ঠোঁটকাটা কবিতা

kabitaসুস্মিতা চক্রবর্তী
রাজনীতি
 
পৃথিবীর পথ আজ-
হেঁটে চলে অনির্দেশ্য বেদনার তীরে।
অথচ সড়কে ফুল ছিল গাছে গাছে-
হিংসার কাঁটার আড়ালে।
 রাজপথে মানুষের যুথবদ্ধ হাত ছিল-
প্রেম ছিল লাল ছিল এই নভোতলে।
তবুও কোন্ ঘৃণার বারতা-
উৎসবের মতো বাজে,
পূব থেকে পশ্চিমের দিগন্ত দুয়ারে!
তুমি ঝর, সে-ও ঝরে,
দ্বেষের-খুনের শব-রাজনীতি
ক্রমাগত আজ খেলা করে।
মূর্তি ভাঙে মন ভাঙে-
এক-চোখা বিশ্বাসী আগুনে।
মাটি কাঁদে মা-ও কাঁদে-
মৃত শিশু শোক হয় জরায়ু জঠরে।
এ মায়ের ভালবাসা দেশ-কালে
জেগে থাকে লাশ হয়ে শিশুর-কবরে।
রাবি-ক্যাম্পাস: ৭ মার্চ, ২০১৩।

ফেরদৌস নাহার

চরকা 

নাম ধাম ভুলে গেলে খুব কি ভালো হয়?
আমি যেখানেই যাই না কেন
আমার আগে যায় আমার পরিচয়।

মধ্যাহ্নে চরকা কাটে তিনটি উন্মাদ
একজন আমার স্বামী,দু’জন তাহার সৎ ভাই
কিছু একটা ঢাকতে বুনন করছে তারা বস্ত্র
রাখ-ঢাক,ঢাক গুড়-গুড় স্বভাবে অভিষিক্ত

চরকা চলছে,আমি গান গাই
যে গান কিছুটা চেনা,তার সুর গরম জলে ধুয়ে
গলায় বসিয়ে বসিয়ে চরকার তালে গেয়ে যাই,

…“নিতুই পাহাড় ভেঙ্গে তোমারে ডাকিছে কে যে
যে বিদেশী বন্ধু আমার চলে গেছে দূরদেশে
তাহারে খবর দাও,ভুলভ্রান্তি ক্ষেমা দাও
ও-বন্ধু আইসো ফিরে,ঘুঘুপাখি ডাকিছে তোমারে”…

গান শেষে দম নিয়ে আবারো শুরু করি একই গান
হলদে বাতাসে ঘোরে ফড়িঙের চলন্ত পাখা,ধুলোমাখা
হলো না তা, ভাগ্য মন্দ হলে হয় যা-হলো তা
ঢু ঢু আঁকাবাঁকা।

নারীবাদীদের জন্য গল্পগাছা                              

আমরা অজান্তেই ভালোবাসি নদীর ছবি,তা বলে নদীও কী আমাদের? চব্বিশ বছর বনবাসের পর বাংলার সব নদী যে দিন ঘরে ফিরে এল নারীরা সেদিন কেন শাঁখ বাজাল না? ওই দেখ নদী ভেসে যায়,ফিরে যায় অভিমানী জল ডুবডুবি। নাম না জানা এক কৃষকের চোখ থেকে গড়িয়েছে দৃশ্যঘোরের বেদনা। দূর কোনো আদেশের অপেক্ষায় নারীদের জটলা বাড়ে মুক্ত শাখার ছায়া তলে। বাংলাদেশের ঘাস সংসারের সবুজ নিয়ে চেয়ে দেখে-লাবণ্যবতীরা আজ বিভা ছড়ায় আকাশে বাতাসে।

নদীরে বিদায় দিয়ে নদীর মতো নারী গান গায় চলে যেতে যেতে। কে তারে রুখতে পারে সিন্ধুর বান আজ তার দুই পায়ে। দেখো-সন্তানের কোমল মুখ,চুলোর আগুন আর সাজানো দুয়ার কিছুই পারছে না ফেরাতে তারে। মেঘলা জীবন থেকে ঝরে পড়ে উদাস্যের উদাস সেই ঈশপের গল্পগুলো। মেলার মাঝখানে বিক্রি হচ্ছে নারীবাদীদের জন্য অসংখ্য গল্পগাছা, বিক্রি হচ্ছে রক্ত আলতা আর আগুনের চুল। তোমাকে ফেলবে এক কঠিন পরীক্ষায়-বাতাসের চার হাত এবং বর্ষার ভরা নদীর অতৃপ্ত নিঃশ্বাস!

মুনা হক

কােজর মেেয়

সারাটা সময়ে ঝিকমিকিয়ে হাসি
এই কি মেয়ের স্বভাব,
নাকি বোধ বুদ্ধির অভাব!
কি জানি
ব্যস্ত আমি সময় কোথায় জানার।
অফিস যাচ্ছি, কলম পিষছি
সেমিনার করছি, স্যান্ডউইচ খাচ্ছি
মাঝে মাঝে
আর্ট গ্যালারী অথবা নতুন কোনো প্লাজা।
“বাড়িতে ফিরতে দেরি কেনো?”
প্রশ্ন শুনে অবাক হই
সাহস না অধিকার-
কি জানি,
কাজের মেয়ের স্বভাব কেমন
সময় কোথায় ভাবার।
হঠাৎ একদিন
গোছানো আমার ঘর ছেড়ে
নিত্যদিনের ধুলো ঝেড়ে
মেয়েটি চলে গেলো
কাজের মেয়ে,
যেতেই পারে, বিশ্বাস কি
চুরি টুরি করেনি এই ঢের,
ভাত ছেটালে কাকের অভাব
কাজের মেয়ের যা স্বভাব।
আজ যখন বাড়ি ফিরছি
আমার জন্য কেউ অপেক্ষায় নেই
আমার পড়ার টেবিল
শোবার বিছানা
ঘরের আলমিরা
সব গোছানো, শুধুই
ধুলোর আস্তরণ
কি জানি হয়তো
ঝাড়লেই চলে যাবে স্মৃতি
কাজের মেয়ের জন্য ভালবাসা
এ নয় মধ্যবিত্তের রীতি ।।



Categories: সংস্কৃতি-রাজনীতি

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

%d bloggers like this: