
রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সমর বিজয়, সুকেশ, মনোতোষ এবং রূপন চাকমার সাহসী আত্মদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এলাকাবাসী নির্মাণ করেছিল একটা শহীদ মিনার। ১২ জুন ২০০৯; বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি। আলোকচিত্র সায়দিয়া গুলরুখ।
কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে ১৯৯৬ সালের ২৭শে জুন পাহাড়ি গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন তিন পার্বত্য জেলায় অর্ধদিবস অবরোধ কর্মসূুচি ঘোষণা করেছিল। এই কর্মসূচি প্রতিহত করতে তৎপর করা হয়েছিল পুলিশ, আনসার-ভিডিপিসহ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের, আরও সক্রিয় করা হয়েছিল বাঙালি সেটলারদের। তখনকার পত্রিকায় খবর এসেছিলো, “কর্তব্যরত জনৈক পুলিশের হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার নুরুল ইসলাম গুলি চালায়। সে গুলিতে রূপকারী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র রূপন চাকমা গুলিবিদ্ধ হয়” ( সংবাদ, ৭ জুলাই ১৯৯৬)।
রূপন চাকমার লাশ খুঁজে পায়নি তার পরিবার। হত্যার বিচার পায়নি সহযোদ্ধা বন্ধু ও পরিবার। এই বছর কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবসে ঠোঁটকাটাতে রূপন চাকমার মা বাসন্তী চাকমার সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি পড়ে স্মরজিৎ চাকমা সেইদিনটির (২৭ জুন, ১৯৯৬) স্মৃতিচারণ করেছেন। শহীদ রূপন চাকমার দুর্বার সাহসের কথা লিখেছেন, লিখেছেন সেই সময়কার জুম্ম শৈশব-কৈশোরের কথা।
১
আজ ১২ই জুন ২০২০। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি অধিকার রক্ষায় অগ্রগামী ও মুক্তিকামী জুম্ম জনগনের তথা নিপীড়িত ও বঞ্চিত পাহাড়ি নারী সমাজের এক অকুতোভয় নারী নেত্রী কল্পনা চাকমাকে । আরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি কল্পনা চাকমা অপহরণ পরবর্তী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মদদে সেটলার বাঙালিদের হাতে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার ও গুম হওয়া শহীদ রূপন, সুকেশ, সমর ও মনতোষ চাকমাদাকে।
আজকের এইদিনে ১২ই জুন ১৯৯৬ সালের মধ্যরাতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস গং অপহরণ করেন। এটা এখন সবার জানা।
আমার এই স্মৃতিচারণায় কল্পনা চাকমাকে অপহরণ পরবর্তীকালে ঘটে যাওয়া দগদগে কাহিনী তুলে ধরবো। কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে অনেকে জানলেও অপহরণের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা দুর্বার আন্দোলন দমনের নির্মম ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা। তারা জানেন না শহীদ রূপন, সুকেশ,সমর ও মনতোষ দার সেটেলার বাঙালি কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যার শিকার ও গুম হওয়ার ঘটনা।
বাঘাইছড়ি উপজেলায় আমি ছোট বেলা থেকে দুটো জায়গায় বড় হয়েছি । একটি কজইছড়ি আর্মি ক্যাম্পের কিছু দূরে (তৎসময়ে অনেক ঝাড়ঁ জঙ্গল ছিল সেখানে) রাবার বাগান এলাকায় আর অন্যটি উপজেলা সদরে ।
১৯৯৬ সালে ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমার বয়স তখন কত হতে পারে । প্রায় দুই যুগ আগের কথা। সেই সময়ে সংঘটিত ঘটনার স্মৃতি এখনও আমার সাথে পুরোপুরি বেঈমানি করেনি । সেই ঘটনার ছবি আমার চোখে এখনো জ্বলজ্বল করে। আজও স্পষ্ট মনে পড়ে সেই সময়কার কথা।
