোখে পড়েনি। সরকার রহস্যজনকভাবে চরম নির্লিপ্ত। রাজনৈতিক কর্মীদের দিনে-দুপুরে সন্ত্রাসীদের দ্বারা অপহরণে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
উল্লেক্ষ্য যে, গত বছর পিসিপি ছাত্রনেতা রমেল চাকমার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে টর্চারজনিত মৃত্যুর গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন মন্টি চাকমা; এ বছর জানুয়ারি মাসে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার মারমা বোনদের যখন রাঙ্গামাটি হাসপাতালে অন্তরীণ রাখা হয় তখন দয়াসোনা চাকমা একাধিকবার ট্রমা-আক্রান্ত তরুণীদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে হাসপাতালে যান। আরো উল্লেখ্য যে, মারমা বোনরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দায়ী করেছেন।
গত কয়েক মাস ধরে পাহাড়ে দিনেদুপুরে একের পর এক চলছে এই সন্ত্রাসী মুখোশবাহিনীর ভয়াবহ সন্ত্রাস। এই মুখোশধারী সন্ত্রাসীরাই জানুয়ারির শুরুতে নিজ বাসা থেকে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে খুন করে। প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে পদে পদে সেনাবাহিনীর নজরদারীর মধ্যে থাকতে হয় সেখানে এই প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক যে কীভাবে সেনাবাহিনীর নাকের ডগায় পাহাড়ে এই নব্য-সৃষ্ট মুখোশবাহিনীর সন্ত্রাসীরা ফিল্মি কায়দায় পাহাড়ের রাজনৈতিক কর্মীদের উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের খুন করে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং উত্তরোত্তর আরো বেপরোয়া হওয়ার সাহস পাচ্ছে? নব্য-সৃষ্ট মুখোশবাহিনীর সন্ত্রাস ভয়ংকরভাবে মানবাধিকার লংঘন করছে ও পাহাড়কে নিশ্চিতভাবে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে ২১ বছর আগে অপহরণ করা হয়েছিল, অপহরণকারীরা আজও ধরা পড়েনি, কোনো বিচার হয়নি। এর পাশাপাশি পাহাড় সমতলসহ সারা দেশেই গুম-খুন-ধর্ষণ ও অপহরণের অবাধ তৎপরতার প্রতি সরকারের নির্লিপ্ত ভুমিকায় আমরা ক্ষুব্ধ।
আমরা মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমার অপহরণসহ গুম, খুন, ধর্ষণের বিচারহীনতা এবং সরকারের নির্লিপ্ততার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে অপহৃত নেত্রীদ্বয়কে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রদানের দাবি জানাই।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং ইমেইলে সংহতি জানিয়েছেন নিম্নোল্লিখিত উদ্বিগ্ন নাগরিকগণ:-
১. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসার এমেরিটাস, ঢা.বি
২. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী
৩. সুলতানা কামাল, কো-চেয়ার, সিএইচটি কমিশন
৪. সৈয়দ আবুল মকসুদ, লেখক, কলামিস্ট
৫. ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
৬. আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক, অর্থনীতি, জা.বি
৭. মালেকা বেগম, অধ্যাপক, লেখক, গবেষক
৮. শিরীন হক, নারী আন্দোলন কর্মী
৯. আহমেদ কামাল, ইতিহাসবিদ
১০. সি আর আব্রার, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢা.বি
১১. আফসান চৌধুরী,অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
১২. ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. জোনায়েদ সাকি, গণসংহতি আন্দোলন
১৪. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী
১৫. লুবনা মরিয়ম, শিল্পী
১৬. সোনিয়া নিশাত আমিন, ইতিহাসবিদ
১৭. ঢালী আল-মামুন, শিল্পী
১৮. দিলারা বেগম জলি, শিল্পী
১৯. আমেনা মহসীন, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢা.বি
২০. গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ, ঢা.বি
২১. নূর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী
২২. জ্যোতির্ময় বড়ৃয়া, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
২৩. তাসলিমা আক্তার, আলোকচিত্রী
২৪. ইলোরা চৌধুরী, অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস, বস্টন (যৃক্তরাষ্ট্র)
২৫. লীসা গাজী, লেখক, নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেত্রী
২৬. দীনা সিদ্দিকী, অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
২৭. সামিনা লুৎফা, শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান, ঢা.বি
২৮. ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ, ঢা.বি
২৯. মুনেম ওয়াসিফ, শিল্পী
৩০. বীণা ডি’কস্টা, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি (অস্ট্রেলিয়া)
৩১. মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক, একাউন্টিং বিভাগ, ঢা.বি
৩২. নাইম মোহায়মেন, পিএইচডি গবেষক, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাষ্ট্র)
৩৩. জোবায়দা নাসরীন, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ঢা.বি
৩৪. ঋতু সাত্তার, শিল্পী
৩৫. ফারজানা ববি, ডকুমেন্টারি নির্মাতা
৩৬. মাহা মির্জা, পিএইচডি গবেষক (জার্মানি)
৩৭. সাদাফ নূর ইসলাম, পিএইচডি গবেষক, ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাজ্য)
৩৮. অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, আইনজীবী
৩৯. হানা শামস আহমেদ, পিএইচডি গবেষক, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (কানাডা)
৪০. ইলিরা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
৪১. নাজনীন শিফা, পিএইচডি গবেষক, জেএনইউ, দিল্লী
৪২. পার্সা সাজিদ, লেখক, শিক্ষক, গবেষক
৪৩. রেজাউর রহমান লেনিন, অধিকারকর্মী, শিক্ষক, গবেষক
৪৪. ইলোরা শেহাবউদ্দিন, অধ্যাপক, রাইস ইউনিভার্সিটি, টেক্সাস (যুক্তরাষ্ট্র)
৪৫. জাকির হোসেন, নাগরিক উদ্যোগ
৪৬. দেলওয়ার হোসেন, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবারা (যুক্তরাজ্য)
৪৭. নাসরিন খন্দকার, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জা.বি
৪৮. কাজলী শেহরীন ইসলাম, শিক্ষক, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ, ঢা.বি
৪৯. মোঃ তাঞ্জীমউদ্দীন খান, শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢা.বি
৫০. কবিতা চাকমা, গবেষক (অস্ট্রেলিয়া)
৫১. রুমানা হাশেম, ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট লন্ডন (যুক্তরাজ্য)
৫২. সালমা আলী, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
৫৩. সাদিয়া আরমান, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট
৫৪. স্বাধীন সেন, অধ্যাপক, প্রতœতত্ত্ব, জা.বি
৫৫. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জা.বি
৫৬. সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জা.বি
৫৭. আইনুন নাহার, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, জা.বি
৫৮. রায়হান রাইন, শিক্ষক, দর্শন, জা.বি
৫৯. আনিসা পারভীন জলি, শিক্ষক, ইতিহাস, জা.বি
৬০. ফাহিমা আল ফারাবি, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, জা.বি
৬১. মোজাহিদুল ইসলাম, শিক্ষক, ইতিহাস, জা.বি
৬২. শহীদ সুমন, শিক্ষক, দর্শন, জা.বি
৬৩. মাহমুদ সুমন, শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, জা.বি
৬৪. নাসরিন সিরাজ, নৃবিজ্ঞানী, চলচ্চিত্র নির্মাতা
৬৫. সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক
৬৬. রেহনুমা আহমেদ, লেখক
Categories: আন্দোলন বার্তা
Leave a Reply