অচেনা বায়নাগুলো
হাজেরা বেগম ও সায়দিয়া গুলরুখ
সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আমরা দুজন (হাজেরা বেগম ও সায়দিয়া গুলরুখ) বন্ধু, সহযোদ্ধা। মাঝে ঝগড়া করে কথা বলি নাই বছর দুয়েক। তারপর আবার বন্ধুত্ব, ছোটখাটো মনোমালিন্য। ”শিশুদের জন্য আমরা”- একটি শিশু নিবাস কেন্দ্রের বসার ঘরে জীবন-মৃত্যু-যৌনতা-বিয়ে-মাতৃত্ব নিয়ে তর্ক করে আমরা বহু দুপুর সন্ধ্যা পার করেছি। আমাদের এই সব কথোপকত্থন আমরা গল্প আকারে লেখার স্বপ্ন দেখি, কিন্ত আজকাল আমাদের দেখা হলে বাচ্চাদের স্কুলের বেতনের হিসেব করেই সময় কেটে যায়।
হাজেরা: আপনি এত মরার কথা বলেন কেন? আমি কমপক্ষে আরও ৫০ বছর বাঁচতে চাই। আপনার মতন ডরপোক দুনিয়াতে কম আছে।
সায়দিয়া: ওরে, বাপরে! আরও ৫০ বছর! এতদিন বেঁচে, থুরথুরি বুড়ি হয়ে কি করবেন?
হাজেরা: আমার এখন ২৭টা বাচ্চা। আমি ১০০টা বাচ্চার মুখ থেকে মা ডাক শুনতে চাই। এরা সবাই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আর্মি হবে, দেশের সেবা করবে।
সায়দিয়া: আর যদি দেশের সেবা না করে। আজকাল স্কুল কলেজে ওসব আর শেখায় না। ঐ জমানা শেষ। সবাইকে লেজ গুটিয়ে ইংরেজী পড়া, আর গা-বাঁচিয়ে চলতে শেখায়। তখন কি করবেন?
হাজেরা: আমি শিখাই আমার বাচ্চাদের। আপনি শিখান। আচ্ছা ঠিক আছে, দেশ সেবার খ্যাতা পুরি। ওরা বড় হয়ে ”শিশুদের জন্য আমরা” চালালেই হবে। ওদের পরিবারের দায়িত্ব নিবে। হিসেব করেন, ২৭ জন বড় হয়ে, আচ্ছা ঠিক আছে, ৭টা বাদ দেন, বিশ্বাসঘাতকতো থাকবেই দুই-চাইরটা…হা.হা..২০জন যদি আরও ২০জনের দায়িত্ব নেয়, তাহলে কতজন হবে, হিসেব করেনতো।
সায়দিয়া: আজকে না। এরপরে যেদিন বাচ্চাদের সাথে ঝগড়া করে কান্নাকাটি করবেন, তখন এই হিসেব করতে বসব।
হাজেরা: আপনিও এই কথা বললেন! বাচ্চাগুলো যখন জ্বালায়রে ভাই। তখন মাথা ঠিক রাখা দায়। না বলে গায়েব। গাবতলী গেছে, সেখান থেকে বাসে করে দিল্লী যাবে। দিল্লীর কোন এক বাড়িতে ওর মা কাজ করে। কত বছর খোঁজ নাই। আমি যদি পারতাম। পাসপোর্ট করে দিল্লী নিয়ে যেতাম আমার মেয়েটাকে, মায়ের সাথে দেখা করিয়ে আনতাম। বাচ্চা মানুষ। আমার ছেলে-মেয়েগুলোর সব বায়না মেটাতে আমার আরও ১০০ বছর বাঁচতে হবে। বুঝলেন। আর আপনাকেও বাঁচতে হবে। এত মরার গল্প বাদ দেন। যত্তসব বড়লোকি খাজুইরা আলাপ।
হাজেরা বেগম একজন সমাজ কর্মী এবং কবি, তাঁর প্রথম কবিতার বই আগামী বইমেলায় প্রকাশিত হবে; সায়দিয়া গুলরুখ একজন গবেষক, ব্লগার।
Categories: কথোপকথন, যাপিত জীবন
Leave a Reply