আমি আর আমার বড়ভাই সদরে দাদুর বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করতাম । তখনো চুক্তি হয়নি। সেই সময়ে শান্তি বাহিনী আর সেনাবাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতসহ পাহাড়ি বাঙালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনার কারণে তখন একবার আমার বড়ভাইসহ উপজেলা সদরে আসতাম স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর একবার রাবার বাগান এলাকায় ভয়ে পালিয়ে যেতাম । এভাবেই চলছিল আমার এবং আমার মতো অন্য সমসাময়িক ভাই বোনদের শৈশব ও ছাত্র জীবন। আমার [ফেইসবুক-এ] বন্ধু তালিকায় থাকা তারাও নিশ্চয়ই এই লেখা পড়ার পর স্মৃতিচারণ করবেন বলে আমার ধারণা ।
তাই এখনও মাঝে মাঝে ভাবি এটা কোন দেশে জন্মেছি, যে দেশে আমাকে ও আমাদের পাহাড়ি আদিবাসী জুম্ম নতুন প্রজন্মকে পালিয়ে বাচঁতে হয় ! পালিয়ে বাচাঁ যে কী যন্ত্রণার! আর পালিয়ে কী বাচাঁ যায়? বাচাঁ যায় হয়তো কিন্তু সেটা বাচাঁ বা বেচেঁ থাকা বলে না নিশ্চয়ই! আজ স্মৃতিতে না বলা অনেক কথা এখনও রয়ে গেছে । কোনও একদিন ঐসব কথা হবে । দুঃখিত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছি।
২
কল্পনা চাকমার বাড়ি নিউ লাল্যাঘনা গ্রামে । সদর থেকে সোজা হিসেব করলে হবে বড়োজোর ২/৩ কিলো। আর রাবার বাগান থেকে আরও কাছে । তাকে অপহরণের পর সেনাবাহিনী বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়েছিল । হেলিকপ্টার থেকে কল্পনা চাকমার ছবি সম্বলিত লিফলেট রাবার বাগান এলাকা, কজইছরি এলাকা, উগলছরি এলাকা আর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছিল । আমরা কয়েকজন পাড়ার ভাই ব্রাদার মিলে দৌড়ে ধরেছিলাম সেই কাগজগুলো । আমরা প্রথম প্রথম জানতাম না যে সেগুলো কি ! যখন কয়েকটা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম তখন পড়ে দেখি সেই লিফলেট এ লেখা ছিল: “কল্পনা চাকমার খোঁজ দিন,পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার নিন”। উল্লেখ্য যে, ঐ লিফলেটে কল্পনা চাকমার ছবিও ছিল ফোটা ফোটা অস্পষ্টভাবে ছাপানো অবস্থায়। জানিনা কী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এত তেল ও পয়সা খরচ করে হেলিকপ্টার যোগে বন জঙ্গলে ঐ লিফলেট ছড়িয়ে দিয়েছিলো সেনাবাহিনী ! সেই সময়ে হেলিকপ্টার উড়ানো এত সহজ সাধ্য ছিল না বা তা নিশ্চয়ই ব্যয়বহুল ছিল। এখন ভাবি আসলেই সত্যি সত্যি কল্পনা দিদি ছিলেন ন্যায় বিপ্লবের অকুতোভয় সৈনিক যার জন্য সেনাবাহিনী অনেক ভীত সন্ত্রশ্ত ও উদ্বিগ্ন ছিল । তা নাহলে একজন নিরীহ ও ন্যায় বিপ্লবে জড়িত পিছিয়ে থাকা নারীকে কেনই বা কাপুরুষের মতো সেনাবাহিনী রাতের অন্ধকারে অপহরণ করেছিল! কল্পনা দিদিকে মোকাবেলা করার জন্য সেনাবাহিনীর সেই সৎ সাহস ও সৎ জ্ঞান, দক্ষতা ও সার্মথ্য ছিল না। এবং এখনও সেই সততা, জ্ঞান, দক্ষতা, বিবেক ও ন্যায়কে মোকাবেলা করার সৎ সাহস ও সামর্থ্য তাদের আছে বলে মনে হয় না। তাদের সেই ল্যাকিংস বা ঘাটতি পূরণ হোক বা দেশের শিক্ষিত, সুপ্রশিক্ষিত এলিট বাহিনী হিসেবে তা থাকুক ও শুভ বুদ্ধির উদয় হোক মনে প্রাণে কামনা করি। আর যারা সেই সময়ে ঐ লিফলেট পেয়েছিল ঐ ঘটনা তাদেরও আজীবন মনে থাকবে আমার বিশ্বাস।
সেদিন একটুর জন্য কল্পনা দিদির দুই বড়ভাই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ গিয়েছিলেন। গুলিবিদ্ধ হলে তারা সেখানেই মারা পড়তো। কীভাবে যে সেদিন পালিয়ে বেচেঁ ছিলেন একমাত্র তারাই ভাল বলতে পারবেন। একেবারে কাছে থেকে আপন বোনকে বাঁচাতে না পারাটা যে কী পরিমাণ কষ্টের, আজীবন দুভাইয়ের সে কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে আর ভোগাবে। স্বয়ং ভুক্তভোগী ছাড়া কেউই উপলব্ধি করতে পারবে না। যখন তিন ভাই বোন বিপদ আঁচ করতে পেরেছিল তখন কল্পনা দিদির মুখ দিয়ে বের হয়েছিল: “দাদা দাদা মরে নেজঅ/বাজঅ” । অর্থাৎ বড় দাদা, ভাইয়েরা আমাকে নিয়ে যাও/বাঁচাও । জানিনা কি করুণ, হৃদয় বিদারক সেই মুহূর্ত ছিল তখন। একদল সেনাবাহিনীর উর্দি পরা জানোয়ারেরা কি নির্মমভাবে না অপহরণ করেছিল !!
