১৩ জানুয়ারি, ২০২২

গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে জোর করে কাগজে স্বাক্ষরসহ নানা হয়রানি করার ঘটনায় ‘মায়ের ডাক’ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স কর্তৃক বাংলাদেশে গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ এবং তাঁদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের পর বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যরা সরকারের নির্দেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাড়িতে বার বার যেয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের রাতে থানায় ডেকে নেয়া হচ্ছে। এই সময় পুলিশ সদস্যরা গুমের শিকার ব্যক্তি ’নিখোঁজ হয়েছেন’ এবং পরিবার তথ্য গোপন করেছেন’ এই মর্মে কাগজে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন।
এরমধ্যে একটি পরিবারকে থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশ কতৃক প্রস্তুত একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্যও করা হয়েছে। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কর্তৃক গুমের শিকার হয়েছে এই মর্মে ভিক্টিম পরিবারগুলো থানায় সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করতে যেয়ে বাধার সম্মুঙ্খীন হয়েছিলেন এবং গুমের পরিবর্তে ’নিখোঁজ/ বাসা থেকে বের হয়ে ফেরত আসেনি’ এই শব্দগুলা পুলিশের চাপে লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আবার বিভিন্নভাবে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা নানা ধরনের সমস্য এবং মানসিক চাপ নিয়ে জীবন যাপন করছেন এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা ভীষনভাবে আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে রয়েছেন। তাই হঠাৎ করে এই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর নেবার প্রচ্ষ্টোসহ বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা এই পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং মানসিকভাবে তাঁদের আরও বিপর্যস্ত করেছে।
গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা বহুবার আবেদন করলেও গুমের পর তাঁদেরকে প্রিয়জনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।
আমরা গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা বহুবছর ধরে আমাদের প্রিয়জনদের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে আমরা বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছি। রাষ্ট্রীয়বাহিনী যে গুমের সঙ্গে জড়িত সেইসব অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন আমাদের অনেকে। এছাড়াও জুডিশিয়াল তদন্ত প্রতিবেদন থেকেও গুমের ঘটনার সঙ্গে রাষ্টীয়বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত গুমের বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে। এমনকি বলা হচ্ছে যে, গুমের শিকার ব্যক্তিরা নিজেরাই আত্মগোপন করে আছেন; যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। গুমের বিষয়ে পুলিশ বাহিনী দিয়ে ভিক্টিম পরিবাররের সদস্যদের জিঞ্জাসাবাদ এবং চাপ দিয়ে কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার ঘটনাকে মায়ের ডাক মনে করে সত্যকে চাপা দেয়ার একটি আমানবিক এবং ন্যাক্কারজনক প্রচেষ্টা।
উল্লেখ্য ২০০৯ সাল থেকে দেশে গুম হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে শুরু হয় এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধী দলকে দমনের উদ্দেশ্যে অনেক গুমের ঘটনা ঘটে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা এর শিকার হন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
মায়ের ডাক সরকারকে এই ধরনের অন্যায় ও আমানবিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছেন এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাঁদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
আফরোজা ইসলাম আঁখি
সংগঠক মায়ের ডাক (গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন)
Categories: আন্দোলন বার্তা
Leave a Reply