আজও সেই নির্মম ঘটনার কালের সাক্ষী হয়ে বেচেঁ আছে কল্পনা চাকমার ভাইয়েরা! হয়তো বিচারহীনতার এই দেশে কখনও প্রশাসন না দিবে ফিরিয়ে অপহৃত বোনকে, না দিবে ন্যায় বিচার! অন্যদিকে অপহরণকারী অপরাধীরা তাদের কৃতকর্মের শাস্তির বদলে পাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান। হয়তো ইতোমধ্যে পেয়েছেও প্রমোশন।
আবারও দুঃখিত। খেই হারিয়ে ফেলেছি।
৩
কল্পনা চাকমার অপহরণের পরবর্তীকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইম্যানস ফেডারেশনসহ (যতটুকু মনে আছে ) কল্পনা চাকমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে ৭২ ঘন্টার হরতাল ডাক দেয়। শ্লোগান ছিল: “দোকান পাট খুলবে না। গাড়ির চাকা ঘুরবে না।” হরতালের ঘোষণা মোতাবেক ঐদিন (সম্ভবত যেদিন রূপন, সুকেশ, সমর ও মনোতোষ দা শহীদ হয়। তারিখ মনে নেই। তাই যদি ভুল হয়ে থাকে কারও জানা থাকলে আমার বন্ধু তালিকায় থাকা বড় ভাই-বোনরা সংশোধন করে দিলে ধন্য হবো। ) সকালবেলায় পিসিপি/হিল উইম্যান ফেডারেশনসহ সম্ভবত ১০-১৫ জন (নারী/পুরুষ মিলে) নেতা কর্মী বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের দোকান পাট বন্ধ আছে কিনা এবং গাড়িঘোড়া চলছে কিনা প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য (তখনও পযর্ন্ত বেশিরভাগ নেতাকর্মী জড়ো হয়নি। কথা ও সিদ্ধান্ত মতে সম্ভবত মিছিল ও সমাবেশ করার জন্য বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন সবে আসা শুরু করেছেন) যান। তারা ছিলেন নিরস্ত্র। সঙ্গে কিছুই নেননি।
হরতালের ডাক দিলেও নেতাকর্মীদের মনে সম্ভবত ঐ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটবে বা ঘটাবে ঐ ধরনের ইচ্ছে বা আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু ঠিকই সেটেলার বহিরাগত বাঙালিরা ঘটনা ঘটানোর জন্য প্রশাসনের ইন্ধনে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। যেই না পিসিপির নেতাকর্মীরা দুই তিন দলে ভাগ হয়ে অবস্থা দেখতে গেল তখন ঐ চৌমহনী মার্কেট ও উপজেলা মসজিদের সামনে থেকে সেটেলার বাঙালিরা লুঙ্গি গুচ দিয়ে দা লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করেছিল (যদিও বতর্মানে তাদেরকে সেটেলার বললে রাগ ওঠে এবং ক্ষুব্ধ হয়)।
এই কথাগুলো শুনেছিলাম স্বয়ং পিসিপি/হিল উইম্যান ফেডারেশন এর এক (কর্মী) দিদির মুখ থেকে। সেদিন তিনি পালিয়ে এসেছিলেন উপজেলা সদর থেকে। তিনিও ঐ পর্যবেক্ষণে যাওয়া একটা টিমের সাথে ছিলেন। চোখ মুখ লাল ও উত্তেজনায় কাপঁতে কাপতেঁ বলছিলেন কী হয়েছিল উপজেলা বাজারে। হাতে ছিল ভেজা কাদাঁয় মাখা স্যান্ডেল। মুখ ছিল ব্লেডের মতোন। চালু। চাকমা কথায় ইজু জেনজেনাত্তে। তিনি বলছিলেন, ” পালিয়ে না এলে আজ সেটেলাররা মেরে ফেলতো। ভেজা কাদাঁ মাখা জমির ওপর দিয়ে যে যেভাবে পারে দৌড় দিয়েছে। সহকর্মীরা কে কোন দিকে গেল বুঝতেছিনা। খালি হাতে গিয়েছি।”
পালিয়ে পালিয়ে বাচঁতে গিয়ে সেই কর্মী দিদির চেহারাটা আজ আর স্মরণ করতে পারিনা। কিন্তু তাকেঁ ভুলিনি। ভুলিনি তার স্পিরিট। ভুলিনি তার সাহস ও উদ্যম দেখে। এরাই আমাদের সেই কালের সংগ্রামী ও বিপ্লবী দিদিরা। যাদের প্রতি আমার অগাধ ও অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা ভক্তি বাড়ে বৈ কমেনা। আজও খুজিঁ সেই দিনকার দিদিকে। জানিনা তিনি কোথায় আছেন। কেমন আছেন। আদৌ কী বেচেঁ আছেন কিনা! দিদির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। যেখানেই থাকুক দীর্ঘায়ু ও সুখী হোক এই প্রার্থনা করি।
সেই দিদির মতোন যারা জাতির জন্য শুধু জীবন যৌবন নয় সেই সাথে অর্জিত শিক্ষা ও সার্টিফিকেট উৎসর্গ করেছেন বা সব ঢেলে দিয়েছেন এবং জীবন বাজি রেখেছেন তাদের সবার প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা ও অনেক অনেক ভালবাসা। কিন্তু আজকাল নতুন প্রজন্ম সেই তাদের কতটুকু স্মরণ করে বা কতটুকু শ্রদ্ধা করে ও সম্মানের সহিত কথা বলে? মুহূর্তেই তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড়ঁ করায় (?) রাজনীতি শেখাতে চায়! জ্ঞান দিতে চায়! বড়ই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক কোনো সন্দেহ নেই। একবারও চিন্তা করেননা যে তারা যে আজকে যে পর্যায়ে আজ এসেছে আর বড় বড় কথা আওড়াচ্ছে তা কাদের বিপ্লবের ফসল?
৪
যাইহোক, সেই দিন সকালবেলায় সেটেলার কর্তৃক পিসিপি নেতাকর্মীদের ঐ ধাওয়ার ঘটনা থেকে পাহাড়ি আদিবাসী জুম্ম বনাম বহিরাগত সেটেলার বাঙালি ও পরোক্ষভাবে প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয় । ন্যায় বনাম অন্যায়। কারণ ততক্ষণে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে জড়ো হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষে ভরপুর জীবঙ্গাছড়া বাবুপাড়া গ্রাম। পাশ্ববর্তী তালুকদার পাড়া, জীবতলী, মধ্যম বাঘাইছড়ি, তলে বাঘাইছড়ি, উগলছড়ি, বটতলী,শিজকসহ পূর্ব দক্ষিণের বড় বড় গ্রাম আর পশ্চিমে কজইছড়ি, বড় কজইছড়ি আর উত্তর দিকে তুলাবান, ঝগড়াবিল, কাট্টলী, রূপকারীসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে অগণিত মানুষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন ব্যাটলফিল্ড হয়ে উঠেছিল জীবঙ্গাছড়া বাবুপাড়া গ্রাম।
সেদিন সেটেলারদের সাথে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছিল। দাঙ্গা পুলিশ নেমেছিল নামমাত্র। ভেতরে ভেতরে আতাঁত সেটেলারদের সাথে। আর ইন্ধন তো রয়েছেই। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে (কেউ যদি ভবিষ্যতে বাবুপাড়ায় যান বা গিয়ে থাকেন তাহলে পাড়ায় প্রবেশের সময় খেয়াল করবেন সেটেলার বাঙালি (হাজী) পাড়ার পাশে এবং বাবু পাড়ার গ্রামের প্রবেশ দ্বারে একটা কালভার্ট দেখতে পাবেন এবং একটু পর বাম পাশে বাগান ও উলু বা চালতা গাছ দেখবেন )আজু চনক্যে বাপ-এর বাগানে এক সেটেলার বাঙালি ধাওয়া করতে এসে পাহাড়িরা পাল্টা ধাওয়া দিলে পালাতে পারেনি। আটকা পড়ে। তখনও পর্যন্ত পাহাড়ি ভাইয়েরা ঐ মানবিক জ্ঞান বা হুশ হারায়নি। তাদের বিবেক ও মানবতা পরাজিত হয় নি। পাহাড়ি নেতা ও মুরুব্বিদের পরামর্শে সেই আটকে পড়া সেটেলারকে এই বার্তা দিয়ে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল যে, সেটেলারদের সাথে পাহাড়িদের মারামারি কাটাকাটি করার কোনো ধরনের ইচ্ছে নেই। তাদের সাথে পাহাড়িদের কোনো দ্বন্দ্ব বা শত্রূতা নেই (সেই সময়কার উপস্থিত পাহাড়ি নেতারা আরও ভাল বলতে পারবেন)। যা দ্বন্দ্ব বা দাবি রাষ্ট্রের কাছে। জানিনা সেই সেটেলার বাঙালিটা প্রাণ ফিরে পেয়েও তাদের নেতা ও মুরুব্বদের সেই বার্তা আদৌ দিয়েছিলো কিনা? কিংবা বললেও তা ঐ সেটেলার বাঙালি নেতা-মুরুব্বিরা আদৌ সেই বার্তা কানে তুলেছিল কিনা কিন্তু তাদের আচরণে বুঝা গিয়েছিল যে, হয় ঐ আটকে পড়া সেটেলারটি বার্তা দেয়নি বা বললেও সেটেলার নেতারা তার কথা কানে তোলেনি।
ঠিক ঐ একই সময়ে তুলাবান হয়ে মুসলিম ব্লক-এর রাস্তা দিয়ে ( কাচালং কলেজের পাশঘেষা রাস্তা। যে রাস্তা দিয়ে উপজেলা সদর ও তুলাবান আসা যাওয়া করতে হয়। সেটেলার অধ্যুষিত এলাকা) মিছিল সমাবেশে যোগ দিতে আসা (এদিকে কী ঘটছে বা ঘটেছে তারা জানতো না। আজকের মতো মোবাইলের যুগ হলেও হয়তো বেচেঁ যেতো তারা ) তিন বিপ্লবী যুবক ও জুম্ম ভাই সুকেশ, সমর ও মনতোষ দাকে মুসলিম ব্লক পাড়ার একেবারেই রাস্তার মাঝখানে সেটেলার বাঙালিরা রিকশা আটকে ধরতে চেয়ে ধরতে না পেরে ধাওয়া করে (নিরীহ ও নিরস্ত্র অবস্থায় তারা তিনজনে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে চেয়েছিল), নির্মমভাবে হত্যা ও গুম করেছিল। কিছু পাহাড়ি পরিবার দূর থেকে আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। পরে তারাই হত্যাকান্ডের বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছিল। ওরাই ছিল কল্পনা অপহরণের প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিতে আসা শহীদ সুকেশ, সমর আর মনতোষ দা। এখানেই বিচার করতে পারেন কারা মানবিক আর কারা জানোয়ার আর অমানবিক! ঘটনা ওখানেই থেমে ছিল না ।
৫
এখন বলবো শহীদ রূপন চাকমার কথা। শহীদ রূপনদাকে আবারও বিনম্র চিত্তে ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জীবঙ্গাছড়া বাবুপাড়াবাসী শহীদ রূপনদার নিকট ঋণী। কেন ঋণী? বলছি।
শহীদ রূপনদা আমাদের জীবঙ্গাছড়া বাবু পাড়াতেই এসেছিলেন। সম্ভবত ঐ ভেতরে ভেতরে তুলাবান জীবতলী হয়ে। উল্লেখ্য যে আমাদের গ্রামের সাথেই সংলগ্ন বিজিবি (তৎকালে বিডিআর ) ক্যাম্প। সেটেলারদের টার্গেট ছিল আমাদের গ্রাম লুটপাট ও জ্বালিয়ে দেওয়া। তাই নেতৃবৃন্দ যথেষ্ট সজাগ ও সচেতন ছিলেন। যেভাবেই হোক গ্রাম রক্ষা করতে হবে। তাই অন্য গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষ এসেছিল গ্রাম রক্ষার্থে ও মিছিল সমাবেশ সফল করতে। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে যখন ইন্ধন পেয়ে সেটেলাররা আমাদের পাড়ায় অনুপ্রবেশ করতে চাইলো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলো। তখন অন্যায়কারী ও অপরাধী ভীরু বহিরাগত সেটেলাররা একের পর এক ধাওয়া ও মার খেতে থাকে তখন দাঙ্গা পুলিশ ও বিজিবিদের হিয়ে পোড়ে (গা জ্বলতে থাকে ) উদে।
দাঙ্গা পুলিশ দেখছিল তাদের পোষ্যপুত্র সেটেলাররা মার ও ধাওয়া খাচ্ছে। দম নেওয়ার সময় পাচ্ছে না। তবে পাহাড়িদের ঐ যুদ্ধ ছিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং চাপানো । পাড়া রক্ষা করার। ধাওয়া ও মার দিতে এসে যেন ধাওয়া ও মার খাচ্ছিল সেটেলাররা। পাহাড়িদের তরফ থেকে দাঙ্গা পুলিশদের বার বার অনুরোধ করা হচ্ছিলো যেন সেটেলারদের নিবৃত্ত করা হয়। কিন্তু গোপনে ইন্ধন দাতারা তখন সেটেলারদের নিবৃত্ত না করে শুধু স্বেচ্ছায় তাদের হাতে থাকা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল সেটলারদের হাতে তুলে দেওয়া বাকি ছিল । ইনিয়ে বিনিয়ে যখন দাঙ্গা পুলিশ সেটলারদের ঝাঁকের ভিতরে ঢুকল তখন একটু অভিনয় করে আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেটলাররা দাঙ্গা পুলিশ থেকে একটা বন্দুক কেড়ে নিল আর এবার ঐক্যবদ্ধ পাহাড়িদের ঝাঁক বরাবর তাক করে গুলি ছোড়া শুরু করল। এতে পাহাড়িরা জীবন রক্ষার্থে পিছু হটতে বাধ্য হল।
গল্প মনে হচ্ছে? না। নতুন প্রজন্মের ভাই বোনেরা এটা গল্প নয়। চরম করুণ ও কঠিন বাস্তবতা। যারা জানেন না কল্পনা চাকমা অপহরণ পরবর্তীকালে কী হয়েছিল তা আমার স্মৃতিতে যা যতটুকু রয়েছে জানানোর জন্য এই স্মৃতিচারণ।
তাদের হাতে তখন কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। ছিল শুধু কান্তা বা গুলতি এবং ট্র্যাডিশাল বাদোল। আর দা ও লাঠিসোটা। এভাবে সেটলার বাঙালিরা গুলি করতে করতে আমাদের গ্রামের এক অংশে প্রবেশ করল। কিন্তু আর এগুতে পারল না তারা। ঠিক তা না। প্রতিরোধক হয়ে দাড়ালেন শহীদ রূপন দা। তার হাতে থাকা কান্তাটা গুলতি ছুড়তে ছুড়তে ছিড়ে গিয়েছিল। তাই আর গুলতি চালাতে পারেননি। যেসময় অন্য পাহাড়ি ভাইয়েরা অধিকাংশ প্রাণ বাচাঁতে পিছু হটছে এবং সেটলাররা যখন বন্দুক উচিয়ে একের পর এক ঝাকঁ দেখে দেখে তাক করে গুলি ছুড়ছে এবং পাহাড়িরা গ্রাম রক্ষা করার কথা বাদ দিয়ে বরং প্রাণরক্ষা ফরজ হয়ে দাড়িয়েছে, ঠিক সেই সময় ঐ বন্দুকধারী সেটলার জানোয়ারটার দৃষ্টি ডাইভার্ট করে দিয়ে দুই উচু জায়গার মাঝখানে জমির ওপর দাঁড়িয়ে থেকে বলিষ্ট কন্ঠে চিৎকার করে বুক উচিয়ে একাই প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন,
“সেদাম থেলে মরে মার”(হিম্মত থাকলে আমাকে গুলি করো)।
না, দুএকটা গুলি করেও টার্গেট করতে পারেনি ঐ হায়েনাটা। আরেকজন সেটলার হায়েনা যাকে ট্রেনিং প্রাপ্ত কোন আনসার /ভিডিপি সদস্য মনে হয়েছিল সে বন্দুকটা আগেরজন থেকে কেড়ে নিয়ে গুলি চালালে শহীদ রূপনদা পেছন দিকে ছিটকে না পরে বীরবেশে সামনে ঢলে পড়েন। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে শাহাদাত বরন করেছিলেন। শহীদ রূপনদা স্বর্গবাসী হোক এই কামনা করছি।
ঠিক ঐ একই সময়ে কখন যে গ্রামের সাথেই লাগোয়া সেন্ট্রি পোস্ট থেকে বিজিবিরা ফায়ার করেছিল শুরুতে ঐক্যবদ্ধ পাহাড়িরা যুদ্ধের ময়দানে বুঝতেই পারেননি। পরে বুঝতে পেরেছিল। পাশের বাড়ির বেড়া ও এলুমেনিয়ামের জগ ও শিমুল গাছে যখন গুলি লেগে ফুটো ফুটো হয়ে গিয়েছিল। ঐ গুলিবিদ্ধ শিমুল গাছটা কেটে না দিলে এখনও আছে নিশ্চয়ই। ঐ গুলি চালিয়েছিল মূলত এমন সময় ও মূহুর্তে যখন সেটেলার বাঙালিরা গুলি করতে করতে এগুচ্ছিলো।
শহীদ রূপনদা গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে কী ভেবে যেন (হয়তো দাঙ্গা পুলিশের ইঙ্গিত ছিল) সেটেলার বাঙালিরা আমাদের গ্রামে প্রবেশ না করে কিছুটা পিছ হটে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার ফায়ার করে এগিয়ে এসে শহীদ রূপনদার মৃত বডিটাকে কেটে কুটে অত্যন্ত নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে টেনে হিচড়ে নিয়ে চলে যায় এবং গুম করে ফেলে। পাহাড়িদের তখন অসহায় ও দুচোখে অশ্রু নিয়ে দূর থেকে প্রত্যক্ষ করা ছাড়া যেন কিছুই করার ছিলোনা। সেদিনই শহীদ রূপনদা যেন তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের গ্রামকে রক্ষা করেছিলেন। সেই দিনের পর আমাদের গ্রামের কেউ কোনো দিন মন থেকে তাকেঁ স্মরণ করেছে কিনা জানিনা।
৬
সেদিন সেটলাররা গায়েব করে ফেলে সাক্ষ্য প্রমাণ। কিন্তু শহীদ রূপনদার বডি গায়েব করলেও হাজার জনের চোখ কী বন্ধ ছিল ?
না।
রূপনদার শাহাদাত বরণ দেখে তৎকালীন ছাত্র নেতা ধরনী দা আমার দূর সম্পর্কের তলে বাঘাইছড়ির জ্যাঠাবাবু ফাঢুজ্যাদের (আসল নাম জানিনা তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ) বাড়ির উঠানে ঠাডে পজ্জেদে/জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং বমি করেছিলেন। কলসি দিয়ে তার মাথায় পানি ঢালা হয়েছিল আমার সামনে। উনার জ্ঞান ফেরার পর ঘটনার অনেক বর্ণনা শুনেছি তার মুখে। ঘটনা বিষয়ে শুনেছিলাম প্রত্যক্ষদর্শী অনেক রণাঙ্গনের সৈনিকদের মুখে। ধরনীদার উনার হয়তো মনে নেই, আমি সেই সময় তার কথা মনযোগ শুনেছিলাম। এতদিনে তার মনে থাকবে না। আমার থেকে উনি বেশি ঘটনার আদ্যপান্ত বলতে পারবেন। উনিসহ তারা ছিলেন চাক্ষুষ সাক্ষী ও সেই দিনের রনাঙ্গনের সৈনিক।
এছাড়াও ঐদিন ছিল আমাদের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার প্রায় শেষ দিন। মাত্র বাকি ছিল ধর্ম পরীক্ষা। পরিস্থিতি সুবিধাজনক মনে না হওয়ায় আমাদের বাঘাইছড়ি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রদ্বেয় হেডস্যার তাড়াতাড়ি ছুটি দেন। তখন ছুটি পেয়ে সম্ভবত সাড়ে নয় কিংবা দশটা হবে। স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। যেইনা বৌদ্ধ বিহারের ( জীবঙ্গাছড়া বাবুপাড়া নবরত্ন বৌদ্ধ বিহার) কাছাকাছি মানে তালুকদার পাড়া বা জীবতলী যাওয়ার রাস্তায় বিহারের একটু পরে যেখানে হাতের কনুই-এর মতো হয়েছে ঠিক সেখানে পৌছেছি, আমার বাবা চিৎকার করে ডাক দিয়ে বলছে ফিরে যাও। পালিয়ে যাও। প্রথম কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকার পর একে একে গুলির আওয়াজ কানে আসাতেই বুঝতে পারি ঝামেলা শুরু হয়েছে। দৌড়াতে শুরু করলাম।
আমার সাথে আর কারা কারা ছিল এখন মনে নেই। উদ্দেশ্যহীন দৌড়েছিলাম। গুলির আওয়াজ বেশি হচ্ছে শুনে পলায়নরত মানুষজন রোডটা একটা উচু হওয়াতে (যদি কেউ কোনো দিন বাবুপাড়া হতে তালুকদার পাড়া যান বুঝতে পারবেন) গুলি লাগার ভয়ে ডান পাশে নেমে জমির ওপর দৌড়াতে লাগল। এক সময় জমির ওপর দৌড়াতে দৌড়াতে তলে বাঘাইছড়ি জ্যাঠাবাবু ফাঢুজ্যাদের উঠানে পৌঁছে যাই। ঐখানেই পনের বিশ মিনিটপর ছাত্রনেতা ধরণীদা, রাঙাহালা মু গরি ধাবা এ বাদোলসহ এসে ঠাডে পড়েন।
পরে তার জ্ঞান ফিরলে তার বর্ণিত মতে জেনেছিলাম যে সঙ্গে ক্যামেরা না থাকার কারণে শহীদ রূপনদার নিথর বডিটাকে সেটেলার বাঙালিদের কিরিচ ও দা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে কোপানোর দৃশ্য ছবি তুলে রাখতে পারেননি। পরিস্থিতি কিছু ঠান্ডা হলে ঘটনাস্থলে গিয়ে জমিতে সবুজ ঘাস ও হালকা পানিতে ছোপ ছোপ জমে থাকা কিছু রক্ত ঢলা আর ছোট খাট একটা রক্তাক্ত গাছের লাঠি সংগ্রহ করতে পেরেছিল তারা।
পরবর্তীকালে সম্ভবত প্রায় ৬-৯ মাস বন্ধ ছিল মারিশ্যা বাজার। কেউ যায়নি বাজারে। কিছুই বিক্রি করতে পারেননি বাঙালি ব্যবসায়ীরা। না খেয়ে মরার মতো অবস্থা হয়েছিল সেটেলারদের । চাল, তেল, লবণ ও মাছ শুটকি পোকায় ধরেছিল। পরে রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি কীভাবে যেন দ্রুত বদলে যেতে থাকে।
আর ঐ সমস্যার সমাধান কীভাবে হয়েছিল আমার মতো ছোট্ট মানুষ তা বুঝার তেমন সুযোগ বা জ্ঞান ছিলো না। পরে জেনেছি চুক্তি হয়েছে। শান্তি আসবে পাহাড়ে। এক সময় ১৯৯৭ সালে পরে শান্তিবাহিনী আত্মসর্মপণ করল । আত্মসর্মপণের চিত্র বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিলাম। এর পূর্বে শান্তিবাহিনী সারেন্ডার করবে বিটিভিতে ঘটা করে প্রচার করা হল। বতর্মান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হলেন। আর প্রায় দীর্ঘ সময় ধরে বিজ্ঞাপনে নাক চ্যাপ্টা এক সুন্দরী মহিলাকে এবং অন্যান্যদেরও দেখানো হলো আর সেই সাথেই গান একটা শোনানো হলো : ” শান্তি এসেছে /নেমেছে পাহাড়ে/ পাহাড়ি বাঙালি এক হয়েছে “।
আর বাকিটা সবার জানা। তবে এটা অজানা যে পাহাড়ি বাঙালি এক হয়েছে কিনা। আর এটাও প্রশ্নবিদ্ধ যে পাহাড়ি পাহাড়ি ভাইয়ে ভাইয়ে আদৌ এক হয়েছে কিনা ?
সুদিন ফিরে আসুক এই প্রত্যাশায় সবার মঙ্গল কামনায়।
দীর্ঘ লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Categories: আন্দোলন বার্তা, প্রান্তিক জাতি প্রশ্নে, যাপিত জীবন
Leave a Reply